শুক্রবার, 11 জুলাই 2025
Logo
  • শুক্রবার, ১১ জুলাই ২০২৫

অত্যাচারে অতিষ্ঠ, বাবা-মাকে নিয়ে স্বামীকে খুন স্ত্রীর

আক্রোশ ছিলই। তাই স্ত্রী ও তার পুরো পরিবার ঝাঁপিয়ে পড়েছিল জামাইয়ের উপর। মদের নেশায় তখন তাঁর চোখ ঘোলাটে। তারমধ্যেই স্ত্রীর খুনে চেহারা দেখে তিনি চমকে উঠেছিলেন কি না, তা জানার আর উপায় নেই।

অত্যাচারে অতিষ্ঠ, বাবা-মাকে নিয়ে স্বামীকে খুন স্ত্রীর

সংবাদদাতা, তারকেশ্বর: আক্রোশ ছিলই। তাই স্ত্রী ও তার পুরো পরিবার ঝাঁপিয়ে পড়েছিল জামাইয়ের উপর। মদের নেশায় তখন তাঁর চোখ ঘোলাটে। তারমধ্যেই স্ত্রীর খুনে চেহারা দেখে তিনি চমকে উঠেছিলেন কি না, তা জানার আর উপায় নেই। কারণ, প্রায় দেড়মাস নিখোঁজ থাকার পর জাঙ্গিপাড়ার কানাইপুরের জামাই রবীন রুইদাসের পচাগলা মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে। তবে সেদিন ঠিক কী হয়েছিল, পুলিসি জেরায় তা খোলসা করেছে স্ত্রী আলপনার পরিবারের সদস্যরা। তাদের কথা অনুযায়ী, মদ্যপ জামাইয়ের হাত ও পা চেপে ধরেছিল শ্বশুর ও শ্যালক। তাদের সাহায্য করেছিল রবীনের স্ত্রী আলপনা। আর গলায় গামছার ফাঁস দিয়েছিল আলপনার বোনের জামাই প্রদীপ পাত্র। ওই রাতেই নিজের টোটোয় করে মৃতদেহ নিয়ে গিয়ে ফেলে এসেছিল প্রদীপ। 
স্থানীয় চাষজমিতে সেচের জন্য গভীর নলকূপ রয়েছে। সেই নলকূপের ভিতর থেকেই রবীনের প্রায় কঙ্কালসার মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে। পুলিসের জেরার মুখে জাঙ্গিপাড়ার রুইদাস পরিবার পরিকল্পিত খুন ও প্রমাণ লোপাটের কথা ফাঁস করতে বাধ্য হয়েছে। ফলে, ওই মৃতদেহ যে রবীনের, তা নিয়ে সন্দেহ নেই পুলিসের। মৃতদেহের ফরেন্সিক, ডিএনএ পরীক্ষার পথ খোলা রাখছে হুগলি জেলা গ্রামীণ পুলিস। এই রোমহর্ষক ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে জাঙ্গিপাড়ার রাধানগর গ্রাম পঞ্চায়েতের কানাইপুরে। 
মদ্যপ স্বামীকে নিয়ে আলপনার কষ্টের কাহিনি পরিবারের সকলেই প্রায় জানত। তাই স্বামী ‘নিখোঁজ’ হওয়ায় স্ত্রীর চেহারায় কেউ আফশোসের ছাপ দেখেননি। কিন্তু আলপনা নিজেই তার স্বামীকে খুন করতে সাহায্য করেছে, তা জেনে প্রতিবেশীরা হতবাক হয়ে গিয়েছেন। এই ঘটনার সঙ্গে বলিউডের জনপ্রিয় সিনেমা ‘দৃশ্যম’-এর মিল পাচ্ছেন অনেকেই। মেয়ের উপর অত্যাচারের কারণে এক যুবককে শাস্তি দিতে গোটা পরিবার বাবার নেতৃত্বে পরিকল্পিতভাবে ওই তার পাশে এসে দাঁড়িয়েছিল। যদিও সেক্ষেত্রে বাবা, পুলিসকে ফাঁকি দিতে সক্ষম হয়েছিল। এক্ষেত্রে আলপনা, তার বাবা জয়দেব রুইদাস, ভাই অভিজিৎ রুইদাস এবং রবীনের ভায়রাভাই প্রদীপ সকলেই ধরা পড়ে গিয়েছে। সোমবার এ নিয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলনে হুগলি গ্রামীণ পুলিসের অতিরিক্ত সুপার কৃষাণু রায় বলেন, মৃতের স্ত্রী, শ্বশুর, শ্যালক ও ভায়রাভাইকে আমরা গ্রেপ্তার করে হেফাজতে নিয়েছি। মদ্যপ স্বামীর অত্যাচার থেকে মুক্তি পেতেই যে খুন, এই তত্ত্বই এখন সামনে এসেছে। অন্য কোনও বিষয় আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
পেশায় নির্মাণ শ্রমিক রবীন রুইদাসের বাড়ি চণ্ডীতলায়। প্রায় ১০ বছর আগে জাঙ্গিপাড়ার আরেক রুইদাস পরিবারের মেয়ে আলপনার সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। এই দম্পতির দু’টি সন্তান আছে। অভিযোগ, রবীন মদ্যপ অবস্থায় প্রায়ই অত্যাচার করত স্ত্রীর উপর। সম্প্রতি সন্তানদের নিয়ে আলপনা বাপের বাড়িতে চলে আসে। সেখানেও রবীন হাজির হয়ে স্ত্রীর উপর অত্যাচার করতেন বলে অভিযোগ। গত ১৩ মে আচমকা রবীন নিখোঁজ হয়ে যান। ভাইয়ের অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তে নেমে পুলিস জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। শেষ পর্যন্ত পুলিসের চাপে ২২ জুন ভেঙে পড়ে আলপনা। তারপরেই প্রকাশ্যে আসে এক হাড়হিম করা ষড়যন্ত্র ও খুনের কাহিনি। যা আপাত শান্ত জাঙ্গিপাড়ার কানাইপুরকে নাড়িয়ে দিয়েছে।

রাশিফল