বিশ্বজিৎ দাস, কলকাতা: ডিসেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে কলকাতায় শুরু হচ্ছে বহু প্রতীক্ষিত করোনা ভ্যাকসিনের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল। সেজন্য আগামী মাসে পুনে থেকে উড়িয়ে আনা হচ্ছে আসছে কয়েকশো ভাওয়েল ভ্যাকসিন। আমেরিকায় গবেষণার তৃতীয় পর্যায়ে আশাপ্রদ জায়গায় থাকা ভ্যাকসিন নোভাভ্যাক্স-এর ভারতীয় প্রতিরূপ কোভোভ্যাক্সের ট্রায়াল হবে। পুনের সিরাম ইনস্টিটিউট ও কেন্দ্রীয় শীর্ষ স্বাস্থ্য গবেষণা সংস্থা আইসিএমআর যৌথভাবে এই করোনা ভ্যাকসিন পরীক্ষার সঙ্গে যুক্ত। সারা দেশে এই ট্রায়ালে অংশগ্রহণের জন্য পশ্চিমবঙ্গ সহ দেশের বহু বিভিন্ন গবেষণা সংস্থা ইচ্ছাপ্রকাশ করে। শহরে এই ট্রায়াল পরিচালনা করবে রাজ্য সরকারের ঐতিহ্যবাহী গবেষণা সংস্থা স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিন (এসটিএম)। ইতিমধ্যেই ট্রপিক্যালের গবেষকদের কাছে ট্রায়ালে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে অংশগ্রহণের আর্জি আসতে শুরু করেছে। ট্রপিক্যালের সদ্য অবসরপ্রাপ্ত অধিকর্তা ডাঃ প্রতীপ কুণ্ডু এই ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে স্বেচ্ছাসেবক হওয়ার আর্জি জানিয়েছেন। ট্রায়ালের প্রধান গবেষক তথা প্রিন্সিপাল ইনভেস্টিগেটর ডাঃ শান্তনু ত্রিপাঠিকে নিজেই সেই ইচ্ছার কথা জানিয়েছেন ডাঃ কুণ্ডু। রবিবার যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, করোনায় আক্রান্ত হননি, এমন যে কোনও সুস্থ মানুষ স্বেচ্ছাসেবক হতে পারবেন। আমার পাঁচবার করোনা পরীক্ষা হয়েছে। তিনবার আরটিপিসিআর এবং দু’বার র্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষা হয়েছে। কোনও পরীক্ষাতেই কোভিড ধরা পড়েনি। কিন্তু দেশ-বিদেশের বেশ কিছু ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে অংশ নেওয়া স্বেচ্ছাসেবকদের একাংশের যে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াও হয়েছে? ডাঃ কুণ্ডু বলেন, সে খুবই অল্পসংখ্যক মানুষের হয়েছে। আর তা যদি হয়, হবে। বয়স ৬৫। সুগার-প্রেশার নেই। জনস্বার্থে পরীক্ষার জন্য পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার কবলে পড়লে আফসোস থাকবে না। প্রিন্সিপাল ইনভেস্টিগেটর (পিআই) শান্তনুবাবুকে ইচ্ছার কথা দৃঢ়ভাবে জানিয়েছি।
সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই ট্রপিক্যাল ও মেডিক্যাল কলেজের আরও বহু চিকিৎসক এই গবেষণায় স্বেচ্ছাসেবক হতে চেয়েছেন। অন্যান্য পেশায় থাকা বহু মানুষ এবং তাঁদের পরিবারের লোকজনও ট্রায়ালে ভলান্টিয়ার হতে চান বলে জানিয়েছেন।
ট্রায়ালের গবেষকরা জানিয়েছেন, বহু নিয়মকানুন রয়েছে। সেগুলি মেনেই ট্রায়াল হবে। শেষ হতে ২০২১ সালের জুলাই-আগস্ট হতে পারে। তাহলে কি কোভোম্যাক্স পেতে আরও ছ’মাস? গবেষকরা জানিয়েছেন, সবটাই নির্ভর করছে কলকাতা সহ সবক’টি কেন্দ্রে গবেষণার ফলাফলের উপর। ভারতে গবেষণা চলা অন্যান্য ভ্যাকসিনগুলি তেমন কার্যকর না হলে বা বিশেষ পরিস্থিতিতে ট্রায়াল শেষ হওয়ার আগেও কোভোম্যাক্সের ইমার্জেন্সি অথরাইজেশন বা অনুমোদন দিতে পারে কেন্দ্র।
উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, কলকাতায় কেন্দ্রীয় ভাইরাস গবেষণা সংস্থা নাইসেড-এ ভারত বায়োটেক-এর করোনা ভ্যাকসিনের তৃতীয় পর্যায়ের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল ডিসেম্বরে শুরু হওয়ার কথা। কার ট্রায়াল আগে শুরু হয়, তার চেয়েও এক্ষেত্রে বড় কথা হল, কোন ভ্যাকসিনের ট্রায়াল শেষ পর্যন্ত মানুষকে করোনার ত্রাস থেকে মুক্ত করে। সেদিকেই তাকিয়ে রাজ্যবাসী।