সঠিক বন্ধু নির্বাচন আবশ্যক। কর্মরতদের ক্ষেত্রে শুভ। কর্মক্ষেত্রে বদলির কোনও সম্ভাবনা এই মুহূর্তে নেই। শেয়ার ... বিশদ
অবাক করার মতো ঘটনা বটে। কিন্তু এর নেপথ্যেও একটা দারুণ কারণ রয়েছে। বাজারের ব্যবসায়ীদের সাফ বক্তব্য, ভোটের হার এখানে ভীষণ কম। সেই হার বাড়াতেই এই বেনজির অফার। বাজারের অন্তত ৩০টির বেশি দোকান কিন্তু ইতিমধ্যে এই ছাড় দেওয়ার কথা ঘোষণা করে দিয়েছে। আসলে জামশেদপুর শহরের একটা বড় অংশই বাজারহাট। যার মধ্যে সাকচিই সবচেয়ে জনপ্রিয় এলাকা। আশপাশের কদমা, ম্যাঙ্গো বা বারাদওয়ারি শহরের থেকে খানিকটা দূর হলেও সাকচিকে ঘিরেই কিন্তু মানুষজনের উন্মাদনা। এই জায়গাটির সঙ্গে কলকাতার চাঁদনি চক কিংবা নিউ মার্কেটের অনেকটা মিল খুঁজে পাওয়া যায়। স্টিল কারখানাকে ঘিরে তৈরি হওয়া এই উপনগরী ক্রমশ ডানা মেললেও গণতন্ত্রের উৎসব পালনে অনীহা জামশেদপুরবাসীদের। যার প্রভাব সার্বিক ভোটদানে গিয়ে পড়ে। কোনও ভোটে ৬২ আবার কোনও নির্বাচনে মেরে কেটে ৬৬ শতাংশ ভোট পড়েছে। ভোটের এই হার বাড়াতে তাই এগিয়ে এসেছেন এলাকারই বাসিন্দারা। কেনাকাটির উপর ছাড় ঘোষণা করে সেই কাজ হাসিল করতে চাইছেন তাঁরা। এতে সায় রয়েছে স্থানীয় প্রশাসনেরও। সাকচি বাজারে কমপক্ষে শ’খানেক দোকান হবেই। সবাই না হলেও একটা বড় অংশই এগিয়ে এসেছে দেশের মধ্যে ভোটদানের হারে জামশেদপুরকে উপরের দিকে রাখতে। তাই যার যেমন ব্যবসা, তিনি তার উপরই ছাড়ের ঘোষণা করে দিয়েছেন।
কথা হচ্ছিল এক মোবাইল দোকানের মালিক বাসু আগরওয়ালের সঙ্গে। তাঁর স্পষ্ট কথা, ‘আমাদের লক্ষ্য ভোটদান বাড়ানো। আমি যেমন ২০০টি হেডফোন দেওয়ার কথা ঠিক করেছি। ভোটের দিন আমার দোকানে ক্যুইজ প্রতিযোগিতা করব। যে জিতবে, তাঁকে হেডফোন দেওয়া হবে। তাছাড়া সেলফি জোনও থাকবে। শুধু তাই নয়, ভোট শেষের আগে কত শতাংশ ভোট পড়ল, তা অনুমান করে বলতে হবে। মোট ভোটের হারের কাছাকাছি এলেই পুরস্কার।’ ছোট ঘুপচি ঘরে কুর্তি-লেগিনসের দোকান চালান রাজু শ্রীবাস্তব। এই উদ্যোগে তিনিও শামিল। আঙুলে ভোটের কালি দেখালেই যে কোনও কেনাকাটাতেই ১০ শতাংশ ছাড় দেওয়া হবে। ছাড়ের হারে পিছিয়ে নেই এলাকার ইলেক্ট্রনিক্সের দোকানের মালিক হীরেন পণ্ডেও। তিনি আবার পাখার উপর ৩০ শতাংশ ছাড় দেওয়ার কথা ঠিক করেছেন। পাশাপাশি এলইডির উপর ১০ শতাংশ ছাড়।
চমকের এখানেই শেষ নয়। ফাস্ট ফুড দোকানের মালিক পাপ্পু সিং যেমন বিনামূল্যে ধোসা এবং আইসক্রিম খাওয়াবেন বলে ঠিক করেছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘আমরা চাই ভোটের হার বাড়ুক। সারা দেশে যেখানে বেশিরভাগ জায়গাতেই ন্যূনতম ৭৫ শতাংশ ভোটের হার, সেখানে জামশেদপুর ৬০-এর গণ্ডি পেরতেই পারছে না। তাই এসব করে মানুষকে ঘর থেকে বের করে বুথমুখো করতে চাইছি। আমার এখানে সকালে এলে ধোসা দেওয়া হবে। আর বাচ্চাদের জন্য থাকবে আইসক্রিম। প্রাপ্তবয়স্কদের অবশ্যই আঙুলে ভোটের কালি দেখাতে হবে। ’
ব্যবসায়ীদের এই উদ্যোগকে কিন্তু একপ্রকার বিপ্লব বলেই মনে করছেন এলাকাবাসী। ভোটের হার কম থাকার কারণ অবশ্য অনেক। সাকচি হাইস্কুলের এক শিক্ষকের কথায়, ‘বহু মানুষই ভোটের সময় বাইরে চলে যান। আবার ম্যাঙ্গো মোড়ের ফলের ব্যবসায়ী মনোজ দুবের কথায় প্রচারের অভাব। মানুষ ততটা সচেতন নন।’ এই লোকসভার অন্তর্গত পাঁচটি বিধানসভার মধ্যেই তিনটিই গ্রামীণ এলাকায়। গণতন্ত্রের সেরা উৎসবে সব মানুষ যাতে অংশ গ্রহণ করেন, তার জন্য ব্যবসায়ীরা যে উদ্যোগ নিয়েছেন, তা গোটা দেশে দৃষ্টান্ত হয়েই থাকবে বলেই মত ওয়াকিবহাল মহলের।