কাজকর্মে প্রতিকূলতা কেটে ক্রমোন্নতি। সন্তানের আচরণে ও মতিগতি নিয়ে চিন্তা। অর্থাগম হবে। ... বিশদ
আগরতলা থেকে ফিরছিলাম। এনজেপি ছাড়ার পর শৌচালয়ে যাব বলে সিট ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়েছি। হঠাৎ পরপর তিনবার প্রবল ঝাঁকুনি। আমার পা মুচকে যায়। আপার বার্থের লোহার রেলিংয়ে ঠোকা লেগে মাথাও ফেটে যায়। রক্ত বেরচ্ছিল। সে অবস্থাতেই ট্রেন থেকে নেমে যা দেখলাম তাতে শরীর শিউরে উঠল। পাশের কামরাটা দেশলাই বাক্সের মতো ট্র্যাকের ধারে পড়ে। ভিতর থেকে আর্তনাদ। উদ্ধারকারী দল তখনও আসেনি। স্থানীয় কয়েকজন রক্তাক্ত কয়েকটি দেহ বের করলেন। কয়েকজনের শরীর কামরার ভিতর আটকে রয়েছে। আর্তনাদ আর কান্নার শুনতে পাচ্ছি। ‘বি-২’ কামরায় ছিলাম আমি। হঠাৎ দেখি, একটি কামরার দরজার কাছে আটকে দুই শিশু। আমার মাথা থেকে তখনও অঝোরে রক্ত ঝড়ছে। তবুও কয়েকজনের সঙ্গে শিশুদু’টিকে বের করি। তারপর অনেক খুঁজলাম কিন্তু ওদের বাবা-মাকে খুঁজে পাইনি।
মোবাইলের নেটওয়ার্কের সমস্যা হচ্ছিল। অনেকক্ষণ চেষ্টার পর আমার মাকে ফোনে পেলাম। পুজোর আগে আমার বিয়ে। হবু স্ত্রী খুব চিন্তায় ছিলেন। মৃত্যুকে যেন অনেক কাছ থেকে দেখলাম। আগরতলার একটি হোটেলে কাজ করি আমি। বাড়ি দাঁতনে। রাতে শিয়ালদহে পা রেখে যেন প্রাণ এল। পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম আমাকে নিয়ে যান শিয়ালদহে স্টেশনে মেডিক্যাল টিমের কাছে। চিকিৎসা হয়। তারপর মন্ত্রীর ঠিক করে দেওয়া গাড়িতে হাওড়া স্টেশনে গিয়ে ট্রেন ধরে বাড়ি ফিরি।
সুদীপ সাহা (প্রত্যক্ষদর্শী রেলযাত্রী)
আমি ত্রিপুরার বাসিন্দা। ব্যবসার জন্য মাসে দু-তিনবার কলকাতা আসতে হয়। কেষ্টপুরে বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকি। দুর্ঘটনার পর ট্রেনে শিয়ালদহ পৌঁছই। তারপর সরকারি ব্যবস্থাপনায় কেষ্টপুরে ফিরেছি। রাজ্য সরকার ঠিকঠাক ব্যবস্থা করেছিল। সোমবার সকালে দুর্ঘটনার অভিজ্ঞতা ভোলার নয়। আমি এস-ফোরের যাত্রী ছিলাম। প্রথমে একটা হালকা ধাক্কা অনুভব করি। তারপর পরপর বড় ধরনের দু’টো ধাক্কা। বুঝতে পারলাম মূল ট্রেনের থেকে আমরা আলাদা হয়ে গিয়েছি। আমাদের কামরা লাইনচ্যুত হয়নি সেটা ভাগ্য ভালো বলে। এরপর বেশ কিছুক্ষণ বসে থেকে জিনিসপত্র নামিয়ে আমরা অনেকেই হেঁটে মেইন রোডে আসি। সেখান থেকে গাড়ি বদলে মালদহ পৌঁছই। ততক্ষণে খবর হয়েছে রেলের তরফে স্পেশাল ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। মালদহ থেকে সেই ট্রেনে মধ্যরাত নাগাদ শিয়ালদহে আসি। কপাল জোরে বেঁচে গিয়েছি। একটা চাপা আতঙ্ক এখনও কাজ করছে।