গুরুজনের চিকিৎসায় বহু ব্যয়। ক্রোধ দমন করা উচিত। নানাভাবে অর্থ আগমনের সুযোগ। সহকর্মীদের সঙ্গে ঝগড়ায় ... বিশদ
দেখা গেল, সবার নজর এড়িয়ে এক বৃদ্ধা দুই নম্বর ঘাটে নেমে জলের অনেকটাই চলে গিয়েছেন। হায় হায় করে উঠলেন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মীরা। একজন বাঁশের বেড়া টপকে জলে লাফ দিলেন। প্রায় গলা সমান জল থেকে টেনে তুলে আনলেন সেই বৃদ্ধাকে। সাগরের হিমেল হাওয়া, সঙ্গে ভেজা শরীর। রীতিমতো কাঁপতে লাগলেন বৃদ্ধা। কর্তব্যরত পুলিসকর্মী তাঁকে রীতিমতো বকাঝকা আরম্ভ করলেন, আপ কাঁহা সে আয়ি হ্যায়? কেয়া নাম হ্যায়? বৃদ্ধার মধ্যে ভয় বা অনুশোচনার চিহ্ন নেই। উল্টে সাগরের পবিত্র জলে স্নান করে তিনি ধন্য। হিন্দিতে জানালেন, পণ্ডিতজি বলেছিলেন, এখন ভালো সময়। এখন স্নান করলে মকর সংক্রান্তির মতো পুণ্য লাভ হবে। তিনি এখন সেই পুণ্য অর্জন করে ধন্য।
তাঁর কথায় যেন বাঁধ ভাঙল। রাজস্থানের বিকানির থেকে আসা একদল পুণ্যার্থী একে একে জলে নামতে লাগলেন। পুলিস বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলেও কে শোনে কার কথা! ভালো সময় বলে কথা। যা হবে মহাদেব দেখবেন। রাজস্থানের সেই দলের এক মধ্যবয়স্ক গলায় উত্তরীয় জড়িয়ে স্ত্রীর হাত ধরে নামতে শুরু করলেন। পুলিস আধিকারিক বললেন, দেখেছেন? কোনও কথা শুনছে না। এখন যদি কোনও বিপদ ঘটে, তাহলে দোষ হবে আমাদের। প্রায় কোমর সমান জলে নেমে গা ভিজিয়ে পাড়ে উঠে এলেন সেই দম্পতি। তাঁদের জন্য সেখানেই অপেক্ষা করছিলেন স্থানীয় ‘পুরোহিত’ চন্দ্রধর বড়াল। হলুদ ধুতি, নীল সোয়াটারের উপর নামাবলি।
বালির উপর তখন পুজোর সরঞ্জাম নিয়ে তৈরি তিনি। প্রদীপ-ধূপ জ্বালিয়ে কয়েকটা গাঁদা ফুল সাজিয়ে রাখলেন। সামনে শিবলিঙ্গ। রাজস্থানের সেই দলকে তিনিই পরামর্শ দিয়েছিলেন ‘শুভক্ষণে’ স্নান করার। দলের প্রত্যেকের হয়ে পুজো করলেন। কেউ পাঁচশো, কেউ দু’শো টাকা দিলেন। কেউ বা ধুতি, শাড়ি। প্রদীপের তেল বেশি পুড়ে যাওয়ার আগে তাড়াতাড়ি নিভিয়ে দিয়ে ‘ভুজ্জি’ গোছাতে লাগলেন। না তাকিয়েই বললেন, পারিবারিক ব্যবসা দাদা। পুরোহিত হয়ে পুজো করাটাই পেশা। এই সময়টাই ইনকাম ভালো হয়। সাগর পঞ্চায়েতের কার্ড আছে। কথাগুলো কোনওরকমে শেষ করেই দৌড়লেন অন্য ‘পার্টি’ ধরতে। অন্য কোনও পুণ্যার্থীকে মধ্যরাতে পুণ্যলাভের পথ বাতলে দিতে ভিড়ের মাঝে মিশে গেলেন। তাঁর অস্থায়ী পুজো বেদিতে পড়ে রইল কিছু গাঁদা ফুলের পাপড়ি।