নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: পৃথিবীজুড়ে ত্রাস সৃষ্টি করা করোনা ভাইরাস নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে রাজ্যেও। সোমবার বিকেলে এক থাইল্যান্ডের নাগরিকের মৃত্যুর ঘটনায় করোনা নিয়ে উদ্বেগ কিছুটা হলেও বাড়ল। সুরিন নাগটয় (৩২) নামে থাইল্যান্ডের ওই বাসিন্দা ২১ জানুয়ারি থেকে ইএম বাইপাস লাগোয়া একটি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। এদিন বিকেলে মারা যান। তীব্র শ্বাসকষ্টসহ একাধিক সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। এদিকে বিদেশি নাগরিকের শ্বাসকষ্টে মৃত্যুর সংবাদ জানাজানি হতেই হইচই শুরু হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ওই ব্যক্তির থুতু বা সোয়াব সংগ্রহ করে বেলেঘাটার নাইসেড গবেষণাগারে পাঠিয়েছে। এদিকে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ হয়েছে, এই আশঙ্কায় রবিবার বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে ভর্তি হন চীনের এক মহিলা। নাম জো হুয়ামিন। বয়স ২৮ বছর। তাঁর ভর্তির খবর জানার পর সোমবার উদ্বেগ ছড়ায় হাসপাতাল চত্বরে। হইচই পড়ে স্বাস্থ্যভবনেও। রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা (শিক্ষা) ডাঃ দেবাশিস ভট্টাচার্য আইডি যান। পরিস্থিতির খোঁজখবর নিয়ে আসেন। তবে চিকিৎসকরা স্বস্তির কথা শুনিয়ে বলেছেন, ওই মহিলার উপসর্গের সঙ্গে করোনার কোনও মিল নেই। এদিকে করোনা নিয়ে রাজ্যের প্রস্তুতি সম্পর্কে আলোচনা করতে এদিন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যসচিব প্রীতি সুদানের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স হয় নবান্নে। ভিডিও কনফারেন্সে বাংলা ছাড়াও যোগ দেন উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, বিহার এবং সিকিমের প্রশাসনিক কর্তারা। নবান্ন সূত্রের খবর, ইতিমধ্যে বেলেঘাটার আইডি হাসপাতাল ছাড়াও উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এনিয়ে আইসোলেশন ওয়ার্ড করা হয়েছে। সরকার সবদিক থেকে প্রস্তুত। বাংলা-নেপাল সীমানায় চলছে প্রচার ও নজরদারি। কারণ, বর্তমানে চীন থেকে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়া এই ভাইরাস ‘জনস্বাস্থ্যের পক্ষে বিপদ’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা হু হু করে বাড়ছে। চীন ফেরত নেপালের একজন আক্রান্ত হওয়ায় ইতিমধ্যে বাংলা-নেপালের তিনটি সীমানায় সতর্কতা জারি করেছে রাজ্য সরকার।
এদিকে, এই চীনা মহিলার ক্ষেত্রে যদিও আইডি হাসপাতাল জানায়, তাঁর করোনা সংক্রমণ হয়নি। করোনার সঙ্গে উপসর্গগত মিলও নেই। আইডি সূত্রের খবর, জো হুয়ামিন ট্রেকিং করতে ভালোবাসেন। ছ’মাস আগে দেশ থেকে বেরিয়ে পড়েন। প্রথমে যান নামিবিয়া। তারপর মরিশাস, মাদাগাস্কার হয়ে ভারতে আসেন ২৪ জানুয়ারি। চিকিৎসকদের তিনি জানান, ট্রেনে যাওয়ার সময় সেখানকার খাবার খেয়ে দুই থেকে ছ’ঘণ্টার মধ্যে তাঁর বেশ কতগুলি উপসর্গ দেখা যায়। যেমন, মাথাব্যথা, গা গোলানো এবং পেটে ভীষণ অস্বস্তিবোধ ইত্যাদি।
সোমবার দুপুরে আইডি’র অধ্যক্ষা ডাঃ অনিমা হালদার বলেন, সম্ভবত আতঙ্কিত হয়েই উনি ভর্তি হয়েছিলেন। কারণ, করোনার প্রধান উপসর্গগুলির কোনওটাই তাঁর ছিল না। যেমন, সর্দি, কাশি, শ্বাসনালির সংক্রমণের সমস্যা, শ্বাসকষ্ট কোনওটাই না।
থাইল্যণ্ডের নাগরিক প্রসঙ্গে সংশ্লিষ্ট বেসরকারি হাসপাতালের এক সূত্র জানিয়েছে, উনি বেশ কিছুদিন ধরে ভুগছিলেন। বমি, শ্বাসকষ্ট সহ নানা ধরনের সমস্যা ছিল। ২১ জানুয়ারি ভর্তি হন। অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। শেষদিকে ভেন্টিলেটরে দিতে হয়। হাসপাতালের তরফে থাই দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। বাড়ির লোকজনকেও জানানো হয়েছে। ভর্তির পরই বিষয়টি স্বাস্থ্য দপ্তরেও জানানো হয়েছে।