সম্পত্তিজনিত মামলা-মোকদ্দমায় জটিলতা বৃদ্ধি। শরীর-স্বাস্থ্য দুর্বল হতে পারে। বিদ্যাশিক্ষায় বাধা-বিঘ্ন। হঠকারী সিদ্ধান্তের জন্য আফশোস বাড়তে ... বিশদ
প্রান্তিকের মূল মণ্ডপ তৈরি হচ্ছে পুরনো বাংলা টকিজের আদলে। মণ্ডপের ভিতরে থাকছে পথের পাঁচালি, সোনার কেল্লা, হীরক রাজার দেশে, জলসাঘরের মতো কিছু বিখ্যাত সিনেমার চরিত্রদের কাটআউট। এর ব্যাকগ্রাউন্ড হচ্ছে হাতে আঁকা। উদ্যোক্তাদের দাবি, হাতে আঁকা সেইসব ব্যাকগ্রাউন্ডে দেওয়া হবে থ্রি-ডি এফেক্ট। অর্থাৎ সামনে দাঁড়ালে মনে হবে, সেইসব বিখ্যাত দৃশ্যের অভিনয় সেই মুহূর্তেই হচ্ছে। মণ্ডপসজ্জা ব্যবহৃত হচ্ছে সিনেমার রিলের মতো হাতে আঁকা কিছু ছবিও। পুজোর উদ্বোধন করার কথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ভি কে সিংয়ের। কেন বাংলা সিনেমার ১০০ বছরকে থিম করার ভাবনা? উত্তরে ‘প্রান্তিক’-এর সহ সভাপতি নীলাদ্রি দেবচৌধুরী বলেন, ‘২০১২ সালে আমরা ভারতীয় সিনেমার ১০০ বছরকে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু আয়োজন সন্তোষজনক হয়নি। দর্শকদের প্রশংসা পেলেও মনে হচ্ছিল কোথাও কিছু খামতি রয়ে গিয়েছে। তখন থেকেই বাংলা সিনেমার ১০০ বছর নিয়ে কাজ করার ভাবনা শুরু। আমাদের পুজোর থিম কমিটির সদস্য দেবযানী সামন্ত, অঙ্গনা রায় এবং অলকানন্দা চক্রবর্তীর পরামর্শেই মূলত এই ভাবনার বাস্তবায়নের সূত্রপাত। এবার সাধারণ মানুষ অনেক বেশি রিলেট করতে পারবেন আমাদের পুজোর সঙ্গে।’ পুজো উদ্যোক্তারা জানালেন, পুজোর মাঠেই ১৬ এমএম প্রজেক্টর লাগিয়ে পুরনো দিনের মতো বাংলা সিনেমা দেখার আমেজও তাঁরা তৈরি করবেন। মণ্ডপজুড়ে বাংলা এবং ইংরেজি ভয়েস ওভারে বলা হবে বাংলা সিনেমার বিগত ১০০ বছরের ইতিহাস। নীলাদ্রিবাবু বললেন, ‘পঞ্চমীতেই পুজোর মাঠে আমরা যাত্রার আয়োজন করব। কলকাতার চিৎপুর থেকে আসছে যাত্রার দল। নবমীতে রাহুল দেব বর্মণের সুরসঙ্গীতের সঙ্গে যাঁরা সঙ্গত করেছেন, তারা আসবেন। সপ্তমীতে পারফর্ম করবে বাংলা ব্যান্ড ক্যাকটাস।’
ইন্দিরাপুরমের ‘শিপ্রা রিভেরা’র পুজো এবার ২১ বছরে পড়ছে। থিমের পুজো এখানে কোনওবারেই করা হয় না। কারণ পুজো উদ্যোক্তারা বরাবর সাবেকিয়ানাতেই বিশ্বাসী। পুজো কমিটির সভাপতি প্রবাল মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘আমরা বরাবর রীতিনীতি বজায় রেখে সাবেকিয়ানাতেই বিশ্বাস রেখেছি। এবারও তাই।’ স্বাভাবিকভাবেই শিপ্রা রিভেরার পুজোয় প্রতিমাতে সাবেকিয়ানার ছাপ স্পষ্ট হবে এবারও। তবে প্রতিমায় থাকবে সোনালি রঙের ছোঁয়া। প্রবালবাবু বলেন, ‘আমাদের পুজোর এবার বিশেষ আকর্ষণ চিৎপুরের যাত্রা। মহাষষ্ঠীতে দেবী চৌধুরাণী যাত্রাপালার আয়োজন হবে এই আবাসনে। প্রযোজনা করছে শৈল্পিক।’
ইন্দিরাপুরম ‘বঙ্গতরু’র পুজোর এবার ১৯ বছর। শিপ্রা রিভেরার মতোই এই পুজোর উদ্যোক্তারাও সাবেকিয়ানাতে বিশ্বাসী। এবারেও তার অন্যথা হচ্ছে না। তবে মণ্ডপসজ্জায় ব্যবহৃত হচ্ছে কুলো। এবং বাঁশ দিয়ে তৈরি অসংখ্য মূর্তি। পুজো কমিটির সহ-সভাপতি সুরজিৎ দে পুরকায়স্থ এবং অন্যতম প্রধান সদস্য বিশ্বজিৎ রাউত বলছিলেন, ‘গ্রামবাংলায় এই কুলোর ব্যবহার বহুল প্রচলিত। দিল্লির বুকে একটুকরো গ্রামাঞ্চল ফিরিয়ে আনব আমরা। ঠাকুরের চালাও তৈরি হচ্ছে মাটি দিয়ে। কোথাও শোলা বা থার্মোকলের ব্যবহার হচ্ছে না।’ ইন্দিরাপুরম ‘আপনজন’ পুজো কমিটির বয়স অবশ্য মাত্র চার বছর। কমিটির এগজিকিউটিভ মেম্বার শ্রীধর চিদম্বরম বললেন, ‘২০১৫ সাল থেকে পুজো শুরু হওয়ার পর আমরা ঘরোয়া ব্যাপারটিকেই প্রাধান্য দিই বেশি। এবারেও তাই দিচ্ছি। এমনকী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেও বাইরে থেকে কোনও শিল্পীকে নিয়ে আসা হচ্ছে না। পুজো কমিটির সদস্যরা আসর মাতাবেন।’
আগামী ২ অক্টোবর থেকে সারা দেশেই নিষিদ্ধ হচ্ছে প্লাস্টিকের ব্যবহার। সেই কথা মাথায় রেখেই এবার ইন্দিরাপুরমের কোনও পুজো কমিটিই প্লাস্টিকের ব্যবহার করছে না। এমনকী পুজো চলাকালীন এ ব্যাপারে সচেতনতামূলক কর্মসূচি নেওয়ারও পরিকল্পনা করেছেন পুজো উদ্যোক্তারা।