পঠন-পাঠনে আগ্রহ বাড়লেও মন চঞ্চল থাকবে। কোনও হিতৈষী দ্বারা উপকৃত হবার সম্ভাবনা। ব্যবসায় যুক্ত হলে ... বিশদ
কোচ অমল দত্ত সোয়া দুটোর মধ্যে তাঁবুতে আসতে বলেছিলেন। কিন্তু আমি তো আমার মতো। অপেরায় নুন শোয়ে সিনেমা দেখে সাবিত্রী রেস্তোরাঁয় চিকেন স্টু আর পাউরুটি খেয়ে সোয়া তিনটায় ঢুকলাম তাঁবুতে। তখন প্রার্থনা চলছে। সুকুমার সমাজপতি, লাল্টু ভট্টাচার্যরা পেপ টক দিলেন। ইস্ট বেঙ্গল তাঁবুতে ড্রেস করে তিনটি গাড়িতে চেপে আমরা পৌঁছলাম মোহন বাগান মাঠে। গ্যালারিতে যত লোক তার চেয়ে মাঠের বাইরে ফুটবলপ্রেমীর সংখ্যা বেশি। টিকিটের হাকাকার। সেই বছর মোহন বাগান সত্যিই তারকাখচিত দল। আমরা আন্ডারডগ। তবে মাঠে ভাস্কর, সুরজিৎ আমি ক্রমাগত কথা বলে দলকে উজ্জীবিত করেছিলাম। মিহিরের দুরন্ত গোল আমাদের প্রাণশক্তি বাড়িয়ে দিল। এরপর প্রদীপ চৌধুরি বক্সের বাইরে আমায় ফাউল করায় ফ্রি-কিক পেল ইস্ট বেঙ্গল। শট নেওয়ার সময়ে প্রদীপদা আর তিওয়ারিদার (মোহন বাগান কর্তা) মুখটা ভেসে উঠল। যাবতীয় বঞ্চনা তখন আমার মূলধন। ফ্রি-কিক বাঁক খেয়ে জালে জড়াল। এত সুন্দর শট নিয়েছিলাম যে বিশ্বজিৎ দাসের কিছু করার ছিল না। পরে হারের জন্য সকলে ওকে দোষারাপ করেছিল। বেচারা! অমলদাকে ওরকম আবেগতাড়িত হতে কোনওদিন দেখিনি! হেরে লজ্জায় পড়ে গিয়েছিল শ্যাম-সুব্রতরা। শিল্ড ফাইনালে আমাদের হারানো পর্যন্ত বাজার পর্যন্ত যেতে পারত না ওরা।
ম্যাচের পর সচিব ডাঃ নৃপেন দাস নিয়ে গেলেন ওঁর নিউ আলিপুরের বাড়িতে। ডিনার করিয়ে ছাড়লেন। রওনা হওয়ার আগে শোওয়ার ঘরে নিয়ে গিয়ে তোষকের তলা থেকে দশটি একশো টাকার নোটও হাতে গুঁজে দিলেন। বুঝলাম ওটা ভালোবাসার পুরস্কার। ডাক্তারদার গাড়ি থেকে নাগেরবাজারের ভাড়াবাড়ির সামনে নেমেই দেখলাম, ইস্ট বেঙ্গল সমর্থকদের উল্লাস চলছে। আমায় দেখে তা দ্বিগুণ হল। বাড়ির অশক্ত পাঁচিলের উপর উঠে নাচানাচি করায় তা ভাঙল। পরদিন তাসা আর ব্যান্ড পার্টির আওয়াজে ঘুম থেকে উঠলাম। বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে ফুল দিয়ে সাজানো একটি সাইকেল রিক্সা। সমর্থকদের দাবিতে তাতে চড়েই আমাকে নাগেরবাজার, দমদম স্টেশন রোড ধরে বিটি রোড সন্নিহিত চিড়িয়া মোড় চত্বর ঘুরিয়ে আনা হল। ওই ভালোবাসা কোনওদিন ভুলব না।
ইস্ট বেঙ্গল: ভাস্কর গাঙ্গুলি, চিন্ময় চ্যাটার্জি, শ্যামল ঘোষ, রমেন ভট্টাচার্য (বলাই চক্রবর্তী), শ্যামল ব্যানার্জি, পিন্টু চৌধুরি, রতন দত্ত, সুরজিৎ সেনগুপ্ত, রঞ্জিত মুখার্জি ( জহর দাস), মিহির বসু ও উলগানাথন।
মোহন বাগান: বিশ্বজিৎ দাস, সুধীর কর্মকার, সুব্রত ভট্টাচার্য, প্রদীপ চৌধুরি, দিলীপ পালিত, গৌতম সরকার, প্রসূন ব্যানার্জি, সুভাষ ভৌমিক (শ্যাম থাপা)( কম্পটন দত্ত), হাবিব, আকবর ও বিদেশ বসু।
রেফারি: দিলীপ সেন।