মেষ: পঠন-পাঠনে আগ্রহ বাড়লেও মন চঞ্চল থাকবে। কোনও হিতৈষী দ্বারা উপকৃত হবার সম্ভাবনা। ব্যবসায় যুক্ত ... বিশদ
সারাদিনে একবার। সময় মাত্র দু’মিনিট। এর মধ্যেই বাড়ির সব খবরাখবর নিতে হবে। এক সেকেন্ডও তখন মহামূল্যবান। হাতছাড়া করতে চান না কেউই। মনে মনে প্রশ্ন গুছিয়ে নেন ওঁরা। এবার শুধু অপেক্ষা। বেডের কাছে কখন এসে দিদিরা বলবেন—‘দিদা, এই দেখ, তোমার মেয়ে এসেছে! আর চিন্তা কীসের? মন খুলে কথা বল’। ‘আঙ্কেল, দেখুন, এই যে আপনার ছেলে! আমি যখন বললাম, সুস্থ হয়ে যাবেন, বিশ্বাস হল না! দেখুন, এখন আপনার ছেলেও একই কথা বলছে। এবার বিশ্বাস হল তো?’ প্রবল শ্বাসকষ্ট নিয়েও মুখে হাসি ফুটল আঙ্কেলের।
টালিগঞ্জ এমআর বাঙ্গুর কোভিড হাসপাতালে এমন বহু ‘আঙ্কেল’, ‘দিদা’র মুখে হাসি ফোটানোই ওঁদের কাজ। ওঁরা বলতে ইপ্সিতা করাতি, লি চট্টোপাধ্যায়, লীনা পুরকায়েত এবং কুইরি সেন। কোভিড-যুদ্ধের প্রথম সারির সৈনিক। চারকন্যাই স্টাফনার্স। করোনা রোগীদের মানসিক শক্তি জোগাতে পরিবারের সঙ্গে যোগসূত্রের দায়িত্বে ইপ্সিতা-লীনারা। তাই হাসপাতালে ওঁদের এখন একটাই পরিচয় ‘ভিডিও কলিং দিদি’।
কেন এমন উদ্যোগ? বাঙ্গুরের সুপার ডাঃ শিশির নস্করের কথায়, ‘করোনাকে হারাতে হলে মানসিক শক্তি চাই। পরিবারের লোকের সঙ্গে দেখা কিংবা কথা বললে রোগীরা অনেক বেশি চাঙ্গা হন। রোগের সঙ্গে লড়াইয়ে তাঁরা ভরসা খুঁজে পান। সেটা সরাসরি হলে ভালো হতো। কিন্তু করোনা রোগের ক্ষেত্রে সেই সম্ভাবনা নেই। তাই এভাবে ‘ভিডিও কলিং’য়ের ব্যবস্থা। বাকি কাজটা আমাদের চিকিৎসকরাই করেন।’
বাঙ্গুরের সুপার স্পেশালিটি ও পুরনো হাসপাতাল, এই দুয়ে মিলে প্রায় ৩০০ জন রোগী ভর্তি। চারকন্যার কাজ তাঁদের প্রিয়জনের সঙ্গে প্রিয়জনকে মেলানোর। মাস তিনেক হল বাঙ্গুরে চালু হয়েছে এই ব্যবস্থা। সুপার স্পেশালিটিতে দুপুর তিনটে থেকে বিকেল সাড়ে পাঁচটা। পুরনো হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে বিকেল সাড়ে পাঁচটা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা পর্যন্ত চলে অনলাইন দেখা-সাক্ষাৎ। ‘ভিডিও কলিং’য়ে মন উজাড় করে রোগীরা কথা বলেন বাড়ির লোকের সঙ্গে। ভালো লাগা, খারাপ লাগার কত কথা। সংসারের আরও কত কিছু খুঁটিনাটি। বাড়ির খুদে সদস্যদের খোঁজখবর নেওয়া। কিন্তু এত কথা কি আর মাত্র দু’মিনিটে শেষ হয়?
ইপ্সিতা বললেন, ‘সেটা আমরা বুঝতে পারি। তাই আমাদের ডিউটি তিনটে থেকে শুরু হলেও চলে যাই দেড়টা নাগাদ। দুটো-আড়াইটে থেকে কাজ শুরু করে দিই। সময় পেরলেও কিছু বলি না। যেমন, কলকাতায় এক রোগিণীর বাড়ি। মেয়ে থাকেন বেঙ্গালুরুতে। ওঁদের একটু সময় না দিলে হয়, বলুন!’ ইপ্সিতা, লি’দের উৎসাহ জোগাচ্ছেন নার্সিং সুপার জয়া মণ্ডল। লি বলছিলেন, ‘আমাদের কাজ শুধু যোগাযোগ করিয়েই শেষ হয় না। বহু বয়স্ক করোনা রোগীকে প্রিয়জনদের বলতে শোনা যায়, ‘বুঝলি বাবা, বোধহয় আর বাঁচব না। তোদের আর দেখতে পাব না।’ এই হতাশা ঝেড়ে ফেলতে হবে... এটাই বোঝাই তাঁদের।। ‘মৃত্যুঞ্জয়ী’দের কাহিনী তুলে ধরি তাঁদের কাছে।’ অর্থাৎ ‘ভিডিও কলিং’য়েও কেস হিস্ট্রি... এই অভিনব ব্যবস্থারও রূপকার যে ‘ভিডিও কলিং দিদিরা’ই!