বিদ্যার্থীদের বেশি শ্রম দিয়ে পঠন-পাঠন করা দরকার। কোনও সংস্থায় যুক্ত হলে বিদ্যার বিস্তৃতি ঘটবে। কর্মপ্রার্থীরা ... বিশদ
জলপাইগুড়ি জেলার মাল, নাগরাকাটা ও ধূপগুড়ি বিধানসভা কেন্দ্রের বড় একটি অংশ চা বাগান অধ্যুষিত। এছাড়াও রাজগঞ্জ বিধানসভার মধ্যেও কিছু চা বাগান রয়েছে। এই সব চা বাগানে বহু চা শ্রমিক রয়েছেন। রাজবংশী ও আদিবাসী ভোট এখানকার যে কোনও নির্বাচনে একটা বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়ায়। তাই সমস্ত রাজনৈতিক দল তাঁদের কথা মাথায় রেখে রাজনৈতিক লড়াইয়ের কৌশল ঠিক করে।
গত বিধানসভা নির্বাচনে জেলার সাতটি আসনের মধ্যে শুধুমাত্র জলপাইগুড়ি আসনটিতে কংগ্রেস জয়ী হয়েছিল। বাকি ছ’টি আসন পায় তৃণমূল কংগ্রেস। কিন্তু লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির উত্থান তৃণমূলকে প্রবল চাপে ফেলে দিয়েছে। লোকসভা ভোটে জেতার পর থেকেই বিজেপি জেলায় তাদের সংগঠনের দিকে নজর দিয়েছে। বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পকে তুলে ধরার পাশাপাশি শাসক দলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস ও আর্থিক অভিযোগগুলিকে তারা সামনে আনছে।
কোভিড পরিস্থিতিতে কংগ্রেস বিধায়কের দীর্ঘ অনুপস্থিতি এলাকায় ক্ষোভ বাড়িয়েছে। জলপাইগুড়ির কংগ্রেস বিধায়ক এবার ভোটে দাঁড়াবেন না বলে আগেই জানিয়ে দিয়েছেন। তাই অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য কংগ্রেসকে এবার একটা গ্রহণযোগ্য মুখ খুঁজতে হচ্ছে।
কিছু দিন আগে জলপাইগুড়ি পুরসভার চেয়ারম্যান মোহন বসুকে সরিয়ে সেখানে পাপিয়া পালকে প্রশাসক হিসাবে বসানোর পর জেলা সভাপতি কিষান কল্যাণী ও মোহন বসুর মধ্যে দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসে। তাতে অস্বস্তিতে পড়েছে শাসক দল। প্রচুর উন্নয়ন সত্ত্বেও শাসক দলের সাফল্য পাওয়ার পিছনে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বই সব চেয়ে বাধা।
এক সময় জলপাইগুড়ি জেলা ছিল বামেদের শক্তঘাঁটি। তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরেও এই জেলায় কংগ্রেসের দীর্ঘদিন প্রভাব ছিল। সেই জেলায় ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য বাম-কংগ্রেস জোট দীর্ঘ দিন ধরেই একের পর যৌথ কর্মসূচি নিচ্ছে। বিধানসভা নির্বাচনে তারা জোট করে এগতে চাইছে। উভয় দলের কর্মীদের মধ্যে রসায়ন যদি ঠিকঠাক কাজ করে, তাহলে বেশ কিছু আসনে অঘটন ঘটার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে বলে রাজনৈতিক মহল মনে করছে।
জলপাইগুড়ি জেলায় চা শ্রমিকদের ভোট একটা বড় ফ্যাক্টর। রাজ্য সরকার বন্ধ থাকা চা বাগান খুলেছে, চা শ্রমিকদের জন্য চা সুন্দরী প্রকল্পে নতুন বাড়ি দিচ্ছে। এসবই এবারের ভোটে বাড়তি শক্তি জোগাবে শাসকদলকে। বহু নেপালি ভাষাভাষি মানুষের বসবাস এই জেলায়। বিমল গুরুং তৃণমূল কংগ্রেসকে সমর্থন করায় সমীকরণ বদলে যাওয়ার প্রবল সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
গেরুয়া শিবিরও চা বলয়ের নিজেদের প্রভাব বিস্তারের আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে। সেই সঙ্গে রাজগঞ্জকে তারা মডেল ভিলেজ হিসেবে গড়ে তোলার কথা বলছে। এক সময় চা বলয়ে বামেদেরও দুর্ভেদ্য সংগঠন ছিল। কিন্তু এখন সেখানে তাদের সেই রকম শক্তিশালী সংগঠন না থাকলেও কিছু কিছু এলাকায় প্রভাব রয়েছে। তারাও বিধানসভা ভোটের আগে নিজেদের সংগঠনকে গোছাতে শুরু করেছে। ফলে কিছু আসনে ত্রিমুখী লড়াই হতে পারে।
রাজ্যের অন্যান্য জেলার মতো স্বাস্থ্যসাথী, দুয়ারে সরকার, পাড়ায় সমাধানের প্রভাব এই জেলাতেও পড়েছে। হাজার হাজার বয়স্কের নাম বার্ধক্য ভাতা ও বিধবা ভাতা প্রাপকের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। উন্নয়নের পাশাপাশি ‘দুয়ারে সরকার’ প্রকল্পকে কাজে লাগিয়ে বাজিমাত করতে চাইছে শাসকদল।