বিদ্যায় সাফল্য ও হতাশা দুই-ই বর্তমান। নতুন প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠবে। মামলা-মোকদ্দমার কোনও পরিবেশ তৈরি ... বিশদ
বছর ঊনত্রিশের পৌলমী ভট্টাচার্য সান্যাল শুক্রবার ভর্তি হয়েছিলেন আলিপুরের ওই বেসরকারি হাসপাতালে। সেদিন বিকেলেই তিনি জন্ম দেন এক কন্যা সন্তানের। পৌলমীদেবীর স্বামী জয়ন্ত সান্যাল জানিয়েছেন, পৌলমী একেবারেই সুস্থ, স্বাভাবিক ছিল। পরিবারের সকলের সঙ্গে স্বাভাবিক কথাও বলেছিল। এমনকী রাত ১১টা ৫০ মিনিট পর্যন্ত হোয়াটসঅ্যাপেও অনলাইন ছিল সে। বন্ধুদের মেয়ে হওয়ার সুখবরও জানিয়েছিল সে নিজেই। আচমকাই হাসপাতাল থেকে ভোরে খবর আসে পৌলমীকে ভেন্টিলেশনে দেওয়া হয়েছে। অবস্থা আশঙ্কাজনক। সকালে হাসপাতালে গেলে জানতে পারি, আমার স্ত্রী মারা গিয়েছে। রাত ১২টার পর একাধিকবার অপারেশন থিয়েটারেও নিয়ে যাওয়া হয়েছিল ওকে। অনুমতি ছাড়াই অস্ত্রোপচার করা হয়। যে রাত ১১টা ৫০ পর্যন্ত ফোন ঘেঁটেছে, রাত ১২টার পর কী এমন হলো, যার পরিণতি একেবারে মৃত্যু!
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণেই মৃত্যু হয়েছে পৌলমীদেবীর। এমনকী তাঁর হিমোগ্লোবিন আচমকা ১০ থেকে নেমে ৪ হয়ে গিয়েছিল। ডেথ সার্টিফিকেটেও লেখা হয়েছে সে কথা। যদিও তা মানতে না চেয়ে জয়ন্তবাবু অভিযোগ জানিয়ে বলেন, আমি জানতে পারি রাতেই ওর সিজারের সেলাই থেকে রক্ত বেরচ্ছিল। রক্তক্ষরণের ফলেই হিমোগ্লোবিন অসম্ভব তাড়াতাড়ি নেমে যায়। শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। এরপর আমাদের কাউকে না জানিয়ে একাধিকবার অপারেশন করেন ডাক্তাররা। গোটা ঘটনায় স্থানীয় থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন পৌলমীদেবীর পরিবার। এই নিয়ে রাজ্য হেলথ রেগুলেটরি কমিশন, মেডিক্যাল কাউন্সিল এবং মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থ হবেন বলেও জানিয়েছেন পৌলমীদেবীর স্বামী।
শুধু পৌলমীই নন, আরও দু’জন প্রসূতির মৃত্যু ঘিরেও চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে। শুক্রবারই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন চন্দননগরের বাসিন্দা এক সন্তানসম্ভবা। সেদিনই জন্ম দেন যমজ সন্তানের। আচমকা শনিবার সকাল ৭টায় তরুণীর বাড়িতে ফোন করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক। ভেন্টিলেশনে দিতে হবে। বন্ডে সই লাগবে। পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, হাসপাতালে পৌঁছে আমরা গিয়ে দেখি তাঁকে ভেন্টিলেশনে দেওয়ার তোড়জোড় চলছে। সেই সময় ওই তরুণীর মা তাঁর গায়ে হাত দিয়েই চমকে ওঠেন। দেখেন, মেয়ের সারা শরীর নিস্তেজ এবং বরফের মতো ঠাণ্ডা। বুঝতে পারেন, মেয়ে সম্ভবত মারা গিয়েছে। পরিবারের দাবি, চিকিৎসায় গাফিলতিতেই মৃত্যু হয়েছে মেয়ের।
এভাবে চিকিৎসা ও নজরদারির গাফিলতিতে আরও এক প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ। শনিবার সকালে ওই প্রসূতি সন্তান প্রসবের পরেই মারা যান। এই প্রসূতি এক রাষ্ট্রায়ত্ত ইস্পাত সংস্থার এক শীর্ষকর্তার পরিচিত। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, সন্তান প্রসবের পর রক্তচাপ কমে যাওয়ায় প্রসূতির অবস্থা আশঙ্কাজনক হয়ে পড়ে। ফলে তাঁকে ভেন্টিলেশনে দিতে হয়। কিছুক্ষণ বাদে তাঁর মৃত্যু হয়। যদিও সেই মৃত্যুর কথা মানতে চাননি প্রসূতির পরিজনরা। এব্যাপারে হাসপাতালের সুপার ডাঃ মালতী পুরকায়েতকে ফোন করা হলে তিনি তা ধরেননি এবং পরে স্যুইচ অফ করে দেন। রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা ডাঃ অজয় চক্রবর্তী বলেন, যে কোনও প্রসূতির মৃত্যু দুর্ভাগ্যজনক। তবে প্রসূতির মৃত্যু আগের থেকে কমেছে। মৃত্যুর অভিযোগ ও রিপোর্ট হাতে আসুক, তারপরই বিস্তারিত জানা যাবে।