সঠিক বন্ধু নির্বাচন আবশ্যক। কর্মরতদের ক্ষেত্রে শুভ। কর্মক্ষেত্রে বদলির কোনও সম্ভাবনা এই মুহূর্তে নেই। শেয়ার ... বিশদ
চিত্রটা ঠিক কেমন? এরাজ্যে একের পর এক বাংলা মাধ্যম স্কুল বন্ধ। যে ক’টা আছে, সবই ধুঁকছে। আগামী প্রজন্ম এই ভাষা শিখতে পারবে না ভেবেই শিউরে উঠছেন বাঙালিরা। ভাষা আন্দোলনের জন্য লড়াকু নেতা বা নেত্রীর যে অভাব রয়েছে, সেটাও ভালোকরম টের পাচ্ছেন তাঁরা। জামশেদপুর শহরে বাঙালিদের একটি কলোনি আছে... ইস্ট বেঙ্গল কলোনি। চাইবাসাতেও ছড়িয়ে ছিটিয়ে অন্তত ১০-১৫ হাজার বাঙালির বসবাস। অভিযোগের সুর সর্বত্রই। ক্ষমতায় থাকা সরকারের বাংলার প্রতি আগ্রহ দেখা যায় না, নেই সুবিচার করার উদ্যোগও। যে রাজ্যে এত বাঙালি ভোটার, সেখানে কি এমনটা হওয়ার কথা ছিল?
সাকচি গোল চক্কর থেকে আর ডি টাটা মোড় পেরিয়ে কিছুটা যেতেই ঢালু রাস্তা নেমেছে। পাঞ্জাবি কলোনির সরু গলি টপকে প্রায় শেষ মাথায় পড়বে ইস্ট বেঙ্গল কলোনি। আলাপ হল অশোক ঘোষ নামে এক প্রবীণ ব্যক্তির সঙ্গে। জামশেদপুরের ভোটের হালচালে তাঁর যত না আগ্রহ, বাংলা নিয়ে তার দ্বিগুণ। এখানে বাংলা ভাষার কী অবস্থা? আক্ষেপের সুরেই বলে উঠলেন, ‘ও মৃতপ্রায়। অবলুপ্ত হতে বসেছে আমাদের এই ভাষা। কত স্কুল ছিল! কিছু বন্ধ হয়েছে। কিছু বদলেছে হিন্দি মাধ্যমে।’ কেন এই হাল? কিছুটা মেজাজ নিয়েই বললেন, ‘সরকার বই দেবে না, শিক্ষক নিয়োগ করবে না, স্কুলগুলি চলবে কী করে? পরিকাঠামো ভেঙে পড়লে কোনও বাবা-মা কি বাচ্চাদের এই স্কুলে পাঠাবে? আমরা চুপ থেকে আরওই সর্বনাশ ডেকে এনেছি। এখানে দরকার ছিল মমতার মতো নেত্রীর। তাঁর লড়াকু মনোভাবের। তিনি যদি বিষয়টা একটু দেখেন, ভালো হয়।’ অশোকবাবুর সঙ্গে এই কথাবার্তা শুনে পাড়ার আর এক মাঝবয়সি ব্যক্তি নিজেই যোগ দিলেন। বললেন, ‘সরকার নিজে থেকে কোনও উদ্যোগ নেয়নি। তাই আজ এই পরিস্থিতি। আমরাও জনমত তৈরি করতে ব্যর্থ হয়েছি। ফলে কী করে এই ভাষাকে বাঁচাব?’ আশিস মজুমদার নামে এক প্রবীণ ব্যক্তির কথায়, ‘এখানে বাংলা ভাষা নিয়ে লড়াই করার জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো কেউ থাকলে আজ এই অবস্থা হতো না।’
বেঙ্গল ক্লাবের পদাধিকারী তথা ব্যবসায়ী সত্যদেব শিকদারও এই হালের জন্য বিজেপি সরকারের সদিচ্ছার অভাবকেই দায়ী করেছেন। রাজ্যে ওড়িয়া স্কুলগুলি দিব্যি চললেও কেন বাংলার দিকে নজর দেওয়া হয়নি, প্রশ্ন তাঁর। ‘স্কুলগুলির পরিকাঠামো খারাপ। পুরনো স্কুলগুলি রুগ্ন অবস্থায়। আগামী প্রজন্ম বাংলা শিখতেই পারবে না... এটাই আক্ষেপ।’ চাইবাসার ব্যবসায়ী হীরেন বাগদির কথায়, ‘দীর্ঘদিন ধরেই আছি। ছেলে-মেয়েদের বাংলা শেখাতে পারি না। স্কুলে হিন্দি নিয়ে পড়তে হয়। কারণ, বাংলার বই নেই।’
এখন ভোটের মরশুম। বাংলা ভাষার সুদিন ফেরাতে রাজনৈতিক দলগুলি কী করছে? ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার মুখপাত্র সুপ্রিয় ভট্টাচার্যের কথায়, ‘বাংলা আমাদের প্রচারের একটা প্রধান ইস্যু। জিতলে অবশ্যই এ নিয়ে কাজ করব।’ চাইবাসার কংগ্রেসের মুখপাত্র জিতেন্দ্রনাথ ওঝাও এই অবস্থার জন্য বিজেপিকে দায়ী করে বাংলা ভাষাকে আগের স্থানে ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিলেন। বিজেপির অবশ্য এ নিয়ে কোনও হেলদোল নেই। যুব মোর্চার সহ সভাপতি প্রতাপ কাটিয়ার দায়সারাভাবে জানিয়ে দিলেন, ‘এটা হওয়া উচিত ছিল না। দেখব আমরা কী করা যায়।’
গলদটা আসলে মানসিকতার। প্রচারে বাংলা নিয়ে কথা উঠবে। বাঙালি ভোট টানার চেষ্টা হবে ইভিএমে। কিন্তু এখানকার বাসিন্দারাই জানেন, ২৩ তারিখের পর পুনর্মুষিকভব। আর বিজেপি যদি ক্ষমতায় ফেরে, তাহলে তো আরও। বাঙালি পরিচয়টাই যে ফিকে হতে বসেছে। কয়েক প্রজন্ম পর ভোট এলে আর হয়তো কেউ বলবে না, বাঙালির শহর।