মুম্বই, ২০ সেপ্টেম্বর (পিটিআই): ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক শুধু স্বয়ংশাসিতই নয়, তার চেয়েও বেশি। সরকারের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করলেও সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় আরবিআইয়ের কাজে সরকার নাক গলায় না। শুক্রবার এমনটাই জানালেন কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের গভর্নর শক্তিকান্ত দাস। তাঁর মতে, সব দেশেই প্রধান আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সরকারের মতবিরোধ থাকে। কারণ সেখানে দু’জনের দৃষ্টিভঙ্গি ভিন্ন হয়। কিন্তু, আলাপ-আলোচনা চালিয়ে সমস্যার সমাধান খোঁজাটাও জরুরি বলে জানান আরবিআই গভর্নর। শক্তিকান্ত বলেন, ‘আপনাদের একটা কথা স্পষ্ট করে বলতে চাই যে, সরকার এবং আরবিআইয়ের মধ্যে বিস্তর আলোচনা চলে। কিন্তু যখন চূড়ান্ত সিদ্ধান্তগ্রহণের সময় আসে, তখন সেই সিদ্ধান্ত আরবিআই এককভাবেই নেয়। সিদ্ধান্তগ্রহণের ক্ষেত্রে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক একশো শতাংশ স্বয়ংশাসিত। আমাদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়ে কেউ হস্তক্ষেপ করে না।’
আরবিআই এবং সরকারের মধ্যে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে আরবিআই গভর্নর জানান, ভাবনার আদানপ্রদান করা এবং অপর পক্ষের কাছে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করাটা খুবই জরুরি। এতে সুসম্পর্ক বজায় থাকে। বিভিন্ন মহল থেকে বারবার অভিযোগ উঠেছে, কেন্দ্রীয় সরকারের ‘চাটুকারিতা’ করতে গিয়ে আরবিআই তার ভুল সিদ্ধান্তগুলিতেও সম্মতি দিয়ে দেয়। এদিন এই প্রসঙ্গে শক্তিকান্ত দাস স্পষ্ট জানান, সরকার হল সার্বভৌম। আরবিআই সেই সার্বভৌমত্বের অংশ। তাই সরকারকে এড়িয়ে চলা সম্ভব নয়। গভর্নর বলেন, ‘আরবিআই কারও চিয়ারলিডার নয়। তবুও অনেকে বলেন, আরবিআইকে সরকারের চিয়ারলিডার হয়ে থাকা উচিত নয়। তাঁদের কাছে আমার একটাই প্রশ্ন, আপনি কি আশা করেন যে কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক প্রকাশ্যে এসে ভাষণ দেবে এবং অর্থনীতির বেহাল দশার জন্য সরকারকে বিষোদ্গার করবে?’ তাঁর আরও সংযোজন, ‘পান থেকে চুন খসলেই যদি আমি সংবাদমাধ্যমের সামনে এসে সরকারের সঙ্গে আমার বিরোধের কথা চাউর করতে থাকি, তাহলে কী লাভ হবে আমার!’ কোনও ইস্যুতে মতানৈক্য তৈরি হলে আরবিআই তা অভ্যন্তরীণভাবে সরকারকে জানিয়ে দেয় বলে জানান গভর্নর।
এদিকে, কর্পোরেট ট্যাক্স কমানোর যে সিদ্ধান্ত কেন্দ্রীয় সরকার নিয়েছে, তা অর্থনীতির উন্নতির পক্ষে ইতিবাচক হবে বলে আশাপ্রকাশ করেন আরবিআই গভর্নর। শুক্রবার সকালেই কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন ঘোষণা করেন, কর্পোরেট ট্যাক্স ৩০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫.২ শতাংশ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যেই সমস্ত সারচার্জও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। সেই প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে আরবিআই গভর্নর বলেন, ‘এটা নিঃসন্দেহে বলিষ্ঠ এবং স্বাগত জানানোর মতো সিদ্ধান্ত বলে আমি মনে করি। আমাদের অর্থনীতির জন্য এটা খুবই ভালো উদ্যোগ।’ প্রথম ত্রৈমাসিকে দেশের জিডিপি বৃদ্ধির হার ৫ শতাংশে নেমে গিয়েছিল। গত ছয় বছরে যা ছিল সর্বনিম্ন। কিন্তু, দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে ছবিটা বদলাবে বলে আশাপ্রকাশ করেন আরবিআই গভর্নর। পাশাপাশি, একাধিক ব্যাঙ্কের সংযুক্তিকরণের প্রক্রিয়াও যাতে নিরবচ্ছিন্ন ভাবে সম্পন্ন করা যায়, তার জন্য সরকারের সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছে আরবিআই বলে জানান গভর্নর। তিনি বলেন, ‘এই ইস্যুটি নিয়েও আরবিআই ও সরকারের মধ্যে আলোচনা চালানো হবে, যাতে কোনও বাধা ছাড়াও সুষ্ঠভাবে সংযুক্তিকরণের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে পারে।’