যারা বিদ্যার্থী তাদের মানসিক অস্থিরতা বৃদ্ধি পাবে। নানা বিষয়ে খুঁতখুঁতে ভাব জাগবে। গোপন প্রেম থাকলে ... বিশদ
বিপ্লব ও কুন্তল পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ এভারেস্ট জয় করেছেন কয়েক বছর আগে। এদের মধ্যে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ার বিপ্লব সফলভাবে শৃঙ্গ জয় করলেও, কুন্তলের স্বপ্ন অধরাই থেকে গিয়েছে। তাঁদের সঙ্গে যাওয়া আরও দুই বাঙালি পর্বতারোহী রুদ্রপ্রসাদ হালদার এবং রমেশ রায় শৃঙ্গ জয়ের পর নামার সময় গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। তবে সূত্রের খবর, তাঁরা এখন ক্যাম্প-২’তে নিরাপদে আছেন। আরেক শৃঙ্গ জয়ী পবর্তারোহী শেখ সাহাবুদ্দিন সুস্থভাবে রয়েছেন।
নেপাল পর্যটন মন্ত্রকের মুখপাত্র মীরা আচার্য বলেন, এজেন্সির পক্ষ থেকে তাঁদের জানানো হয়েছে দু’জন বাঙালি পর্বতারোহী বিপ্লব বৈদ্য এবং কুন্তল কাঁড়ারের মৃত্যু হয়েছে। ক্যাম্প-৪’এর উপরে তাঁদের দেহ রয়েছে। তাঁদের উদ্ধার করার প্রক্রিয়া ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। বাঙালি পর্বতারোহীদের এজেন্সি ‘পিক প্রোমোশনে’র অন্যতম কর্তা কেশব পোড়েল জানিয়েছেন, দু’জনেই উচ্চতাজনিত অসুস্থতায় আক্রান্ত হয়ে পড়েন। বিপ্লব শৃঙ্গ জয়ের পর অসুস্থ হয়ে পড়েন। আর কুন্তল শৃঙ্গ জয়ের আগেই গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। এখন দু’জনের মৃতদেহ ক্যাম্প-৪ থেকে অনেক উপরে রয়েছে। তাঁদের মৃতদেহ ফিরিয়ে আনার জন্য শুক্রবার থেকে উদ্ধারকাজ শুরু হবে।
তবে আগে অসুস্থ হয়ে পড়া পর্বতারোহী রুদ্রপ্রসাদ হালদার এবং রমেশ রায়কে নামিয়ে আনার প্রক্রিয়া শুরু করা হচ্ছে। বৃহস্পতিবারও তাঁদের উদ্ধার করতে কাঞ্চনজঙ্ঘার উপরে হেলিকপ্টার পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু, আবহাওয়া খারাপ থাকায় উদ্ধার কাজ করা যায়নি। ‘পিক প্রোমোশনে’র ম্যানেজার পাসাং শেরপা বলেন, দু’জন শেরপার সহযোগিতায় রুদ্র এবং রমেশকে ইতিমধ্যে ক্যাম্প¬ ৪ থেকে ক্যাম্প-২’তে নিরাপদে নামিয়ে আনা হয়েছে। দু’জনেরই মারাত্মকভাবে ‘তুষারক্ষত’ হয়েছে। তবে প্রাণ সংশয়ের কোনও সম্ভাবনা নেই।
এদিকে, দু’জন বাঙালি পর্বতারোহীর মৃত্যুর খবর এবং আরও দু’জনের অসুস্থতার খবর পাওয়ার পরই পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য প্রশাসনের পক্ষ থেকেও তৎপরতা শুরু হয়ে গিয়েছে। পর্বতারোহণ বিষয়ক রাজ্য সরকারের উপদেষ্টা দেবদাস নন্দীর নেতৃত্বে একটি দল শুক্রবারই কাঠমাণ্ডুর উদ্দেশে রওনা দিচ্ছে।
ছন্দার মৃত্যুর ক্ষত শুকিয়ে যাওয়ার আগে ফের দুই বাঙালি পর্বতারোহীর মৃত্যুতে গভীর শোকের ছায়া নেমে এসেছে বিপ্লব ও কুন্তলের পরিবারে। বুধবার পর্যন্ত যেখানে আনন্দ, উচ্ছ্বাস ছিল, একটি রাতেই সেসব বদলে গেল বৈদ্য পরিবারে। বৃহস্পতিবার সকালে কলেজেই ছিলেন বিপ্লবের স্ত্রী পেশায় গ্রন্থাগারিক রেখা সাহা (বৈদ্য)। অসুস্থতার খবর পেতেই বাড়ি ফিরে আসেন তিনি। ঘরে ফিরে একটাই কথা বললেন, বিয়ের সময় শর্ত দিয়ে বলেছিল, বিয়ের পরও পাহাড়ে যাব। বিয়ে যেন কোনও বাধা না হয়। তাঁদের দু’টি মেয়ে রয়েছে। বিপ্লববাবুর মা অসুস্থ। সকালে যে খবর এসেছে, তা তাঁর মা শান্তা বৈদ্যকে জানানো হয়নি। রেখাদেবী বলেন, সকাল থেকে একটি ওষুধও খাওয়ানো যায়নি মাকে। খালি বলছেন, ছেলের খবর দাও।
অন্যদিকে, কুন্তলের মৃত্যুর খবর বাড়িতে পৌঁছানোর পরেই এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। দুর্ঘটনার খবর পেয়েই এদিন দুপুরে কুন্তলবাবুর বাড়িতে গিয়ে তাঁর পরিবারের সদস্যদের সমবেদনা জানানোর পাশাপাশি রাজ্য সরকার সবসময় তাঁদের পাশে থাকবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন সমবায় মন্ত্রী অরূপ রায়। ইতিমধ্যেই কুন্তলবাবুর দেহ আনার জন্য এদিন হাওড়া থেকে পরিবারের লোকজন নেপালের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন।
পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ছোট থেকেই বাবা চণ্ডীচরণ কাঁড়ারের হাত ধরে পাহাড় জয়ের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন কুন্তল। পরে তালিম নিয়ে একাধিক পাহাড় ঘুরে এসেছেন। কাঞ্চনজঙ্ঘা অভিযানে গিয়ে শরীরের তাপমাত্রা দ্রুত কমতে শুরু করে। এরপরেই শেরপারা তাঁদের দ্রুত ক্যাম্পে নামিয়ে আনেন। ছেলের মৃত্যুর খবর পাওয়ার পরেই শোকে ভেঙে পড়েছেন বাবা চণ্ডীচরণ কাঁড়ার। তিনি বলেন, আমার ট্রেকিং দেখেই ওর এই নেশার শুরু। তবে পাহাড়েই যে ওকে এভাবে হারাতে হবে তা কল্পনাও করতে পারিনি।