উচ্চতর বিদ্যায় আগ্রহ বাড়বে। মনোমতো বিষয় নিয়ে পঠন-পাঠন হবে। ব্যবসা স্থান শুভ। পৈতৃক ব্যবসায় যুক্ত ... বিশদ
উত্তর ২৪ পরগনার সহকারি উদ্যানপালন অধিকর্তা ড. শুভদীপ নাথ জানিয়েছেন, বর্তমানে প্রায় সব জেলাতেই পেঁয়াজ চাষ হয়। হুগলি, নদীয়া, বর্ধমান, মুর্শিদাবাদ জেলায় এটি একটি অন্যতম অর্থকরী ফসল। রবি মরশুমে পেঁয়াজের উন্নত জাত, পুসা রেড, পুসা রত্না, পুসা মাধবী, অর্কা নিকেতন, অর্কা বিন্দু, পাটনা রেড, এগ্রিফাউন্ড লাইট রেড, সুখসাগর প্রভৃতি। হাইব্রিড জাতের ক্ষেত্রে বিঘায় ৫০০-৬০০ গ্রাম এবং উন্নত জাতের ক্ষেত্রে বিঘায় বীজ লাগবে ১-১.২ কেজি। ছোট কন্দের জাত সরাসরি জমিতে ছিটিয়ে বোনা যায়। নির্দিষ্ট বয়সের চারা জমিতে লাগাতে হবে। কারণ, কম বয়সের চারা লাগালে জমিতে দাঁড়াবে না। আবার চারার বয়স বেশি হয়ে গেলে তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যাবে। রবি মরশুমের পেঁয়াজ চাষে ৬-৭ সপ্তাহের চারা বসাতে হবে।
বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সব্জি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. তপন মাইতি বলেছেন, ঘন করে পেঁয়াজের বীজতলা তৈরি করতে হবে। অনেকে পেঁয়াজের বীজতলায় গোবর দিয়ে থাকেন। এটা না দিলেই ভালো। কারণ, গোবরের মধ্যে মিশে থাকা ঘাসের বীজ থেকে আগাছা জন্মানোর আশঙ্কা বেশি থাকে। পরিবর্তে ভার্মিকম্পোস্ট সার ব্যবহার করা যেতে পারে বীজতলায়। শীতকালে আমাদের রাজ্যে চাষের জন্য সুখসাগর জাতটিই উপযুক্ত বলে মনে করেন তপনবাবু। তাঁর সুপারিশ, জমিতে জো আসার পর পেঁয়াজের চারা বসাতে হবে। মাস দেড়েকের চারা লাগানো উচিত। অনেকে ধানের মতো জমি কাদা করেও পেঁয়াজ লাগিয়ে থাকেন। পেঁয়াজের দু’টি সারির মধ্যে ৬ ইঞ্চি এবং একই সারিতে দু’টি গাছের মধ্যে অন্তত ৪ ইঞ্চি দূরত্ব রাখতে হবে। কয়েক সারি অন্তর একটু বেশি ফাঁকা রাখতে হবে। যাতে সেখানে বসে বা দাঁড়িয়ে পেঁয়াজের জমিতে পরিচর্যার কাজ ভালোভাবে করা যায়। উদ্যানপালন আধিকারিকরা জানিয়েছেন, পেঁয়াজ চাষের জন্য জমি গভীরভাবে লাঙল দিয়ে নিতে হবে। এর পর মই দিয়ে সমান করতে হবে মাটি। সরাসরি জমিতে বীজ বুনে কিংবা চারা রোপণ করে পেঁয়াজ চাষ করা যায়। জমিতে শেষ চাষ দেওয়ার সময় গোবর বা কম্পোস্ট সার দিতে হবে। পেঁয়াজের জমিতে মাটির পিএইচ মাত্রা ৩-এর নীচে নেমে গেলে চুন দিতে হবে। সেক্ষেত্রে জমি তৈরির কয়েকদিন আগে চুন দেওয়ার কাজ শেষ করা দরকার। পিএইচ কমে গেলে পুষ্টিজনিতে অভাবের কারণে ফলন মার খাওয়ার আশঙ্কা থাকে। প্রতি লিটার জলে ৪ গ্রাম ব্লু কপার মিশিয়ে বীজতলার মাটি শোধন করে নিতে হবে। বীজতলার উপর ১০ সেমি পুরু করে খড় বিছিয়ে তা পুড়িয়েও বীজতলার মাটি শোধন করা যায়। প্রয়োজনমতো বীজতলায় ১-২দিন অন্তর হাল্কা জলসেচ দিতে হবে। ৫-৭ দিন পর চারা বের হবে। পেঁয়াজ চাষের গোটা পর্যায়ে ৮-১০টি সেচ দেওয়া দরকার। তবে পেঁয়াজ সংগ্রহের একমাস আগে থেকে সেচ দেওয়া বন্ধ করতে হবে।
পেঁয়াজের জমিতে থ্রিপস-এর আক্রমণ ঘটে। এই পোকা ছোট। কিন্তু এরা পাতার রস শুষে খায়। গাছ দুর্বল হয়ে পড়ে। আক্রান্ত পাতায় বাদামি দাগ দেখা যায়। প্রতি লিটার জলে ১ মিলি সাইপারমেথ্রিন বা ০.৫ মিলি ইমিডাক্লোরোপিড মিশিয়ে ৪-৫দিন অন্তর স্প্রে করতে হবে। জাবপোকা দলবদ্ধভাবে আক্রমণ করে। পেঁয়াজ পাতার রস শুষে খায়। থ্রিপস-এর মতোই প্রতিকার করতে হয়। পেঁয়াজে ধসা রোগ দেখা দেয়। গাছের পাতা ও কাণ্ড আক্রান্ত হয়। কাণ্ডে জল ভেজা হাল্কা বেগুনি দাগ দেখা যায় প্রথমে। পরে দাগগুলি বড় হয়। আক্রান্ত স্থান খড়ের মতো হয়ে শুকিয়ে যায়। বৃষ্টি হলে রোগটি দ্রুত ছড়ায়। সহনশীল জাত চাষ করতে হবে। প্রতি কেজি বীজে আড়াই গ্রাম হারে কার্বেন্ডাজিম মিশিয়ে বীজ শোধন করতে হবে। আক্রমণ বেশি হলে ১০ লিটার জলে ০.০৫ মিলি টেবুকোনাজোল মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। পেঁয়াজে কাণ্ডপচা রোগ দেখা দেয়। পেঁয়াজ গাছ পরিপক্ক হলে পাতা হলুদ হয়ে যায়। বীজ বপন থেকে ফসল তুলতে ১১০-১২০ দিন সময় লাগে। রবি মরশুমে হেক্টরে ১২-১৬ টন ফলন পাওয়া যায়।