বুধবার, 21 মে 2025
Logo
  • বুধবার, ২১ মে ২০২৫

৩০ পেরলেই মেয়েরা করাবেন কী কী টেস্ট?

কোন কোন পরীক্ষা মেয়েদের ভবিষ্যতের বড় বড় অসুখ ঠেকিয়ে দিতে পারে? পরামর্শে বিশিষ্ট গাইনিকোলজিস্ট ডাঃ দেবলীনা ব্রহ্ম। 

৩০ পেরলেই মেয়েরা করাবেন কী কী টেস্ট?

কোন কোন পরীক্ষা মেয়েদের ভবিষ্যতের বড় বড় অসুখ ঠেকিয়ে দিতে পারে? পরামর্শে বিশিষ্ট গাইনিকোলজিস্ট ডাঃ দেবলীনা ব্রহ্ম। 

 

৫৫ বছরের মায়া সেন। একটা সময় দাপটের সঙ্গে ঘর ও ব্যবসা সামলেছেন। দূর দূরান্ত থেকে ব্যবসার কাঁচামাল আনতে ছুটেছেন। ইদানীং হাঁটু ও কোমর জানান দিচ্ছে, জীবন আর আগের মতো নেই। কয়েকটা সিঁড়ি উঠলেই পায়ের পাতা থেকে গোড়ালি সবই জানান দিচ্ছে ভার বাড়ছে হাড়ের। অস্টিওআর্থ্রাইটিস দোরগোড়ায়। 
 মায়াদেবীর চেয়ে বছর দশেকের ছোট শর্মিলি। গৃহবধূ। শ্বশুর-শাশুড়ির দেখভাল থেকে বরের অফিসের টিফিন, ছেলেমেয়ের জন্য মুখরোচক কিছু বানানো, কোচিং ক্লাস, পরিচারিকাদের ফরমায়েশ বুঝিয়ে দেওয়া সবটা একা হাতে সামলাতে সামলাতে একদিন সকালে হঠাৎ ঘুম ভেঙে দেখলেন পা ফুলে ঢোল! মাটিতে পা ফেললেও মনে হচ্ছে কষ্ট করে যেন টেনে নিয়ে যেতে হচ্ছে নিজের পা দুটোকে। তড়িঘড়ি ডাক্তারবদ্যি করে দেখা গেল থাইরয়েড বাসা বেঁধেছে শরীরে। 
মহিলারা সংসারের শক্তিঘর। গাছেদের কথা ধরলে যেমন পাতা, মানুষের সংসারের কথা ভাবলে তেমন বাড়ির মেয়েরা। ঘর-বার সব সামলানোর দায় তাঁরও নেই। তবু পরিবারের সকল সদস্যের সুখ-দুখের খোঁজ রাখা থেকে শুরু করে গোটা বাড়ির দায়িত্ব মাথায় নেওয়া তাঁদের প্রকৃতিগত স্বভাব। ,সবকিছু সামলাতে গিয়ে ভারতীয় মহিলারা অনেক সময় নিজের দিকে তাকাতেই ভুলে যান। তাই বয়স যখন ৫০-এর কোঠায় এগতে থাকে, নানা অসুখবিসুখের বীজও ঢুকে পড়ে শরীরে। তাই ৪৫-৫০ বছরের অসুখ ঠেকাতে চাইলে সাবধান হতে হবে বয়স ৩০ পেরলেই। এই বয়সের পর থেকেই বার্ষিক কিছু পরীক্ষা করানো জরুরি। শরীরে যদি কোনও সমস্যা থাকেও, সেক্ষেত্রে প্রাথমিক অবস্থাতেই তা ধরা পড়লে চিকিৎসা দ্রুত শুরু করা যায় ও বড়সড় অসুখ রুখে দেওয়া সম্ভব হয়। 
থাইরয়েড এবং কোলেস্টেরল: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও আমেরিকান হার্ট রিসার্চ সেন্টারের গবেষণা অনুযায়ী, মঅনিয়ন্ত্রিত লাইফস্টাইল, অসময়ে খাওয়াদাওয়া, ফাস্ট ফুড ও বংশগত কারণে হওয়া অসুখগুলোর মধ্যে থাইরয়েড ও কোলেস্টেরলের হানা ভারত-বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে বেশি। এসব দেশের মেয়েরা আবার এই অসুখগুলোয় বেশি আক্রান্ত হন। তাই বয়স ৩০ পেরলেই প্রতি বছর নিয়ম করে থাইরয়েড ও কোলেস্টেরলের পরীক্ষা আবশ্যক। হার্টের নানাবিধ অসুখ ঠেকাতে এই দুই টেস্টই খুব জরুরি।
হাড়ের স্বাস্থ্য: সেডেন্টারি লাইফস্টাইলের কারণে হাড়ের সমস্যা, অস্টিওআর্থ্রাইটিস, অস্টিওপোরোসিস ইত্যাদি বিবিধ সমস্যা রোজই ক্রমশ ধেয়ে আসছে আমাদের দিকে। এই ধরনের সমস্যায় মেয়েরা বেশি আক্রান্ত হন।  তাই ৩০ পেরনোর পর বছরে এক-দু’বার ভিটামিন ডি৩ পরীক্ষা করানো জরুরি। এছাড়াও শরীরে ক্যালশিয়ামের মাত্রা পর্যাপ্ত থাকছে কি না, সে ব্যাপারেও খেয়াল রাখতে হবে। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে কিছু ওষুধপত্রও খেতে হতে পারে। পাশাপাশি ইউরিক অ্যাসিড পরীক্ষাটিও করিয়ে নিতে পারেন।
ক্যানসার স্ক্রিনিং: চিকিৎসকদের মতে, মেয়েদের বেলায় বয়স ২৫ পেরলেই বছরে একবার সার্ভাইকাল ক্যান্সার বা জরায়ুমুখের ক্যান্সার পরীক্ষা জরুরি। সম্প্রতি এই রোগের জন্য কিশোরীদের জন্য টিকাকরণ কর্মসূচিকে নিজেদের স্বাস্থ্যখাতে শুরু করার ঘোষণা করেছে দেশের সরকার। তবে এই টিকা বেসরকারিভাবেও বহু বছর ধরেই নেওয়া যায়। তবে রোগাক্রান্ত হয়ে গেলে তখন আর টিকা তত কাজ করবে না। তাই মেয়েদের যৌন জীবন শুরুর আগেই টিকা নিয়ে নেওয়া উচিত। যত কম বয়সে এই টিকা নেওয়া যাবে, ততই ভালো।  দশ-এগারো বছর বয়স হলেই মেয়েদের এই প্রতিষেধক দেওয়া যায়। পনেরো বছরের নীচে দু’টি ও তার উপরে তিনটে ডোজে এই টিকা দেওয়া হয়। পরীক্ষায় প্রমাণিত, এই প্রতিষেধক নিলে রোগের আশঙ্কা ৮৫ শতাংশ কমিয়ে দেয়। তাই ২৫-৬৫ বছর বয়সি মহিলাদের উচিত নিয়ম করে অন্তত প্রত্যেক তিন বছর অন্তর এই অসুখের পরীক্ষা করা। সার্ভাইকাল প্যাপ স্মিয়ার টেস্ট করলেই প্রি-ক্যান্সারাস স্টেজে থাকা কোষগুলি ধরা পড়ে ও চিকিৎসা করে পুরোপুরি তাদের সুস্থ করে তোলা যায়। এই পরীক্ষা আউটডোর ক্লিনিকেই সম্ভব। রোগীর শরীরে প্রি-ক্যান্সারাস স্টেজের কোনও কোষ পেলে চিকিৎসক সেই অনুযায়ী দ্রুত চিকিৎসা শুরু করে রোগীকে সুস্থ করে তুলতে পারেন। 
ডায়াবিটিস: অনিয়মিত জীবনযাত্রা, অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস ইত্যাদি কারণে ডায়াবেটিস থাবা বসাতে পারে অল্প বয়সেও। তাই প্রতি বছর অন্তত দু’বার ডায়াবেটিস পরীক্ষা করান। ডায়াবেটিসের লক্ষণ খুব বড় আকারে ধরা পড়ে না। তাই অনেক সময় দেখা যায় রোগীর শরীরে হয়তো অনেক দিন ধরেই এই অসুখ বাসা বেঁধেছিল। তাই বয়স ৩০ পেলেই বছরে ২ বার এই টেস্ট করুন।
চোখের পরীক্ষা: দীর্ঘ সময়ে বসে কম্পিউটারে কাজ, অনলাইন মিটিং, দীর্ঘক্ষণ মোবাইলে চোখ, অফিসের নানা চাপ বা ঘরকন্নার খুঁটিনাটি সামলাতে সামলাতে অনেক সময় চোখের উপর চাপ পড়ে। তাই প্রথম থেকেই চোখের প্রতি যত্নশীল হওয়া প্রয়োজন। তাহলে ক্যাটারাক্টের সমস্যাকেও অনেকটা ঠেকিয়ে রাখা যায়।  তাই বয়স যদি ৩০ পেরিয়ে গিয়ে থাকে, তা হলে চোখের পরীক্ষা করা জরুরি। পাওয়ার বাড়লে চিকিৎসকের সঙ্গে আলোচনা করা প্রয়োজন।
লিেখছেন: মনীষা মুখোপাধ্যায়