নিজস্ব প্রতিনিধি, দক্ষিণ ২৪ পরগনা: বাজি প্রদর্শনীতে বিস্ফোরণের ঘটনায় দু’জনকে গ্রেপ্তার করল নরেন্দ্রপুর থানার পুলিস। সোমবার সকালে পুলিস জাহির মণ্ডল এবং হাবিব মণ্ডল নামে দু’জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। যে ক্লাবের তরফে এই বাজি প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছিল, ধৃতরা দু’জনেই সেখানকার কার্যনির্বাহী সদস্য। এদিন ধৃতদের বারুইপুর আদালতে তোলা হলে তিনদিনের পুলিস হেফাজতের নির্দেশ হয়েছে। তবে এই বাজি প্রদর্শনী নিয়ে যে এলাকার লোকজন ক্ষুব্ধ ছিলেন, তা এদিন তাঁদের মধ্যে অনেকেই স্বীকার করেছেন। তাঁদের কথায়, ছোট মাঠে এভাবে বাজি প্রদর্শনী করতে নিষেধ করা হয়েছিল। কিন্তু শোনেনি উদ্যোক্তারা। এলাকার এক প্রৌঢ় বাসিন্দা বোরান হালদার বলেন, ক্লাবের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা উপলক্ষে আজাদ সঙ্ঘের মাঠে আতসবাজি প্রদর্শনীর প্রস্তুতি চলছিল। সেই সময় একটি বাজি ফাটানো হলে তাঁর বাড়িতে আগুনের ফুলকি এসে পড়ে। তাতে বাড়ির প্লাস্টিক পুড়ে যায়। তখনই তিনি ওই ক্লাবের সদস্য হাফিজুল গাজিকে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছিলেন, এটা হচ্ছে কী? এভাবে বাজি প্রদর্শনীর কি কোনও দরকার রয়েছে? এতে বাড়ি ঘর জ্বলে যাবে। কিন্তু তাতে ক্লাবের সদস্যরা কর্ণপাত করেননি। উল্টে মাইকে ঘোষণা করা হয়, বোরান হালদার বাড়িতে আগুন লাগলে নিজেই নিভিয়ে নিন। ঘটনাচক্রে বাজি বিস্ফোরণে ওই হাফিজুল গাজি ৪০ শতাংশ দগ্ধ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি। সংশ্লিষ্ট ক্লাবের সম্পাদক আলামিন সাঁপুই ১০ শতাংশ দগ্ধ হয়েছেন। তিনিও হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। বোরানের নাতনি সোমানি হালদারের কথায়, মাঠটি ব্যারিকেড দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়েছিল। সে নিজেও সেটির বাইরে দাঁড়িয়ে প্রদর্শনী দেখছিল। আচমকাই বিস্ফোরণে গোটা এলাকা কেঁপে ওঠে। সবাই দৌড়তে শুরু করে। তার উপরে অনেকে এসে পড়ে। তাতে তার ঘাড়ে আঘাত লেগেছে। মানুষের ধাক্কাধাক্কিতে সে জলে পড়ে যায়। তাতে তার দাদুই উদ্ধার করে।
এদিকে, সোনারপুর-রাজপুর পুরসভার কন্দর্পপুরে ৭ নম্বর ওয়ার্ডে রবিবার রাতের ঘটনার পর এলাকায় পুলিস মোতায়েন করা হয়েছে। রাতেই এলাকায় জেলা পুলিসের কর্তারা যান। প্রাথমিক তদন্তের পর জানা গিয়েছে, পুলিস ও দমকলের কোনও অনুমতি ছিল না বাজি প্রদর্শনীতে। মাঠটি ছোট এবং ঘিঞ্জি হওয়া সত্ত্বেও সেখানে বড় বড় বাজি-শেল ফাটানোর আয়োজন করা হয়েছিল। আবার সেখানে হাজির ছিলেন এলাকার তৃণমূল বিধায়ক ফিরদৌসি বেগম। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, যেখানে বাজি নিষিদ্ধ করা হয়েছে, সেখানে শেল কীভাবে ফাটানো হল? তাও আবার বিধায়কের সামনে। ফিরদৌসি বেগমের দাবি, ক্রীড়া প্রতিযোগিতা হবে শুনে তিনি গিয়েছিলেন। বাজি ফাটানোর বিষয়ে তিনি কিছুই জানতেন না। এমনকী, আগুনের ফুলকি তাঁর শাড়িতে পড়েছিল। তাতে কিছুটা পুড়েও যায়। কিন্তু এই অবস্থায় পুলিসের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
ক্ষুব্ধ বাসিন্দাদের প্রশ্ন, পুলিসের নজরদারি এড়িয়ে কি এই বাজি প্রদর্শনী সম্ভব? শাসকদলের ছত্রচ্ছায়ায় থাকার জন্যই কি এই ধরনের কর্মকাণ্ডে জড়িত ক্লাবগুলির সব দোষ মাফ হয়ে যায়? এদিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, চারপাশে ব্যারিকেড ভাঙা অবস্থায় পড়ে রয়েছে। বিস্ফোরণের চিহ্ন স্পষ্ট। বাসিন্দাদের কথায়, একাধিক বস্তায় ভরে বাজি-শেল আনা হয়েছিল। যেগুলি ফাটানো হচ্ছিল, সেখানকার ফুলকি এসে ওই বস্তায় পড়ে। তাতে এই বিস্ফোরণ। প্রত্যেকেই প্রাণপণে ছুটতে থাকেন। অনেকেই খালের জলে ঝাঁপ দেন। প্রায় ২০-২৫ জন জখম হলেও তাঁদের মধ্যে দু’জন ছাড়াও বাকিদের চিকিৎসার পর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।