কর্মলাভের যোগ আছে। ব্যবসায় যুক্ত হওয়া যেতে পারে। কর্মক্ষেত্রে সাফল্য আসবে। বুদ্ধিমত্তার জন্য প্রশংসা জুটবে। ... বিশদ
বালুরঘাটের খাসপুর হাইস্কুলের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মিহির সমাজদার। বাড়ি বালুরঘাটের অভিযাত্রী ক্লাব সংলগ্ন এলাকায়। কলেজ জীবন থেকেই তাঁর এই অদ্ভুত শখ। সেই সময় থেকেই পুরনো অচল ইলেকট্রনিক জিনিস সংগ্রহ করে সচল করে নিজের সংগ্রহশালার পরিসর বাড়িয়ে চলেছেন। এখন তাঁর বয়স পঁয়ষট্টি পেরিয়েছে। কিন্তু এখনও কোনও জায়গায় পুরনো রেডিও অথবা ট্রানজিস্টারের সন্ধান পেলেই ছুটে যান মিহিরবাবু। যত অর্থই খরচ হোক না কেন, তা সংগ্রহ করে, সারাই করে আবার সেসব নিজের সংগ্রহশালায় জমা করেন। মিহিরবাবুর সংগ্রহশালায় একটি গ্রামোফোন রয়েছে যা ১৯৩০ সালের। প্রায় নব্বই বছরের পুরোনো। বালুরঘাটের এক দোকান থেকে তিনি সেটি সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও একটি রেডিও রয়েছে যা ১৯৩৫ সালের। তারও বয়স কম নয়। ওই রেডিওটি জলপাইগুড়ি থেকে সংগ্রহ করেছেন তিনি। এছাড়াও অনেক ইলেকট্রনিক সরঞ্জাম রয়েছে, যার বেশিরভাগই স্বাধীনতার আগের। সবথেকে বড় কথা হল সবই আজও সচল অবস্থায় রয়েছে।
মিহিরবাবু বলেন, উত্তরবঙ্গের শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি এবং দক্ষিণবঙ্গেরও কিছু জায়গা থেকে অনেক কিছুই সংগ্রহ করেছি। এছাড়াও বালুরঘাট থেকেও অনেক জিনিস সংগ্রহ করেছি। আমার এই অদ্ভুত শখ কলেজ জীবন থেকেই। আমি রেডিও শুনতে খুব ভালোবাসি। তাই এখন এই রেডিওগুলির প্রত্যেকটি থেকেই পাঁচ মিনিট করে গান শুনি। এই রেডিও, ক্যাসেট প্লেয়ার ও গ্রামোফোন থেকে নজরুলগীতি, রবীন্দ্রসঙ্গীত শুনি প্রতিদিন। এগুলি আমার মনকে শান্তি দেয় এবং শারীরিক দিক থেকেও সুস্থ থাকি। আমার সংগ্রহশালা তৈরির ব্যাপারে স্থানীয় বাসিন্দা জয়ন্ত দত্ত বিশেষভাবে সহায়তা করেছেন। জয়ন্তবাবুই আমার অচল রেডিও গুলি সচল করার ব্যবস্থা করে দেন।
এবিষয়ে জয়ন্ত দত্ত বলেন, মিহিরবাবু যখনই কোনও পুরনো অচল কিছুর সন্ধান পান, ছুটে গিয়ে সেই রেডিও, ট্রানজিস্টার বা ক্যাসেট প্লেয়ার নিয়ে আসেন। তিনি বলেন, যত টাকাই লাগুক না কেন, এইগুলি ফের সচল করতে হবে। আমিও অনেক কষ্টে সেগুলি সারাই করে আবার চালু করার মতো অবস্থায় নিয়ে যাই। মিহিরবাবুর এই অদ্ভুত ইচ্ছা বা শখ, যাই হোক না কেন, আমাকে ভীষণ মুগ্ধ করে।
বর্তমানে মিহিরবাবুর সংগ্রহশালায় রেডিও রয়েছে প্রায় ১৫টি। এছাড়াও গ্রামোফোন আটটি, রেকর্ড প্লেয়ার ৮০টি, চাবি দেওয়া ঘড়ি ১৮টি, ক্যাসেট প্লেয়ার ১২ টি, ওয়াকম্যান রেডিও ১০টি, বড় ক্যামেরা একটি, ছোট ফিল্ম ক্যামেরা সাতটি। সবকটাই অনেক প্রাচীন। ব্রিটিশ আমলের। এখন আর সেসব কিছুই সাধারণ বাজারে পাওয়া যায় না। তবে মিহিরবাবুর সংগ্রহশালায় সব কিছুই সচল অবস্থায় রয়েছে। যাতে সচলই থাকে সেজন্য সেসব রীতিমতো ব্যবহার করেন তিনি নিজেই।
এবিষয়ে দীপক মুখ্যোপ্যাধ্যায় নামে আরও এক অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক বলেন, মিহিরবাবুর সংগ্রহশালায় আমি মাঝেমধ্যেই যাই। পুরনো জিনিসগুলি দেখে খুব ভালো লাগে। প্রাচীন গ্রামোফোন বা রেডিওতে গানও শুনি। আমাদের বাল্যকালের কথা মনে পড়ে যায়। নস্টালজিক হয়ে যাই। মানুষের মন ও ইচ্ছা একসঙ্গে কাজ করলে মানুষ যে অদ্ভুত কাজও করতে পারে, তারই উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত মিহিরবাবু।