বৃহস্পতিবার, 15 মে 2025
Logo
  • বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫

সিনেমা দেখে চোখে জল? আপনি মানসিকভাবে শক্তিশালী

কোনও কোনও সিনেমার গল্প আমাদের মনে এতটাই গভীর ছাপ ফেলে যে কখনও কখনও হাসতে হাসতে পেট ব্যথা হয়ে যায়, আবার কখনও চোখের জল আটকে রাখা দায় হয়ে পড়ে। অনেকে মনে করেন, সিনেমা দেখে কাঁদা নাকি দুর্বলতার লক্ষণ।

সিনেমা দেখে চোখে জল? আপনি মানসিকভাবে শক্তিশালী

কোনও কোনও সিনেমার গল্প আমাদের মনে এতটাই গভীর ছাপ ফেলে যে কখনও কখনও হাসতে হাসতে পেট ব্যথা হয়ে যায়, আবার কখনও চোখের জল আটকে রাখা দায় হয়ে পড়ে। অনেকে মনে করেন, সিনেমা দেখে কাঁদা নাকি দুর্বলতার লক্ষণ। কিন্তু আদতে ব্যাপারটা কি তাই! আমেরিকার ক্লেয়ারমন্ট গ্র্যাজুয়েট ইউনিভার্সিটির নিউরোইকোনমিস্ট পল জে জ্যাকের গবেষণায় দেখা গেছে, যাঁরা সিনেমা দেখে কাঁদেন, তাঁরা আদতে অন্যের প্রতি আরও বেশি সহানুভূতিশীল হন। জীবনের নানা কঠিন সময়েও দৃঢ়ভাবে সামনে এগিয়ে চলার শক্তি রাখেন।
সিনেমা দেখলে কেন কান্না পায়
সিনেমা দেখে যাঁরা কাঁদেন, তাঁরা ঠিকই জানেন যে সিনেমার গল্প আদতে কল্পনাপ্রসূত, বাস্তবে সত্যি নয়। তবু যখন পর্দায় খুব আবেগপূর্ণ কোনও দৃশ্য আসে, তখন আর কান্না আটকানো সম্ভব হয় না।
পল জে জ্যাক এর কারণ ব্যাখ্যা করেছেন, ‘এর পেছনে কাজ করে শরীরের এক বিশেষ হরমোন, অক্সিটোসিন। এটি এমন এক হরমোন, যা মস্তিষ্ক ও শরীরে আবেগের অনুভূতি জাগিয়ে তোলে। একে ভালোবাসার  বা কেয়ারিং হরমোনও বলা হয়। যখন আমরা কোনও স্পর্শকাতর বা মর্মস্পর্শী দৃশ্য দেখি, তখন অক্সিটোসিন আমাদের মধ্যে সহানুভূতি বাড়িয়ে দেয়। এতে সামাজিক বন্ধন বাড়ে, অর্থাৎ এই শারীরিক প্রতিক্রিয়া দেখায় যে তাঁর আবেগগত বুদ্ধিমত্তা অনেক বেশি।’ 
 কান্নার কিছু উপকারিতা
অন্যের প্রতি সহানুভূতিশীলতা বাড়ে একথা আগেই বলা হয়েছে। মনে রাখবেন, যাঁরা সিনেমা দেখে কাঁদতে সংকোচ করেন না, তাঁরা আদতে মানসিকভাবে শক্ত। কারণ, তাঁরা সাহস করে নিজের আসল অনুভূতি প্রকাশ করেন এবং কে কী বলবে, সেটা নিয়ে ভয় করেন না। পল জে জ্যাক বলছেন, ‘অক্সিটোসিন আমাদের শুধু সহানুভূতিশীলই করে না; বরং অন্যের প্রতি সংবেদনশীল হতে শেখায় এবং ন্যায়ের পক্ষে দৃঢ়ভাবে দাঁড়ানোর সাহসও বাড়ায়।’
কান্নারও শক্তি আছে
যাঁরা সিনেমা দেখে কাঁদেন, তাঁরা জানেন, কান্না শুধু দুঃখের প্রকাশ নয়, এটি একটি শক্তি। তাঁরা জানেন, কান্নাই পারে অন্য মানুষের সঙ্গে গভীর ও ভালো সম্পর্ক গড়ে তুলতে। এতে সামাজিক বন্ধন বাড়ে। তাঁরা মনে করেন, চারপাশে এমন কিছু ঘটনা ঘটে, যা তাঁদের জীবনে ইতিবাচক বা নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এভাবে তাঁরা তাঁদের যে কোনও আবেগকে সুন্দরভাবে প্রকাশ করতে পারেন। এই শক্তিটা তাঁদের মানসিকভাবে আরও হালকা করে এবং সম্পর্কগুলো আরও গভীর ও মানবিক করে তোলে।
সিনেমা দেখে যাঁরা কেঁদে ফেলেন, তাঁরা তাঁদের অনুভূতি চেপে রাখেন না। তাঁরা বিশ্বাস করেন, তাঁদের জীবনে যা যা ঘটে, সেসবের প্রতি সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি থাকা জরুরি। তাই মাঝেমধ্যে একটু কাঁদারও প্রয়োজন আছে। এতে তাঁদের আবেগের ভারসাম্য বজায় থাকে। ফলে তাঁরা চাপ সামলাতে পারেন। অন্যদিকে যাঁরা অনুভূতি চেপে রাখেন, তাঁরা সেই ভারসাম্য থেকে বঞ্চিত হন। ফলে তাঁরা চাপ সামলাতে পারেন না। অর্থাৎ সামগ্রিক সুস্থতার ক্ষেত্রেও বড় ভূমিকা রাখে কান্না।
জীবনকে অনুভব
 অক্সিটোসিন হর্মোন বিশ্বাসের অনুভূতির সঙ্গে সম্পর্কিত। যাঁরা অন্যের প্রতি সহজে আস্থা রাখেন, তাঁদের শরীরে অক্সিটোসিনের মাত্রা বেশি থাকে। ফলে তাঁরা মানুষের সঙ্গে আন্তরিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারেন। জীবনকেও ভালোভাবে উপভোগ করতে পারেন। আর যাঁরা অন্যের প্রতি আস্থা রাখেন না, তাঁরা এ অভিজ্ঞতা থেকে বঞ্চিত হন।  সুরজিত্‍ মুখোপাধ্যায়