সংবাদদাতা, তারকেশ্বর: প্রকাশ্যে না করে গোপনে, অস্বচ্ছভাবে বিলি করা হয়েছে দোকান। নতুন বাস স্ট্যান্ডে ১ কোটি ৪০ লক্ষ টাকায় নবনির্মিত মার্কেট কমপ্লেক্সের স্টল বিলি নিয়ে পুরসভার প্রশাসনিক বোর্ডের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ তুলল কংগ্রেস। যদিও এমন অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে দাবি করেছে তৃণমূল। তারকেশ্বর টাউন কংগ্রেসের সভাপতি শৈল ঘোষের অভিযোগ, পুরসভার নতুন বাস স্ট্যান্ডে ১৪টি দোকানঘর সহ দ্বিতল ভবন নির্মাণ হচ্ছে। কিন্তু প্রকাশ্যে নিলাম না করেই দোকানঘরগুলি বিলি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুরসভায় তৃণমূলের বোর্ড। কোনওরকম প্রচার ছাড়া ই-অকশনের মাধ্যমে তা বিলি করে তৃণমূল স্বজনপোষণ করছে। নবনির্মিত এই ১৪টি দোকনঘর ছাড়াও ইতিমধ্যে নির্মিত দোকান বিলি নিয়েও তিনি অভিযোগ তুলেছেন। তাঁর মন্তব্য, বাস স্ট্যান্ডের দক্ষিণ দিকে শৌচালয় সংলগ্ন পৃথক ভবনে প্রথম ৬টি দোকানঘর পুর প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য সহ বর্তমান প্রশাসকের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের জন্য রেখে বাকি ৮টি ঘর নিলাম করা হয়েছে। এছাড়া বাস স্ট্যান্ডের বলাই শেঠ মার্কেটের সমস্ত দোকানঘর প্রোমোটারকে দিয়ে কাট মানি নিয়েছেন পুর প্রশাসক। গরিব ফল ব্যবসায়ীদের জন্য স্বল্পমূল্যে দোকানঘর দেওয়ার পরিবর্তে লক্ষ লক্ষ টাকায় তা বিক্রি হয়েছে। নামে-বেনামে দোকান হস্তান্তর হয়েছে। কাগজপত্রে রয়েছে অসঙ্গতি। বেশিরভাগ দোকানদার এখনও বৈধ কাগজপত্র পাননি। তাছাড়া পরিকল্পনাহীনভাবে তৈরি হয়েছে বিল্ডিং। বর্তমানে ফল ব্যবসায়ীরা বাধ্য হয়ে দোকান ছেড়ে রাস্তায় ব্যবসা করতে শুরু করেছেন। ফলে দোকানঘর তৈরি করে মুনাফা লুটেছেন শাসকদলের নেতারা। আর ব্যবসায়ীরা আগের মতোই ফুটপাতে ব্যবসা করছেন। অবিলম্বে স্বচ্ছতা বজায় রেখে দোকানঘর বণ্টন করা হোক। তারকেশ্বর পুরসভার এগজিকিউটিভ অফিসার, মহকুমা শাসক সহ একাধিক জায়গায় এই অভিযোগ জানিয়েছেন শৈল ঘোষ।
এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বামফ্রন্টের প্রাক্তন এক কাউন্সিলার বলেন, এলাকার মানুষ বাস স্ট্যান্ড তৈরির জন্য স্বল্পমূল্যে জমি দিয়েছিল। ভাবনা ছিল, তারকেশ্বর থেকে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে বাস যোগাযোগ হলে উন্নতি হবে এলাকার। তৃণমূল কংগ্রেসের আমলে বাসস্ট্যান্ডে একাধিক ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান তৈরি করে জায়গাটি নষ্ট করা হয়েছে। নিজেদের স্বার্থে বহুমূল্য জায়গার রূপ পরিবর্তন করা হচ্ছে। বাসস্ট্যান্ডের জায়গায় দশতলা বিল্ডিং তৈরি করা হয়েছে। যা থেকে পুরসভার এখনও পর্যন্ত কোনও লাভ হয়নি। মুনাফা লুটছেন নেতারা। এদিকে, নির্মাণ সংস্থার সঙ্গে গণ্ডগোলের জেরে অনেকেই এখনও ফ্ল্যাট নিজের নামে পাননি। প্রতিটি জায়গায় অস্বচ্ছতা আর দুর্নীতিতে ভরে গিয়েছে।
বিরোধীদের কথা নস্যাৎ করে তারকেশ্বর পুরসভার প্রশাসনিক বোর্ডের চেয়ারম্যান স্বপন সামন্ত বলেন, কংগ্রেস ও অন্যান্যদের মন্তব্য সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। পুরসভার সমস্ত কাজ স্বচ্ছতা বজায় রেখে করা হয়েছে। পুরসভা থেকে দোকানঘরগুলির জন্য প্রাথমিকভাবে ১৮ লক্ষ টাকা দাম রাখা হয়েছিল। কিন্তু নিলামে প্রতিটি দোকানের দাম উঠেছে ২৫ লক্ষ টাকা। সাধারণ মানুষ বিষয়টি জানে। এই ধরনের মিথ্যা অভিযোগে তৃণমূলকে ভোটের সময় বিপর্যস্ত করার চেষ্টা সাধারণ মানুষ প্রতিরোধ করবে।