বুধবার, 21 মে 2025
Logo
  • বুধবার, ২১ মে ২০২৫

বার্থ কন্ট্রোল পিল খেলে মহিলাদের কী কী পরিবর্তন হয়?

বর্তমান সময়ে বার্থ কন্ট্রোল পিল বা জন্ম নিরোধক ওষুধের প্রাসঙ্গিকতা বেড়েছে। কারণ বর্তমানে পুরুষ-নারী উভয়ই কেরিয়ার নিয়ে অনেক বেশি  সচেতন।

বার্থ কন্ট্রোল পিল খেলে মহিলাদের কী কী পরিবর্তন হয়?

বিভ্রান্তি নয়, সত্যিটা জানুন। পরামর্শে পিয়ারলেস হাসপাতালের বিশিষ্ট স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ সোমেন দাস।

 

বর্তমান সময়ে বার্থ কন্ট্রোল পিল বা জন্ম নিরোধক ওষুধের প্রাসঙ্গিকতা বেড়েছে। কারণ বর্তমানে পুরুষ-নারী উভয়ই কেরিয়ার নিয়ে অনেক বেশি  সচেতন। তাই পেশাগতভাবে স্থিতিশীল না হওয়া পর্যন্ত কেউই বিয়ে করতে চাইছে না। এমনকী বিয়ে করলেও তারা সন্তান নিচ্ছে অনেক পরে। আর তা পেশাগত স্থিতিশীলতার তাগিদেই। কেউ কেউ লিভ ইন করতেও স্বচ্ছন্দ বোধ করছেন। এমন ক্ষেত্রে অন্যান্য নিরাপত্তা না গ্রহণ করে ঘনিষ্ঠ হলে এবং তার কারণে অবাঞ্ছিত প্রেগন্যান্সি আসা রোধ করতে চাইলে ভরসা একমাত্র বার্থ কন্ট্রোল পিল। এর মধ্যে ভুল নেই। অবাঞ্ছিত প্রেগনেন্সির কারণে গর্ভপাত করানোর থেকে বার্থ কন্ট্রোল পিল খাওয়া ভালো। তবে এই পিল নিয়ে সচেতনতাও জরুরি। 
জন্ম নিরোধক পিলের সাধারণ কিছু ব্যবহার—
 বার্থ কন্ট্রোল পিল মোটামুটি তিন রকম। প্রথমটি কম্বাইনড পিল। যাতে ইস্ট্রোজেন, প্রোজেস্টেরন— দু’ধরনের হরমোনই থাকে। চিকিত্সকের পরামর্শ অনুযায়ী, মেনস্ট্রুয়েশনের প্রথম দিন থেকে এই ওষুধ খাওয়া শুরু করা যায়। ২১ দিন পর্যন্ত রোজ একটা করে পিল খেতে হবে। 
 এছাড়া আছে, প্রোজেস্টেরন পিল। এটিও নিয়মিত একটি করে খেতে হয়। সাধারণত, যাঁরা সন্তানকে ব্রেস্ট ফিড করাচ্ছেন, তাঁদের এই পিল খেতে পরামর্শ দেওয়া হয়। 
 তৃতীয়টি হল ইমার্জেন্সি কন্ট্রাসেপশন, কন্ট্রাসেপটিভ পিল। নিরাপত্ত ব্যবস্থা ছাড়া সংসর্গের ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে প্রেগনেন্সি এড়াতে খেতে হয় এই ওষুধ। 
এক্ষেত্রে ওষুধ খাওয়ার কয়েকটি বিধিবদ্ধ নিয়ম জেনে নেওয়া জরুরি। তা হল, নিয়মিত একটা নির্দিষ্ট সময়ে ওষুধ খেতে হবে। সাধারণত রাতে শোওয়ার আগে পিল খেয়ে নেওয়া ভালো। কোনও কারণে ওষুধ খেতে ভুলে গেলে, পরদিন যখনই মনে পড়বে, তখনই ওষুধ খেয়ে নিতে হবে। সেই সঙ্গে সেদিনের ওষুধও সময়মতো খেতে হবে।
তবে কোন ওষুধ কোন মহিলার জন্য ঠিক, কতদিন খাবেন— তা চিকিত্সকের তদারকিতেই নির্ধারণ করা দরকার।
একটানা বার্থ কন্ট্রোল পিল কি বন্ধ্যাত্ব ডেকে আনে?
বিশ্বের কোটি কোটি মহিলা এই ওষুধ ব্যবহার করছেন। ফলও পাচ্ছেন। ১০০ জনের মধ্যে মোটামুটি ৯৭ শতাংশের ক্ষেত্রেই কোনও সমস্যা হয় না। বাকি ২-৩ শতাংশের কিছু  অভাব-অভিযোগ থাকতে পারে। বন্ধ্যাত্ব অন্য অন্যান্য শারীরিক সমস্যার জন্যও বন্ধ্যাত্ব দেখা দিতে  পারে। 
পিল যখন ওষুধ
পিরিয়ডের সময় পেটে ব্যথা, তলপেটে ব্যথার সমস্যার জন্য কন্ট্রাসেপটিভ পিল দেওয়া হয়। অনেকের অনিয়মিত মেনস্ট্রুয়েশনের সমস্যাও থাকে। অর্থাত্ সাইকেলটা নিয়মিত নয়। এই জটিলতা ঠিক করার জন্যও এই ওষুধ খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।  এন্ডোমেট্রিওসিসে  তিন মাস একটানা ধারাবাহিকভাবে পিল দেওয়া হয়। এমনকী, মুখের ব্রণ, রোমের আধিক্যের চিকিত্সাতেও বার্থ কন্ট্রোল পিলের একধরনের ফর্মুলেশন দেওয়া হয়। 
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া 
নতুন করে পিল খাওয়া শুরু করলে অস্বস্তি, বমি বমি ভাব, গা গোলানো, মাথা ব্যথা, তলপেটে ব্যথা বা ফাঁপার মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে। ধীরে ধীরে বিষয়গুলি নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। 
মনে রাখবেন
উচ্চ রক্তচাপ, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, অত্যধিক ধূমপানের অভ্যেস থাকলে, বয়স ৩৫ বছরের বেশি হলে পিল ব্যবহারে সতর্ক থাকতে হবে। কারণ এঁদের ক্ষেত্রে ডিপ ভেনাস থ্রম্বোসিস দেখা দিতে পারে। অর্থাত্ শিরায় রক্ত জমার সমস্যা। এই জমাট বাঁধা রক্ত (ক্লট) এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় গিয়ে জটিলতা তৈরি করে। হার্টে বা শরীরে অন্যান্য জায়গায় বিপদ ডেকে আনতে পারে। এছাড়া, কারও  জরায়ুর ক্যান্সার, লিভারে টিউমার বা সিরোসিস, মাইগ্রেন থাকলে বিশেষ সাবধানতা দরকার। এছাড়া টানা পিল খাওয়ার দরকার হলে 
 লিভার ফাংশান টেস্ট (এলএফটি)-ও করা হয়।
লিখেছেন সুদীপ্ত সেন