কর্মে সাফল্য ও সুনাম বৃদ্ধি। উকিল, মৃৎশিল্পীদের শুভ। সংক্রমণ থেকে শারীরিক অসুস্থতা হতে পারে। আর্থিক ... বিশদ
বিষ্ণুপুরের মল্লরাজবাড়ির পুজো জিতাষ্টমীর পরের দিন তোপধ্বনির মাধ্যমে শুরু হয়। এবারেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। রাজপরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, ৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দে রাজা জগতমল্ল দেবী মৃন্ময়ীকে প্রতিষ্ঠা করেন। গঙ্গামাটির সেই বিগ্রহ আজও অক্ষত রয়েছে। সেই দেবী মূর্তিকেই পুজো করা হয়। প্রচলিত পুজোর আচার অনুষ্ঠান একেবারে তিথি নক্ষত্র মেনে পালন করা হয়। এখানে মূর্তি পুজো ছাড়াও পটে আঁকা দেবীর আরাধনা করা হয়। মা মৃণ্ময়ী তিনটি রূপে পূজিতা হন। বড় ঠাকুরানি মা কালী, মেজো ঠাকুরানি সরস্বতী রূপে এবং ছোট ঠাকুরানি লক্ষ্মীরূপে পূজিতা হন। পটের বড়ঠাকুরানি বৃহস্পতিবার মূল মৃন্ময়ী মন্দিরে প্রবেশ করেন। মহালায়ার পরের দিন মেজো ঠাকুরানি একইভাবে পুজো ও শুদ্ধাচারের পর মন্দিরে প্রবেশ করবেন। সপ্তমীতে দেবী ছোট ঠাকুরানি প্রবেশ করবেন। রাজবাড়ির পুজো হয় নিজস্ব বলি নারায়ণী পদ্ধতিতে। সেই সময়ের হাতে লেখা পুঁথি, যা আজও অমলিন তা পাঠ করেই সম্পূর্ণ করা হয় মল্ল রাজপরিবারের পুজো।
পাত্রসায়রের হদলনারায়ণপুর জমিদার বাড়ির প্রায় ৩০০ বছরের প্রাচীন পুজো ফি বছর দর্শনার্থীদের মিলন মেলায় পরিণত হয়। পুজোয় দেশ বিদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা জমিদার বাড়ির পাঁচ শতাধিক সদস্যের আগমন ঘটে। করোনার কারণে গতবছর অনেকেই আসতে না পারেননি। তবে পুজোয় পরিজন ছাড়াও আশেপাশের গ্রামবাসীদের ভিড় হয় বলে জমিদারবাড়ির সদস্যরা জানিয়েছেন।
জমিদারবাড়ি সূত্রে জানা গিয়েছে, বিষ্ণুপুরের মল্লরাজা গোপাল সিংহদেবের আমলে পাত্রসায়রের নারায়ণপুরে বর্ধমান মহারাজার দেওয়ান মুচিরাম ঘোষ আসেন। সেখানে তাঁর সঙ্গে প্রখ্যাত গণিতজ্ঞ শুভঙ্কর রায়ের পরিচয় হয়। গণিত শাস্ত্রে সরল এক পন্থা এনেছিলেন শুভঙ্কর রায়। মুচিরাম ঘোষ মল্লরাজকে ওই সহজ গণিত শিখিয়েছিলেন। তখন থেকেই মল্লরাজের নজরে পড়েছিলেন মুচিরাম। এরপর মল্লরাজ তাঁকে মণ্ডল উপাধি প্রদান করেন। সেই সঙ্গে পাশাপাশি দুই গ্রাম হদল ও নারায়ণপুর সহ বেশ কিছু পরগনার জমিদারিও তিনি পান। সেই সময় থেকেই বাড়ির দুর্গাপুজোও শুরু হয়। প্রত্যন্ত এলাকায় অবস্থিত হদলনারায়ণপুরের বড় মণ্ডলবাড়ির পুজো খুব বেশি প্রচারের আলোয় না এলেও তিনশো বছরের প্রাচীন জমিদার বাড়ির উঠোনে প্রবেশ করলেই দর্শনার্থীর মনে অনন্য এক অনুভূতি জাগবে। বাড়ির সিংহদুয়ার পেরিয়ে ভেতরে ঢুকলেই নজর কাড়বে টেরাকোটার অপূর্ব সুন্দর রাসমঞ্চ, রথ, কালীমন্দির ও বৈঠকখানা। তারপরেই রয়েছে দুর্গামন্দির, আটচালা ও নাটমন্দির। পুজোয় দেবী মা’র দর্শনে আশেপাশের গ্রামবাসীরা ভিড় জমান। সব মিলিয়ে প্রত্যন্ত এলাকা হলেও জমিদারবাড়ির পুজো মিলন মেলায় পরিণত হয়।
ইন্দাসের সোমসার জমিবাড়ির পুজো আড়াইশো বছরের প্রাচীন। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, তৎকালীন জমিদার চন্দ্রমোহন পাল বাড়িতে দুর্গাপুজোর প্রচলন করেন। আগেকার নকশা করা ঠাকুর দালানে বৈষ্ণব মতে পুজো হয়। চালকুমড়ো বলি হয়। আগে পুজোর সময়ে যাত্রাপালা সহ অন্যান্য অনুষ্ঠান হতো। প্রচুর লোক খাওয়ানো হত। এখন জমিদারি নেই। অর্থ সংকটের কারণে সেই জৌলুসও নেই। তবে পুরনো ঐতিহ্য এবং তিথি নক্ষত্র মেনে পুজো হয়। এছাড়াও প্রাচীন ঐতিহ্য থাকায় আশেপাশের বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দাদের মধ্যে বাড়তি আবেগ রয়েছে। নবমীর দিন ঠাকুরকে প্রণাম করার জন্য তাঁরা মণ্ডপে ভিড় জমান।