বিশ্বজিৎ দাস, কলকাতা, ১৯ জুন জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে বৈঠকে খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ডাক্তারদের অভিযোগ শুনে সহমত পোষণ করেছিলেন। উপস্থিত স্বাস্থ্য দপ্তরের কর্তাদের সামনে উষ্মা প্রকাশ করে বলেছিলেন, হাসপাতালে কত যন্ত্র বাক্সবন্দি হয়ে পড়েই থাকছে। খোলাই হচ্ছে না। এভাবে চলতে চলতে একদিন যন্ত্রগুলি খারাপই হয়ে যাবে। মুখ্যমন্ত্রীর খবরের সূত্র যে মোটেই ভুল নয়, ফের প্রমাণিত হল। রাজ্যের ১২টি গুরুত্বপূর্ণ সুপারস্পেশালিটি হাসপাতালের প্রায় ১৯ ধরনের যন্ত্র মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গিয়েছে। কোনওটা তিন মাস, কোনওটা ছ’মাস, কোনওটা আবার তারও বেশি সময় ধরে মেয়াদোত্তীর্ণ। বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার মহল সূত্রের খবর, এক-একটি সুপারস্পেশালিটি হাসপাতালে কমবেশি ৭০ লক্ষ টাকার দামি যন্ত্র মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে পড়ে। মোট মেয়াদোত্তীর্ণ যন্ত্রের দাম এবং জিএসটি’র হিসেব ধরলে কমপক্ষে ১০ কোটি টাকার! এই হাসপাতালগুলি হল ছাতনা, ওন্দা, গঙ্গারামপুর, ইসলামপুর, শালবনী, ডেবরা, নন্দীগ্রাম, কাকদ্বীপ, মেটিয়াবুরুজ, সাগরদীঘি, বোলপুর এবং ফালাকাটা সুপারস্পেশালিটি হাসপাতাল। সব ক’টিই ৩০০ শয্যার। রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তরের একাধিক শীর্ষ সূত্রে এ খবর জানা গিয়েছে।
এও জানা গিয়েছে, বেশ কয়েকটি হাসপাতালে এই মেয়াদোত্তীর্ণ যন্ত্রগুলিই চালানো হচ্ছে এবং সেই রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে মানুষের চিকিৎসাও চলছে। শনিবার এ বিষয়ে রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তরের আওতাধীন ওয়েস্ট বেঙ্গল মেডিক্যাল সার্ভিস কর্পোরেশনের ম্যানেজিং ডিরেক্টর মহুয়া বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আমরা ওয়াকিবহাল। দেখা হচ্ছে।
স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রের খবর, যন্ত্রপাতির ক্ষেত্রে মেয়াদোত্তীর্ণ বলতে বোঝায় এএমসি, সিএমসি, পিএম এবং ক্যালিব্রেশন আপডেট না থাকা। এএমসি অর্থাৎ অ্যানুয়াল মেনটেনেন্স কনট্রাক্ট। এই চুক্তি হয় বাৎসরিক। যন্ত্র তার মধ্যে খারাপ হলে চুক্তিবদ্ধ সংস্থা সেটি সারাই করে দেয়। সিএমসি মানে কম্প্রিহেনসিভ মেনটেনেন্স কনট্রাক্ট। এই চুক্তি হয় কমবেশি পাঁচ বছরের। চুক্তির বৈশিষ্ট্য হল, চুক্তিবদ্ধ হলে শুধু মেরামতিই নয়, গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশও প্রয়োজনে পাল্টে দেওয়া হয়। পিএম-এর অর্থ প্রিভেনটিভ মেনটেনেন্স। বছরে দু’বার এই পিএম হয়। যন্ত্রের গুণগত মান ঠিক আছে কি না, তা যাচাই করা হয় সেই চুক্তিতে। এবং স্পর্শকাতর যন্ত্রগুলির মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ক্যালিব্রেশন হল যন্ত্রের কার্যকারিতা এবং সক্ষমতার বিষয় আপডেট থাকা। এই ক্যা঩লিব্রেশনের উপর নির্ভর করে যন্ত্রের রিপোর্টও। যা প্রত্যক্ষ-অপ্রত্যক্ষভাবে জড়িত মানুষের চিকিৎসা এবং জীবন-মৃত্যুর সঙ্গে।
এবার দেখা যাক, কোন কোন যন্ত্র মেয়াদোত্তীর্ণ এইসব হাসপাতালে? স্বাস্থ্য দপ্তরের শীর্ষ সূত্রের খবর, সেগুলি হল, ১. ৩০০ এমএ এক্স-রে উইথ রেডিওগ্রাফি অ্যান্ড ফ্লুরোস্কপি। ২. কালার ডপলার ৩. সিআর সিস্টেম ৪. প্রিন্টার. ৫. অবথালমোস্কোপ ডায়রেক্ট ৬. ট্রায়াল লেন্স সেটস উইথ ফ্রেমস ৭. অবথালমিক ডক্টর চেয়ার ৮. স্নেলেন চার্ট ড্রাম উইদ রিমোট ৯. রেডিয়ান্ট ওয়ার্মার উইদ বাস্সিনেট ১০. ফটোথেরাপি ইকুইপমেন্টস ১১. গ্লাইকোসাইলেটেড হেমোগ্লোবিনোমিটার ১২. ল্যাব ইনকিউবেটর ১৩. রোটার/শেকার ১৪. ক্লাশ ২ এ টু বায়োসেফটি ক্যাবিনেট ১৫. সেমি অটো অ্যানালাইজার বায়োকেম ১৬. হেমোগ্লোবিনোমিটার ১৭. ওয়েটিং মেশিন বেবি ১৮. রিসাসিটেশন কিট এবং অ্যানাসথেসিয়া ওয়ার্কস্টেশন উইদ ভেন্টিলেটর্স।
এছাড়াও এইসব হাসপাতালে আই অপারেটিং মাইক্রোস্কোপ এবং বায়োমেট্রি মেশিনের মতো গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রও মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার পথে। প্রথমটির মেয়াদ শেষ হচ্ছে এ বছর ১৩ ডিসেম্বরে। অন্যটি’র পরের বছর ১৪ এপ্রিলে। শুধু তাই নয়, এইসব সুপারস্পেশালিটি হাসপাতালের আরও ১২টি গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রের মেয়াদ রয়েছে আর মাত্র তিন মাসের একটু বেশি— এই ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত!
৯ এপ্রিল ওয়েস্টবেঙ্গল মেডিক্যাল সাভির্স কর্পোরেশনের এমডি মহুয়াদেবী গোটা বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তৎকালীন অন্যতম স্বাস্থ্যসচিব সুরেন্দ্র গুপ্ত, স্বাস্থ্যকর্তা তপনকান্তি রুদ্র এবং বর্তমান অতিরিক্ত মুখ্যসচিব (স্বাস্থ্য) রাজীব সিনহাকে ই-মেলও পাঠান।