গুরুজনের চিকিৎসায় বহু ব্যয়। ক্রোধ দমন করা উচিত। নানাভাবে অর্থ পাওয়ার সুযোগ। সহকর্মীদের সঙ্গে ঝগড়ায় ... বিশদ
পুরশুড়ার নিমডাঙি এলাকার বাসিন্দা অরুণ মাজির দুই মেয়ে অঙ্কিতা মাজি ও তানিয়া মাজি ছোট থেকেই খেলা অন্ত প্রাণ। খেলায় প্রবল আগ্রহ তাদের বাবা ও মায়েরও। নিমডাঙিতেই অরুণবাবুর একটি গ্রিলের দোকান রয়েছে। সেই রকম রোজগার না হলেও দুই মেয়ের খেলাধুলোর প্রতি টান অভিভাবকরা অগ্রাহ্য করেননি। দুই মেয়ের খেলার হাতেখড়ি বাবার কাছেই। প্রাথমিক স্কুলে পড়ার সময় থেকেই অঙ্কিতা খেলাধুলোয় পারদর্শী। বর্তমানে সে পশ্চিমপাড়া হাইস্কুলে দ্বাদশ শ্রেণীতে পড়ছে। অন্যদিকে, তানিয়াও পশ্চিমপাড়া হাইস্কুলে অষ্টম শ্রেণীতে পড়ছে। প্রথমদিকে তারা সব ধরনের খেলাতেই পটু ছিল। তারপর একজনকে শটপুট ও অন্যজনকে ডিসকাস থ্রো-তে মজবুত করে তোলা হয়। বাড়ির মাঠে প্রথমে তারা অনুশীলন করলেও পরে তাদের তারকেশ্বরে একটি কোচিং সেন্টারে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে আবার হাওড়ায় ডুমুরজলা স্টেডিয়ামেও তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন তাদের বাবা।
মানসিক ও শারীরিকভাবে দুই বোনের পাশে সবসময়ের জন্য দাঁড়িয়েছেন তাদের মা তনুশ্রী মাজিও। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, দুই বোন প্রতিদিন তারকেশ্বরে অনুশীলনে যায়। তাই ভোরে বাড়ি থেকে সাইকেল চালিয়ে যেতে হয় তকিপুর স্টেশনে। সেখান থেকে ট্রেনে চেপে তারকেশ্বরে। অনুশীলন করে বাড়ি ফিরে তারা স্কুলে যায়। একইভাবে তারা সপ্তাহে তিনদিন ডুমুরজলাতেও যায়। অনুশীলনের তাদের সঙ্গী হন মা। সংসারের কাজ সামলে মেয়েদের পরিচর্যায় তিনি সবসময় নিজেকে নিয়োজিত রাখেন।
চলতি ২০১৭-’১৮ শিক্ষা বর্ষে অঙ্কিতা ও তানিয়া স্কুল থেকে জোনাল, মহকুমা ও জেলাস্তরের সফল হয়। তারপর রাজ্যস্তরে কল্যাণীতে খেলায় অংশ নিয়ে দু’জনই প্রথম স্থান অধিকার করে। সেখান থেকেই তারা জাতীয় স্তরের ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। গত ৫ ফেব্রুয়ারি গুজরাতে অঙ্কিতাকে তার বাবা ও ৭ ফেব্রুয়ারি তানিয়াকে নিয়ে মা হরিয়ানায় যায়। সেখানেই অঙ্কিতা শটপুটে ষষ্ঠ ও তানিয়া নবম স্থান অধিকার করেছে। সাফল্যের নিরিখে তারা শংসাপত্রও পেয়েছে। তবে জাতীয় স্তরের সাফল্য তাদের গর্বিত করলেও পরবর্তী ক্ষেত্রে তারা জাতীয় স্তরেই আরও উন্নত স্থান অধিকার করতে চায় বলে জানিয়েছে।
অরুণবাবু বলেন, অঙ্কিতা ও তানিয়া ছোট থেকেই খেলাধুলো ছাড়া আর কিছু করেনি। তাই ওদের প্রথম থেকেই খেলাতেই সাহস জুগিয়েছি। ভবিষ্যতে খেলাধুলোর জগতেই ওরা প্রতিষ্ঠিত হয়ে মানুষ হোক এটাই চাই। তবে জাতীয় স্তরের খেলার মতো পরিকাঠামো আমাদের নেই। ওদের স্বাচ্ছন্দ্যভাবে এগিয়ে যাওয়ার জন্য আমার আর্থিক অবস্থাও নেই। খেলার অত্যাধুনিক সরঞ্জাম প্রয়োজন। সেগুলি দিতে পারছি না। তাই সরকারিভাবে ওদের দিকে নজর দিলে ভালো হয়। তবে দুই মেয়ের স্কুলের শিক্ষক ও প্রশিক্ষক শিবপ্রসাদ ধারা এবং রামপ্রসাদ আঠা ওদের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করেছে। তাই এই সাফল্য এসেছে।
পশ্চিমপাড়া হাইস্কুলের দুই ক্রীড়া বিষয়ক শিক্ষক নবকুমার ঘোষ ও অশনি কুণ্ডু বলেন, অঙ্কিতা ও তানিয়া দু’জনই সম্ভাবনাময় ক্রীড়াবিদ। স্কুলে সপ্তাহে দু’দিনের খেলার ক্লাস হয়। সেই পরিকাঠামোয় তাদের প্রথমদিকে শেখানো হয়েছিল। তারপর প্রশিক্ষণে পাঠানো হয়। দুই বোনের সাফল্যে আমরা গর্বিত। তবে তাদের আরও উন্নতির জন্য গ্রামীণ পরিকাঠামো প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করেছে।
আরামবাগ মহকুমার স্পোর্টস কাউন্সিলের সম্পাদক অনীতা মুখোপাধ্যায় বলেন, সারা দেশের মধ্যে পুরশুড়ার দুই বোন সাফল্য পেয়েছে। এই সফলতা অন্যদের অনুপ্রাণিত করবে বলে আশা করি।