উচ্চতর বিদ্যায় আগ্রহ বাড়বে। মনোমতো বিষয় নিয়ে পঠন-পাঠন হবে। ব্যবসা স্থান শুভ। পৈতৃক ব্যবসায় যুক্ত ... বিশদ
নৈহাটির মিত্রপাড়ায় বাড়ি চল্লিশোর্ধ্ব বীরেন দাসের। বাবা রিকশচালক ছিলেন। বাবার পেশার সূত্রেই ১১ বছর বয়স থেকে ভ্যান রিকশ চালাতে শুরু করেন বীরেনবাবু। তিন বছর হল টোটো কিনেছেন। অভাবের কারণে বেশিদূর পড়াশোনা হয়নি। ক্লাস এইট পাশ। ভ্যান রিকশ চালাতেন যখন, সেই সময়ও অসুস্থ যাত্রীদের বিনা ভাড়ায় নিয়ে যেতেন হাসপাতালে।
বছর তিনেক হল বীরেনবাবু টোটো চালাচ্ছেন। টোটোর পিছনে একটি ফ্লেক্স ঝুলছে। তাতে লেখা ‘বয়স্ক, প্রতিবন্ধী, গর্ভবতী মহিলা ও অসুস্থদের জন্য এই টোটো সম্পূর্ণ বিনামূল্যে।’ নীচে দুটি ফোন নম্বরও দেওয়া রয়েছে। টোটোতে রয়েছে প্রাথমিক চিকিৎসার একটি বক্স। তাতে অ্যান্টিসেপটিক লোশন, ব্যান্ডেজ, তুলো এবং সাধারণ কিছু ওষুধ রয়েছে। রাস্তায় কেউ দুর্ঘটনায় জখম হলে এই অ্যাম্বুলেন্স টোটোকেই ফোন করেন পরিচিতরা। ফোন আসা মাত্রই দ্রুত ঘটনাস্থলে চলে যান তিনি। তারপর জখম ব্যক্তিকে উদ্ধার করে নৈহাটি স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করেন। রোগী ভর্তি করেই ফিরে আসেন না তিনি। নিজের পকেটের টাকা খরচ করে প্রয়োজনীয় ওষুধও কিনে দেন। বাড়ির লোকজনকেও ফোন করে খবর দেন তিনি।
নৈহাটি শহরের বাসিন্দারা বীরেন দাসকে ‘টোটো সন্ন্যাসী’ বলে ডাকেন। রাতদুপুরে কেউ অসুস্থ হলে প্রথম ফোনটা আসে এই টোটো সন্ন্যাসীর কাছেই। ঝড়-বৃষ্টি থাকলেও তা মাথায় নিয়েই টোটো নিয়ে হাজির হয়ে যান তিনি। মানুষের সেবায় যেমন নিয়োজিত বীরেন, তেমনই পশুদের প্রতিও তাঁর প্রেম রয়েছে। রাস্তায় কোনও কুকুর বা অন্যান্য জীবজন্তু জখম অবস্থায় পড়ে থাকলে বাড়িতে নিয়ে আসেন তিনি। প্রাথমিক চিকিৎসার পর তিনি বন দপ্তরে খবর দেন। ওই সারমেয়দের বাড়িতে রেখেই চলে চিকিৎসা। নৈহাটিতে পশু হাসপাতাল না থাকায় অসুস্থ কুকুরদের চিকিৎসা করতে সমস্যায় পড়তে হয়। তবে কাঁচরাপাড়ায় এক পশু চিকিৎসক (হাতুড়ে) রয়েছেন। তাঁকে ডেকে এনে চিকিৎসা করান বীরেনবাবু।
মিত্রপাড়ার বাসিন্দা সম্রাট দাস, আশিস বিশ্বাসরা বলেন, ছোটবেলা থেকেই বীরেন দাস পরোপকারী। ও টোটো কেনার পর এই শহরে একমাত্র এটাই চলন্ত অ্যাম্বুলেন্স। বাড়ির কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে প্রথম ফোনটা সাধুকেই (বীরেন) আমরা করি।
নিজে বিয়ে করেননি। বাড়িতে মা রয়েছেন। সারা জীবন টোটো অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবা দিয়ে যাবেন বলে প্রত্যয়ী বীরেনবাবু। তিনি বলেন, প্রথম দিকে হাসপাতাল দুর্ঘটনায় জখমদের ভর্তি নিতে চাইত না। পুলিসে রিপোর্ট লেখাতে বলত। এখন সবাই জেনে গিয়েছে। এখন কোনও অসুবিধা হয় না। এই পরিষেবা দেওয়া এখন আমার জীবনের অন্যতম ব্রত।