ব্রতীন দাস: আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনায় আলু চাষিদের দুশ্চিন্তা বাড়ছে। কয়েকদিন আগের বৃষ্টিতে জমিতে জল জমে যাওয়ায় অনেক কৃষকের খেতের আলু ইতিমধ্যে নষ্ট হয়ে গিয়েছে। অন্যদিকে, কুয়াশার দাপট, নিম্নচাপের বৃষ্টি ও ভিজে পরিবেশের কারণে অনেক কৃষকের আলুর জমিতে ছত্রাকের আক্রমণ দেখা দিয়েছে। ফলে আলুর জমিতে নাবি ধসা রোগ ছড়ানোর আশঙ্কায় রয়েছেন চাষিরা। কৃষি বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, আলুর জমিতে নাবি ধসা রোগের প্রাথমিক উপসর্গ, গাছের পাতায় বাদামি ও কালো দাগ দেখা দেওয়া। পাতার কিনারা থেকে শুরু হয় ওই দাগ। ধীরে ধীরে পাতার ভিতরের দিকে দাগ প্রবেশ করে। অনুকূল পরিবেশে পাতার বৃন্ত ও কাণ্ডে ওই দাগ দেখা যায়। সকালে আলু গাছের পাতা শিশিরে ভিজে থাকলে দাগের পাশে সাদা পাউডারের মতো ছত্রাক লক্ষ্য করা যায়। এই পরিস্থিতিতে স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়া থাকলে ২-৪ দিনের মধ্যে পচে যাবে পাতা। যেখানে ধসা দেখা দেয়নি, সেখানে আলুর জমিতে কপার অক্সিক্লোরাইড ৫০ ডব্লুপি ৪ গ্রাম, কপার হাইড্রক্সাইড আড়াই গ্রাম, ক্লোরোথ্যালোনিল ২ গ্রাম, ম্যানকোজেব ৭৫ ডব্লুপি আড়াই গ্রাম প্রতি লিটার জলে গুলে স্প্রে করতে হবে। যেসব আলুর জমিতে ইতিমধ্যে ধসার আক্রমণ হয়েছে, সেখানে সাতদিন অন্তর ছত্রাকনাশক ঘুরিয়ে ফিরিয়ে স্প্রে করা দরকার। ডাইমিথোমর্ফ ৫০ ডব্লুপি ১ গ্রাম ও ম্যানকোজেব ৭৫ ডব্লুপি ২ গ্রাম প্রতি লিটার জলে গুলে অথবা সাইমাক্সানিল ৪ শতাংশ ও ম্যানকোজেব ৬৪ শতাংশ ডব্লুপি ৩ গ্রাম প্রতি লিটার জলে গুলে প্রয়োগ করতে হবে জমিতে। ধসার আশঙ্কা থাকলে আলুর জমিতে ভেলির মাঝের নালা এক-তৃতীয়াংশের বেশি ডুবিয়ে সেচ দেওয়া যাবে না। এমনভাবে সেচ দিতে হবে যেন ২-৩ ঘণ্টার বেশি নালায় জল না থাকে। সেচ দেওয়ার সবচেয়ে ভালো সময় দুপুর বারোটা থেকে দুপুর একটার মধ্যে। কৃষি আধিকারিকদের বক্তব্য, যেসব এলাকায় আলুর জমিতে ধসা রোগের আশঙ্কা বেশি, সেখানে ভিজে আবহাওয়ায় সেচ ও চাপান সার দেওয়া বন্ধ রাখতে হবে। আকাশ পরিষ্কার থাকলে তবেই সেচ দেওয়া যেতে পারে। মাটি থেকে আলুর ভেলি ৪-৫ ইঞ্চি উঁচু করে বাঁধতে হবে। স্প্রে করার মেশিনের নজলের মুখ এমনভাবে রাখতে হবে যাতে গাছের পাতার উপর ও নীচে সমানভাবে ভেজে। স্প্রে করার সময় ছত্রাকনাশকের সঙ্গে সবসময় আঠা মিশিয়ে নিতে হবে। আলু তোলার দুই সপ্তাহ আগে গাছের কাণ্ডের উপরের অংশ কেটে ফেলা উচিত। আলুর জমিতে ঠিকমতো অনুখাদ্য দেওয়া দরকার।