কর্মপ্রার্থীদের কোনও চুক্তিবদ্ধ কাজে যুক্ত হবার যোগ আছে। ব্যবসা শুরু করা যেতে পারে। বিবাহের যোগাযোগ ... বিশদ
বিগত সাত বছরে রাজ্যে সার্বিক উন্নয়ন সত্ত্বেও লোকসভা ভোটে দলের ফল কেন আশানুরূপ হয়নি? এই প্রশ্নের জবাব খুঁজতে গিয়েই মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী দলের একাংশের নেতা-কর্মীদের জনবিচ্ছিন্নতাকেই চিহ্নিত করেছিলেন। সেই রোগের দওয়াই বাতলাতে প্রশান্ত কিশোরের পেশাদার সংস্থা আইপ্যাককে নিয়োগ করেন মুখ্যমন্ত্রী। তৃণমূলের সাংগঠনিক পরিসরের বাইরে এই পেশাদার সংস্থার কর্মীরা গোটা রাজ্য ঘুরে নানা বিষয়ে সমীক্ষা চালিয়েছিল। সেখানেই উঠে এসেছিল দলের জনপ্রতিনিধি থেকে নেতা-নেত্রীদের একাংশের মধ্যে দুর্নীতি, স্বজন পোষণের রোগ। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল সাধারণ মানুষের থেকে স্থানীয় স্তরের তৃণমূল নেতৃত্বের সংযোগহীনতা। প্রশান্ত কিশোরের টিম বাংলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে সমীক্ষা চালিয়ে সংগঠনের অবক্ষয়ের স্বরূপ তুলে ধরে। তা থেকে মুক্তির উপায়ও বাতলে দেয় আইপ্যাক। সেই অনুসারে একদিকে জনসংযোগ বৃদ্ধি, অন্যদিকে বুথস্তর থেকে কর্মী বাহিনী তৈরি করা। যাদের নাম ঠিকানা সহ ডেটাব্যাঙ্ক এখন আইপ্যাকের হাতে।
মুখ্যমন্ত্রী তথা দলনেত্রী একদিকে নিজেই যেমন দলের অন্দরের শুদ্ধিকরণের উদ্দেশ্যে সরকারি প্রকল্পে কাটমানি নিয়ে কঠোর অবস্থান নেন, তেমনই মানুষের বাড়ির দাওয়ায় পৌঁছে যাওয়ার নিদান দেন দলীয় কর্মীদের। সেই অনুসারেই প্রশান্ত কিশোরের সংস্থা তৈরি করেছিল ‘দিদিকে বলো’। এক কথায় বাংলার দলীয় রাজনীতিতে যার নজির ছিল না। প্রথমিকভাবে ‘দিদিকে বলো’ নিয়ে দলের মধ্যেই কিছুটা দ্বিধা ও সংশয় কাজ করলেও গত কয়েক মাসের রিপোর্ট তৃণমূলের পক্ষে সদর্থক ভূমিকা নিয়েছে বলেই সংশ্লিষ্ট মহলের ধারণা। পেশাদার সংস্থার তৈরি মডেলে তৃণমূলের মতো এক বিশাল সংগঠনকে শৃঙ্খলায় বেঁধে ফেলতে পেরেছে বলেই মানুষের সঙ্গে হারানো সংযোগ ফিরে পেতে বিশেষ বিলম্ব হয়নি। সম্প্রতি তৃণমূল ভবনে দলের ওয়ার্কিং কমিটির বর্ধিত বৈঠকে দলনেত্রী জনপ্রতিনিধিদের ‘দিদিকে বলো’ প্রকল্পের পর্যলোচনা করেছেন। উল্লেখ্য, ‘দিদিকে বলো’ কার্যকর করা নিয়ে হাতে গোনা কয়েজন বিধায়ক ধমক খেয়েছেন, তাঁদের সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। বুথ পিছু তিনজন করে কর্মীর নাম জমা দিতে বলেছিল টিম প্রশান্ত। এক্ষেত্রেও সিংহভাগ বিধায়ক তা নিয়ম মেনেই জমা দিয়েছেন। যাঁরা দেননি তাঁদের হাতেনাতে ধরেছিলেন মমতা। জনসংযোগ বাড়ানোর পাশাপাশি সাংগঠনিক সক্রিয়তা বৃদ্ধিও টিম প্রশান্তের সাফল্য বলেই মনে করছেন তৃণমূল নেতারা।
সাধারণ মানুষের সামনে যে দেওয়াল তৃণমূল জনপ্রতিনিধি বা নেতাদের সামনে আসতে দিচ্ছিল না, তা ভেঙে গিয়েছে। এখানেই ‘দিদিকে বলো’র সাফল্য। এমনই দাবি তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের। তাঁর মতে, মানুষ তার অভাব-অভিযোগের কথা, সমস্যার কথা অকপটে প্রশাসনের কাছে পৌঁছে দিতে পারছে। এটা সম্ভব করতে ‘দিদিকে বলো’ খুবই কাজে এসেছে বলে মনে করেন তিনি। তাই একজন মন্ত্রী তথা স্থানীয় বিধায়কের দরজায় অপেক্ষা করতে করতে ধৈর্য্য হারানো দর্শনপ্রার্থী ‘দিদিকে বলো’র মোবাইল বুথ নম্বরে ফোন করে নিজের সমস্যার কথা জানাতে বাধ্য হবেন বলে স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিতে পারেন। এটাকেই ওই প্রকল্পের সাফল্য বলে মনে করেন পার্থবাবু। তার পাশাপাশি মাসতিনেকের মধ্যে বুথে বুথে কর্মীর তালিকা তৈরির কাজটাও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন পার্থবাবু। রাজ্যের মন্ত্রী তাপস রায়ের মতে, দলনেত্রী বলেছেন, অফিসে বসে নয়, ভোটারদের বাড়ির উঠোনে পৌঁছে যেতে হবে। ‘দিদিকে বলো’ বস্তুত সেই কাজটাই আরও পরিকল্পিতভাবে করার উপায় বাতলে দিয়েছে। তৃণমূলের একাধিক বিধায়ক, শাখা সংগঠনের নেতার মতে, পুজোর মধ্যে সাংগঠনিক কাজকর্ম প্রায় শিকেয় উঠত। এবার ‘দিদিকে বলো’র সৌজন্যে প্রতিদিনই কিছু না কিছু সাংগঠনিক কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়েছিল তাঁদের।