কৌশিক ঘোষ, চুঁচুড়া: চন্দনগরের জগদ্ধাত্রী পুজোর বিখ্যাত আলোকসজ্জার মূল আকর্ষণটা মণ্ডপ বা সংলগ্ন এলাকায় নয়, থাকে বিসর্জনের শোভাযাত্রায়। কিন্তু গত বছর করোনা বিধিনিষেধের জন্য চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী প্রতিমার বিসর্জনের শোভাযাত্রা হয়নি। এবারও বিসর্জনের শোভাযাত্রা হবে কি না, তা এখনও অনিশ্চিত। এই পরিস্থিতিতে জগদ্ধাত্রী পুজোর আলোকসজ্জার আকর্ষণ ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগী হয়েছেন উদ্যোক্তারা। চন্দননগর কেন্দ্রীয় জগদ্ধাত্রী পুজো উদযাপন কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এবার পুজো মণ্ডপ চত্বরে আলোকসজ্জার জন্য পুরস্কার দেওয়া হবে। ২০১৯ সাল পর্যন্ত ভাসানের শোভাযাত্রায় আলোকসজ্জার জন্য সেরা পাঁচটি পুজো কমিটিকে পুরস্কার দেওয়া হতো। এবার সম সংখ্যক পুরস্কার দেওয়া হবে পুজো মণ্ডপের সংলগ্ন এলাকার আলোকসজ্জার জন্য। কেন্দ্রীয় পুজো কমিটির শোভাযাত্রা ও বিসর্জন সংক্রান্ত সাব কমিটির প্রধান মানব দাস জানিয়েছেন, এর ফলে দর্শনার্থীরা এবার ফের আকর্ষণীয় আলোকসজ্জা দেখতে পাবেন বলে তাঁদের আশা। চন্দননগরের আলোকশিল্পীরা করোনা পরিস্থিতির জন্য খুব খারাপ অবস্থায় রয়েছেন। এতে তাঁদেরও সুবিধা হবে। চন্দননগরের বিশিষ্ট আলোকশিল্পী বাবু পাল (শ্রীভূমির পুজোয় আলোকসজ্জার অন্যতম কারিগর) বলেন, এখানকার মূল আলোকসজ্জা তো প্রতিমা ভাসানের শোভাযাত্রায় থাকে। মণ্ডপ ও সংলগ্ন রাস্তায় সাদামাটা কাজ রাখা হয়। বিভিন্ন জায়গায় দুর্গাপুজোর জন্য যে কাজগুলি করা হয়, সেগুলি মণ্ডপ সংলগ্ন এলাকায় লাগিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু ভাসানের শোভাযাত্রার জন্য বিশেষ ধরনের আলোকজ্জা করা হয়। তবে আমি কোনও মণ্ডপের কাজ এখনও পর্যন্ত শুরু করিনি। কেন্দ্রীয় পুজো কমিটির কর্তা মানববাবু জানিয়েছেন, ঐতিহ্যশালী প্রতিমা ভাসানের শোভাযাত্রা এবার ফের চালু করতে তাঁরা প্রস্তুত। গত আগস্ট মাসের শেষ দিকে কেন্দ্রীয় কমিটির যে ভার্চুয়াল সভা হয়, সেখানে এব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। লক্ষ্মীপুজোর পর জগদ্ধাত্রী পুজো নিয়ে পুলিস-প্রশাসনের কর্তাদের সঙ্গে যে বৈঠক হবে, সেখানেই বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে। তবে বিসর্জনের শোভাযাত্রা অনিশ্চিত হলেও, চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজোর প্রস্তুতি পর্ব শুরু হয়ে গিয়েছে দুর্গাপুজো শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে। এখানকার প্রথা হল, বিজয়া দশমীর দিন সব জায়গায় জগদ্ধাত্রী প্রতিমার কাঠামোর বিশেষ পুজো করা হয়। কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক শুভজিৎ সাহা জানিয়েছেন, প্রথা অনুযায়ী কাঠামো পুজোর পর প্রতিমা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে।
চন্দননগর ও ভদ্রেশ্বর থানা এলাকা মিলিয়ে কেন্দ্রীয় কমিটির আওতায় মোট পুজোর সংখ্যা ১৭১টি। এর মধ্যে চন্দননগর থানা এলাকায় রয়েছে ১২৯টি পুজো। বেশ কয়েকটি পুজো রয়েছে যেগুলির বয়স দু’শো বছরের বেশি। শতাধিক বছর ধরে চলছে এমন পুজোর সংখ্যা ৭টি বলে জানিয়েছেন তিনি।
তবে চন্দননগরের সব পুজো কমিটি বিসর্জনের শোভাযাত্রায় অংশ নেয় না। সাধারণত ৭০ থেকে ৭৫টি পুজো কমিটি এতে অংশ নেয়। শোভাযাত্রায় অংশ নেওয়ার জন্য বিশেষ প্রস্তুতি নিতে হয়। খরচেরও ব্যাপারও আছে। বড় ট্রাকে বিশেষ আলোকসজ্জা করা হয়। একটি পুজো কমিটি প্রতিমা ও আলোকসজ্জার জন্য সর্বাধিক চারটি ট্রাক রাখতে পারে। আলোকসজ্জা হতে হবে থিম নির্ভর। মানুষ, বিভিন্ন প্রাণী, সামগ্রীর উপর অভিনব আলোকসজ্জা করে পুজো কমিটিগুলি। ত্রিমাত্রিক আলোকসজ্জাও থাকে। নির্দিষ্ট রুটে একাদশীর দিন প্রায় নয় কিলোমিটার পথ পরিক্রমা করে বিসর্জনের শোভাযাত্রা।