নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: করোনা পরিস্থিতির জেরে এবার আর ধর্মতলায় ২১ জুলাইয়ের সমাবেশ হচ্ছে না। শুক্রবার দলীয় বৈঠকে এই সিদ্ধান্তেই সিলমোহর দিয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবার বুথে বুথে পালন করা হবে শহিদ দিবস। সেইসঙ্গে দলকে আন্দোলনমুখী করে তুলতে আগামী ৬ থেকে ১৩ জুলাই পর্যন্ত বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। আর তৃণমূল নেত্রীর স্পষ্ট বার্তা, এখন সাংসদরা দিল্লি যাবেন না। চীন এবং নির্বাচন কমিশন সংক্রান্ত বিষয়ে কোনও মন্তব্য করা যাবে না। এ বিষয়ে যা বলার তিনিই বলবেন।
২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের আগে‌ এবারই শেষ ২১ জুলাইয়ের সভা। বিধানসভা নির্বাচনের প্রাকপর্বে যা রাজনৈতিক দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু করোনা মোকাবিলায় জনসমাগমভিত্তিক রাজনৈতিক কর্মসূচি বন্ধ রাখা হয়েছে। পরিস্থিতির নিরিখে এবার ভার্চুয়াল সভার পথেই হাঁটার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তৃণমূল। তবে বিজেপির অনুকরণ নয়। নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গীতে এই দিনটি পালন করবে রাজ্যের শাসক দল। তার রূপরেখাও তৈরি করে দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী। ওইদিন রাজ্যের সব বুথে বেলা একটা থেকে দুটো পর্যন্ত শহিদ বেদিতেই শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে। এরজন্য বুথওয়াড়ি তিনজন করে কর্মীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বুথভিত্তিক জমায়েত হবে ২৫ থেকে ৩০ জনের মতো। ধর্মতলাতেও শহিদ বেদি করে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করবেন তৃণমূল নেতৃত্ব। এরপর দুপুর দু’টোর সময় কলকাতার কোনও একটি জায়গা থেকে বক্তব্য রাখবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নেটিজেন পরিভাষায় যা ভার্চুয়াল র‌্যালি। আর সেই বক্তব্য সব বুথের কর্মীরা যাতে শুনতে পান, তার সরাসরি সম্প্রচারের ব্যবস্থা করা হবে।
পাশাপাশি ৬ জুলাই পেট্রল-ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে প্রতিটি ব্লকে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সরব হবে তৃণমূল। ৭ জুলাই রেল বেসরকারিকরণের প্রতিবাদে স্টেশনে স্টেশনে অবস্থান-বিক্ষোভের কর্মসূচি হবে। ৮ জুলাই তৃণমূলের সমস্ত জনপ্রতিনিধি, নেতৃত্ব বাড়ির সামনে প্ল্যাকার্ড হাতে বিক্ষোভ দেখাবেন। ৯ জুলাই কোল ইন্ডিয়া বেসরকারিকরণের প্রতিবাদে বিক্ষোভ কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। সমবায় ব্যাঙ্কে কেন্দ্রের হস্তক্ষেপের প্রতিবাদ জানিয়ে ১০ জুলাই কর্মসূচি রয়েছে তৃণমূলের। ১১-১৩ জুলাই উন্নয়ন নিয়ে রাজ্য সরকারের যাবতীয় সাফল্য তুলে ধরা হবে জনতার আদালতে।
বিধায়কদের আরও বেশি করে দলের কর্মসূচিতে যোগ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন মমতা। দলীয় সূত্রে খবর, এদিন তৃণমূল নেত্রী বলেছেন, প্রচারে খামতি রয়েছে। রাজ্য সরকারের কাজকে মানুষের কাছে তুলে ধরতে হবে। কন্যাশ্রীর টাকা পাচ্ছে বাংলার মেয়েরা। অথচ বিজেপি সেটা বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও-এর নাম করে তুলে ধরছে। ঝাড়গ্রামে এরকম ঘটনা ঘটেছে। এর জবাব দিতে হবে বিধায়কদের। প্রত্যেক বিধায়ককে তাঁর নিজের এলাকায় কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সরব হতে হবে। দলের সব কর্মসূচিতে থাকতে হবে। আর ভোটে জিততেই হবে। বেশ কয়েকজন নেতা ঘরে বসে রয়েছেন বলে তাঁদের সতর্ক করে দেন মমতা।
এদিন দলের কোষাধ্যক্ষ  হিসেবে সাংসদ শুভাশিস চক্রবর্তীকে দায়িত্ব দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী। এর আগে ওই পদে ছিলেন প্রয়াত বিধায়ক তমোনাশ ঘোষ।