অতিরিক্ত পরিশ্রমে শারীরিক ক্লান্তি। প্রিয়জনের বিপদগামিতায় অশান্তি ও মানহানির আশঙ্কা। সাংসারিক ক্ষেত্রে মতানৈক্য এড়িয়ে চলা ... বিশদ
রানিবাঁধের বিডিও শুভদীপ পালিত বলেন, দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় বাসিন্দারা ছেঁদাপাথরে ক্ষুদিরাম স্মৃতিবিজড়িত এলাকাটি সংরক্ষণ ও সৌন্দর্যায়নের মাধ্যমে পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার দাবি জানিয়ে আসছিলেন। এলাকাবাসীর আবেদনের কথা মাথায় রেখে ঐতিহাসিক গুরুত্বের বিষয়টি যাচাই করার জন্য আমরা প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সাহায্য চাইছি। এজন্য এলাকার মাপজোক করে প্রয়োজনীয় ছবি তুলে ইতিমধ্যেই এই আবেদন জেলাস্তরে পাঠিয়েছি। জেলাস্তর থেকেও রাজ্যস্তরে আবেদনের প্রক্রিয়া প্রায় শেষের পথে।
প্রসঙ্গত, বাঁকুড়ার বিভিন্ন বই ও ছেঁদাপাথর এলাকার বাসিন্দাদের দাবি, ব্রিটিশ নজরদারি থেকে আত্মগোপনের পাশাপাশি বাঁকুড়া ও সংলগ্ন মেদিনীপুরের বিপ্লবীদের বোমা তৈরির প্রশিক্ষণ দিতে বারিকুলের ছেঁদাপাথরে এসেছিলেন বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসু। ছেঁদাপাথর গ্রাম লাগোয়া একটি গুহায় আত্মগোপন করে বোমা তৈরি করে বিপ্লবীদের সরবরাহের পাশাপাশি তাঁদের পিস্তল চালানোর প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন। তাই স্থানীয় বাসিন্দারা এখনও যে সমস্ত স্মৃতিচিহ্ন রয়েছে সেগুলি যথাযথ সংরক্ষণের ব্যবস্থা ও স্বাধীনতা সংগ্রামে এখানকার মানুষের ইতিহাসকে তুলে ধরার জন্য দীর্ঘদিন ধরে প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়ে আসছেন।
রানিবাঁধ থেকে বারিকুল-ঝিলিমিলি রাস্তা ধরে ২৭কিলোমিটার দূরে জঙ্গলঘেরা গ্রাম ছেঁদাপাথর। ছেঁদাপাথর হাইস্কুলের উল্টোদিকে কিছুটা ফাঁকা জায়গা রয়েছে। তারই একদিকে রয়েছে ক্ষুদিরাম বসুর মর্মর মূর্তি। বাঁদিকে আমগাছের পাশে বাঁধানো চাতাল ও জেলা প্রশাসনের তরফে তৈরি ক্ষুদিরাম সাংস্কৃতিক মুক্তমঞ্চ।
ছেঁদাপাথর হাইস্কুলের টিচার ইনচার্জ মানস মুখোপাধ্যায় বলেন, আমি প্রায় ২০বছর ধরে চাকরি করছি। এখানে আসার পর শুনেছি, স্কুলের উল্টোদিকে রাস্তার ধারে যে আমগাছগুলি বর্তমানে রয়েছে তার পাশেই একটি প্রাচীন আমগাছ ছিল। ওই গাছের তলাতেই বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসু এলাকার মানুষ ও তাঁর সঙ্গে থাকা বিপ্লবীদের নিয়ে বৈঠক করতেন। আমাদের বিদ্যালয়ের পিছনের দিকে জঙ্গলের মধ্যে একটি গুহা ছিল। আমরা এসেও সেই গুহার মুখ দেখেছি। বর্তমানে আমগাছটি মরে গিয়েছে। গুহার মুখ মাটিতে ঢাকা পড়েছে। আমরা আগামী প্রজন্মের কাছে স্বাধীনতা সংগ্রামের এই ইতিহাসকে যথাযথভাবে তুলে ধরার জন্য প্রশাসনের কাছে আবেদন জানিয়েছিলাম। প্রশাসন প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ ও পর্যটন দপ্তরকে চিঠি দিচ্ছে বলে কিছু দিন আগে মাপজোকের সময় শুনেছি।
স্থানীয় বাসিন্দা ক্ষুদিরাম মাহাত বলেন, পূর্বপুরুষদের কাছে শুনেছি, এই আমবাগানেই বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসু গ্রামের মানুষ ও এখানে থাকা বিপ্লবীদের নিয়ে গাছের তলায় বসে বৈঠক করতেন। সেই বৈঠকে আমাদের পরিবারের সদস্যরাও অংশ নিতেন। বাবার কাছে শুনেছি, ১৯০৭সালের শেষের দিকে ছেঁদাপাথর অম্বিকানগর রাজবাড়ির অধীনে ছিল। তৎকালীন অম্বিকানগরের রাজার সঙ্গে মেদিনীপুরের রাজা দিগম্বর নন্দ বিদ্যানিকেতনের ভালো সম্পর্ক ছিল। সেই সূত্রে দিগম্বরবাবুর মতোই অম্বিকানগরের রাজাও বিপ্লবী আন্দোলনে পরোক্ষভাবে সাহায্য করেছিলেন। দিগম্বরবাবুর অনুরোধেই অম্বিকানগরের তৎকালীন রাজা ক্ষুদিরাম বসু সহ তাঁর সঙ্গীদের আত্মগোপনের জন্য জঙ্গলঘেরা গ্রাম ছেঁদাপাথরের গুহায় থাকার ব্যবস্থা করেছিলেন। বাবার কাছে শুনেছি, স্কুলের ঠিক পিছনে একটি টিলায় একটি গুহা ছিল। ওই গুহাতে এসে ক্ষুদিরাম বসু বিপ্লবীদের সঙ্গে আত্মগোপন করেছিলেন। বোমা বাঁধারও প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন। একটু দেরিতে হলেও প্রশাসন পদক্ষেপ নেওয়ায় আমরা খুশি।