শিক্ষার জন্য দূরে কোথাও যেতে পারেন। প্রেম-প্রণয়ে নতুন যোগাযোগ হবে। বিবাহের কথাবার্তাও পাকা হতে পারে। ... বিশদ
গবেষণাটি পুরোপুরি পোল্যান্ড সরকারের সাহায্যপ্রাপ্ত। সেদেশের ন্যাশনাল সায়েন্স সেন্টার ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৫৫ লক্ষ টাকা দিয়েছিল পোলিশ অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সকে। আবার পোলিশ অ্যাকাডেমি মউ স্বাক্ষর করেছিল বনগাঁর দীনবন্ধু মহাবিদ্যালয়ের সঙ্গে। গোটা রাজ্যে কলেজ স্তরে এমন মউ বিরল। এই কলেজের অধ্যক্ষ বিশ্বজিৎ ঘোষ এবং নৃবিজ্ঞানের অধ্যাপক (অ্যাসোসিয়েট) রাজা চক্রবর্তী পোলিশ অ্যাকাডেমির সঙ্গে ২০১৭ সালে এই মউ স্বাক্ষর করেন। বিশ্বজিৎবাবু বলেন, এরকম জার্নালে গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হওয়ায় মউ পূর্ণতা পেল। এটা আমাদের কলেজের পক্ষেও গৌরবের বিষয়।
রাজা চক্রবর্তী জানান, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে স্ট্রেস বা মানসিক চাপের শিকার মায়ের গর্ভস্থ শিশুদের এবং সদ্যোজাত থেকে একবছর পর্যন্ত বয়সি শিশুদের প্রভাব নিয়েই ছিল গবেষণা। এর জন্য বেছে নেওয়া হয়েছিল দক্ষিণ ২৪ পরগনার সাতজেলিয়া এবং কুমিরমারির মতো প্রত্যন্ত দু’টি দ্বীপকে বেছে নেওয়া হয়। সাতজেলিয়ার ২২টি এবং কুমিরমারির ১৩টি স্কুলের পড়ুয়াদের বেছে নেওয়া হয়, যারা ২০০৯ সালের ২৫ মে, আয়লার দিন গর্ভস্থ ছিল। আর এমন কিছু শিশুকে বেছে নেওয়া হয়, যাদের বয়স ওই সময় ছিল এক বছরের কম। মায়েদের বয়স ২৩ থেকে ৪৭ বছরের মধ্যে। পারিবারিক গড় আয় ১৩০০ টাকার মধ্যে। নমুনা সংগ্রহের সময় শিশুদের বয়স এখন আট থেকে ১০ বছর হয়ে গিয়েছিল। আয়লার প্রভাব তেমন পড়েনি, এমন এলাকারা একই বয়সি এবং প্রায় একই পারিবারিক আয়ের সমসংখ্যক শিশুদের মধ্যেও সমীক্ষা চালানো হয়। এর জন্য বেছে নেওয়া হয়েছিল বনগাঁর গোপালনগর এবং আকাইপুর অঞ্চলকে। উচ্চতা এবং ওজনের পারস্পরিক হিসেবের সূচক বডি মাস ইনডেক্স (বিএমআই) এবং কনুইয়ের নীচ থেকে হাতের দৈর্ঘের পরিমাপ (এমইউএসি) নেওয়া হয়। এগুলি থেকে কোনও শিশু অপুষ্টির শিকার বা দুর্বল কি না তা বোঝা যায়। দেখা গিয়েছে, গোপালনগর এবং আকাইপুরের চেয়ে সাতজেলিয়া এবং কুমিরমারির বাচ্চারা সেসব সূচকে অনেক পিছিয়ে। ওই দু’টি দ্বীপ আয়লার সময় ভেসে গিয়েছিল। মূল ভূখণ্ড তো বটেই, অন্যান্য বড় দ্বীপ থেকেও সেখানে যাওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে। ওই অঞ্চলের মহিলারা চোখের সামনে গবাদি পশু এবং আত্মীয় পরিজনদের মারা পড়তে দেখেছেন। ফলে তাঁদের মানসিক চাপ অনেকটাই বেশি ছিল। তার ফলেই এই ফারাক। পরবর্তীকালে বুলবুল, উম-পুন এবং করোনার মতো প্রাকৃতিক বিপর্যয় এবং বিশ্বব্যাপী মহামারীও একইরকম প্রভাব ফেলে থাকতে পারে বলে গবেষকদের আশঙ্কা। শুধু তাই নয়, ভোটে সন্ত্রাস হয় এমন এলাকার গর্ভবতী মহিলাদেরও সাবধানে থাকতে হবে। যতটটা সম্ভব চাপমুক্ত থাকতে হবে। এই গবেষণায় রাজা চক্রবর্তী ছাড়াও ছিলেন নাতালিয়া নোভাক, আলেকজান্দ্রা গোমিউলা এবং স্লাওমির কোজিয়েল। কানাডার কিউবেক শহরে তুষার ঝড় (১৯৯৮), আমেরিকার আইওয়ার এবং অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ডের বন্যার পরেও একই উদ্দেশ্যে গবেষণা হয়েছিল।