অতিরিক্ত পরিশ্রমে শারীরিক ক্লান্তি। প্রিয়জনের বিপদগামিতায় অশান্তি ও মানহানির আশঙ্কা। সাংসারিক ক্ষেত্রে মতানৈক্য এড়িয়ে চলা ... বিশদ
জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, গত আর্থিক বছরে এপ্রিল থেকে মার্চের মধ্যে প্রসূতি মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ৬৭টি। এবার এপ্রিল থেকে অক্টোবর মাসের মধ্যেই প্রসূতি মৃত্যুর সংখ্যা ৫০ ছুঁয়েছে। স্বাভাবিকভাবে গড় হিসেবে ধরে নেওয়া হচ্ছে গতবারের চেয়ে সংখ্যাটা এবার অনেকটাই বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। যদিও কী কারণে প্রসূতি মৃত্যুর হার এবছর বেড়ে গেল তা জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের কর্তাদের কাছেও পরিষ্কার নয়।
জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক তাপস রায় বলেন, প্রসূতি মৃত্যুর হার এবার কিছুটা হলেও বেশি। আমরা প্রসূতি মৃত্যু ঠেকাতে সবরকম ব্যবস্থা নিয়েছি। তারপরও কেন তা বাড়ল তা এখনও আমাদের কাছে পরিষ্কার নয়। আমরা বিষয়টি নিয়ে যা যা করার করছি। রাজ্য থেকেও একটি দল আসছে। ইতিমধ্যেই আমরা জেলাশাসকের সঙ্গেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা সেরেছি। সবরকম পদক্ষেপই আমরা নিচ্ছি। স্বাস্থ্য দপ্তর এব্যাপারে সতর্ক রয়েছে।
প্রসূতি মৃত্যুর হার বেড়ে যাওয়ার পিছনে কিছু ক্ষেত্রে প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র, সাব সেন্টার, ব্লক হাসপাতাল বা জেলা হাসপাতালের চিকিৎসা পরিষেবার মান নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। কোনও প্রসূতিকে প্রাথমিক, ব্লক বা জেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে কী পরিস্থিতিতে সদর হাসপাতালে রেফার করা হচ্ছে, তার উপর আদৌ নজরদারি থাকছে কি না উঠছে সে প্রশ্নও। রেফার করার ক্ষেত্রে কোন চিকিৎসক কী কারণে রেফার করলেন তা নির্দিষ্ট করে জানাতে হবে। এব্যাপারে একাধিকবার বলা হয়েছিল। কিন্তু, তা হয়নি। ব্লক বা জেলা হাসপাতাল থেকে যখন রোগীদের সদর হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে তখন তাদের একাংশের শারীরিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে বলে অভিযোগ চিকিৎসকদের একাংশের। সদর হাসপাতালের এক চিকিৎসক বলেন, খিঁচুনি প্রবণতা, রক্তাল্পতা জনিত কারণে প্রসূতির মৃত্যু বেশি ঘটে থাকে। প্রসূতি মৃত্যুর হার বেড়ে যাওয়ার পিছনে এগুলি বড় কারণ।
প্রাতিষ্ঠানিক প্রসব বাড়ছে। ফলে, প্রসূতি মৃত্যু কমার কথা। তবে সেভাবে প্রসূতি মৃত্যু কমছে না। রাজ্য সরকারের দাবি, স্বাস্থ্যক্ষেত্রে পরিকাঠামো গত কয়েক বছরে ঢেলে সাজানো হয়েছে। শিশু ও প্রসূতি মৃত্যু রোধে বেশকিছু পদক্ষেপ করা হয়েছে। তাও সেভাবে প্রসূতি মৃত্যুর হার কমছে না। যদিও জেলার এক স্বাস্থ্যকর্তা বলেন, প্রসূতি মৃত্যুর হার কমছে। হয়তো উল্লেখযোগ্যভাবে কমছে না। চিকিৎসার অবহেলায় প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ ঘিরে বিভিন্ন হাসপাতালে বিক্ষোভও হয়। জেলার প্রসূতির মৃত্যু নিয়ে একাধিক অভিযোগ উঠেছে। এদিকে, গত কয়েক বছরে জেলায় প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবের হার বেড়েছে, প্রসূতিকে হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়ার জন্য নিশ্চয়যানের সংখ্যা বেড়েছে। তারপরেও প্রসূতি মৃত্যু রোধের ক্ষেত্রে কেন উল্লেখযোগ্য সাফল্য পাচ্ছে না জেলা। তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের কর্তারা বলছেন, টিনএজ বা কম বয়সে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে যাওয়ার ফলেই প্রসূতি মৃত্যু হওয়া একটা কারণ। এখন অবধি যে ৫০ জন মারা গিয়েছেন, এর মধ্যে ২০ জন প্রসূতির বয়স ছিল ১৮ র কাছাকাছি বা তার থেকে সামান্য কিছু বেশি। জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের এক কর্তা বলেন, এটা একটা কারণ তো বটেই। তবে নজরদারির কিছু অভাব রয়েছে তা অস্বীকার করার উপায় নেই। বিভিন্ন কর্মসূচিতে একজন প্রসূতিকে একাধিকবার সাব সেন্টারে আসতে হয়। চিকিৎসকরা তাঁকে দেখেনও। তারপরও এরকম হওয়ার বিষয়টিতে স্বাস্থ্য দপ্তরের ব্যর্থতা সামনে আনছে। সব স্তরে সকলে সমানভাবে দায়িত্ব নিয়ে কাজ করলে এই সংখ্যা অবশ্যই কমবে।
যদিও জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকদের দাবি, কিছু সমস্যা তো আছেই। তবে সেগুলি তো হঠাৎ করেই এ বছর শুরু হয়েছে এমন নয়। ফলে খুব সহজে কেন প্রসূতি মৃত্যু বাড়ছে, তা এখনই বলা সম্ভব নয়।