স্ট্রোকের পর রোগী স্বাভাবিক জীবনে ফিরবেন কীভাবে?
স্ট্রোক হল মস্তিষ্কের অসুখ। এই রোগে মস্তিষ্কের ধমনী আক্রান্ত হয়। ফলে ওই ধমনী মস্তিষ্কের যেখানে রক্ত সরবরাহ করে, সেখানে রক্তপ্রবাহ ব্যাহত হয়। সেই অংশের কোষগুলিতে পচন ধরতে থাকে ও মৃত্যু হতে থাকে। ব্রেনের সেই অংশের কাজকর্ম ব্যাহত হয়। এই স্ট্রোককে বলে ইনফার্কশন।

বর্তমান ওয়েবডেস্ক
এপ্রিল ২২, ২০২৫
Share:
পরামর্শে মণিপাল মুকুন্দপুর হাসপাতালের স্ট্রোক স্পেশালিস্ট ডাঃ অপ্রতিম চট্টোপাধ্যায়।
• স্ট্রোক কী?
•• স্ট্রোক হল মস্তিষ্কের অসুখ। এই রোগে মস্তিষ্কের ধমনী আক্রান্ত হয়। ফলে ওই ধমনী মস্তিষ্কের যেখানে রক্ত সরবরাহ করে, সেখানে রক্তপ্রবাহ ব্যাহত হয়। সেই অংশের কোষগুলিতে পচন ধরতে থাকে ও মৃত্যু হতে থাকে। ব্রেনের সেই অংশের কাজকর্ম ব্যাহত হয়। এই স্ট্রোককে বলে ইনফার্কশন।
আরও এক ধরনের স্ট্রোকে ধমনী ফেটে গিয়ে রক্তপাত হয়। এই স্ট্রোককে বলে সেরিব্রাল হেমারেজ।
• স্ট্রোকের লক্ষণ কী কী?
•• স্ট্রোকের লক্ষণ বোঝার জন্য একটি নিমোনিক রয়েছে, যাকে বলা হয় বেলফাস্ট (বেলফাস্ট বা BELFAST)।
বি (B) = ব্যালান্স বা ভারসাম্য নষ্ট হওয়া।
ই (E) = আই বা চোখের দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যাওয়া।
এল (L) = লস অব কনশিয়াসনেস বা অজ্ঞান হয়ে যাওয়া।
এফ (F) =ফেস। হঠাত্ যদি মুখ বেঁকে যাওয়া।
এ (A) = আর্ম বা হাত বা পা কমজোরী বা অবশ হয়ে যাওয়া।
এস (S) =স্পিচ বা কথোপকথন আটকে যাওয়ার মতো জটিলতা বা বিভ্রান্ত বোধ করা।
টি (T) =টি-এর অর্থ হল টাইম বা সময় নির্ভরশীল চিকিত্সা। তাই সঠিক সময়ের মধ্যে রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারলে বাঁচবে জীবন।
• স্ট্রোক হয়েছে বুঝলে কী কী করবেন?
•• বাড়ির লোক যদি বোঝেন স্ট্রোক হয়েছে, দেরি না করে নিকটবর্তী একটি হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে যেখানে ২৪X৭ স্ট্রোকের চিকিত্সা হয়। মনে রাখবেন আউটডোর বা চেম্বার নয়, রোগীকে নিয়ে যান হাসপাতালের ইমার্জেন্সিতে।
চিকিৎসাশেষে রোগীকে নিয়ে যাওয়া হল বাড়িতে। তখন চিকিৎসা কেমন হবে?
•• খুব সহজ করে বললে, ব্রেনের ডান দিকের অংশ আমাদের শরীরের বামদিকের হাত পায়ের সঞ্চালন নিয়ন্ত্রণ করে। আবার ব্রেনের বাম দিকের অংশ আমাদের শরীরের ডানদিকের অংশকে নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে স্ট্রোক হলে মস্তিষ্কের সেই অংশটি শরীরের যে দিকটি নিয়ন্ত্রণ করে, তার কাজকর্ম ব্যাহত হতে পারে। তবে স্ট্রোকে ব্রেনের কোন অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে, তা আগে থেকে বলা সম্ভব নয়। দ্বিতীয়ত, তাঁর শরীরে কোন কোন সমস্যা দেখা দেবে, তাও আগে থেকে বোঝা যায় না। অতএব পোস্ট স্ট্রোক কেয়ার সকলের ক্ষেত্রে এক হবে না। তবে সাধারণভাবে কতগুলি বিষয় অবশ্যই মেনে চলা সম্ভব। যেমন— ক্লট স্ট্রোক বা ইনফার্কশন হলে চিকিৎসক নিশ্চিতভাবে রক্ত তরল করার ওষুধ যেমন অ্যাসপিরিন বা ক্লপিডোগ্রেল বা টিকাগ্রেলর জাতীয় ওষুধ দিতে পারেন রোগীকে। তৃতীয়ত চেষ্টা করতে হবে ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রণে রাখার। সেজন্য চিকিৎসকের দেওয়া ওষুধ নিয়মিত খেতে হবে। বাড়িতে প্রেশার মাপার যন্ত্র রাখলেও খুব ভালো হয়। কারণ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাঁদের রক্তচাপের বড় বেশি ওপর নীচ হয়। চতুর্থত রোগীর যদি ধূমপান, মদ্যপান বা কোনও নেশার দ্রব্যের প্রতি আসক্তি থাকে, তাহলে বাড়িতে ফেরার পর পুনরায় শুরু করবেন না। হাসপাতালেই যেন ত্যাগ করে আসেন সেই অভ্যেস। মনে রাখবেন স্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে স্মোকিং। কারণ স্মোকিং স্ট্রোক হওয়ার আশঙ্কা বাড়িয়ে দেয়। আসলে সিগারেটে, বিড়ির তামাকে অসংখ্য ক্ষতিকর পদার্থ থাকে যা ধমনীর গাত্রে প্লাক তৈরিতে সাহায্য করে। বাড়িয়ে দেয় ব্লাড প্রেশার।
এইবার আসবে ওষুধের কথা। ব্লাডপ্রেশার, কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণের ওষুধ অবশ্যই চিকিত্সকের পরামর্শ মতোই খেতে হবে। ডায়াবেটিস থাকলে ব্লাড সুগার কন্ট্রোলের ওষুধ বাদ দেওয়া যাবে না কোনওমতেই। তবে শুধু ওষুধ খেলেই চলবে কেন? তার সঙ্গে ব্লাড সুগার মাপার যন্ত্র দিয়ে মাঝেমধ্যেই পরীক্ষা করে দেখতে হবে রক্তে সুগারের মাত্রা। মাত্রা বেশি থাকলে অবশ্যই তা চিকিৎসককে জানাতে হবে। কারণ অনেক সময়েই স্ট্রোকের পরে সুগার বৃদ্ধির প্রবণতা দেখতে পাওয়া যায়।
• ডায়েটে কেমন নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন?
•• ডায়েটে নিয়ন্ত্রণ অবশ্যই প্রয়োজন, তবে দেখতে হবে স্ট্রোকের কারণে শরীরে কী ধরনের প্রভাব পড়েছে। যদি দেখা যায় স্ট্রোকের কারণে রোগী নিজের হাতে খাবার খেতে পারছেন না, শয্যাশায়ী হয়ে আছেন, রাইলস টিউবে খাবার খাচ্ছেন, সেইক্ষেত্রে ডাক্তারবাবুই একটা ডায়েট চার্ট করে দেন রোগীকে। নির্দিষ্ট খাবার পেস্ট করে খাওয়াতে বলেন। শুরুর দিকে কিছু ফর্মুলা ফিড দিলেও পরের দিকে আমরা বলি বাড়িতে তৈরি খাদ্য একসঙ্গে মিশিয়ে স্ম্যাশ বা তরল করে খাওয়ালে ভালো। এর ফলে খাদ্য দ্রুত হজম করতে পারবেন রোগী।
খাবারের মধ্যে প্রোটিন, লিপিডের মাত্রাও ডাক্তারবাবুরা নিয়ন্ত্রণ করে দেন। কিলোক্যালোরি হিসেবে খাদ্যগ্রহণের মাত্রার পরিমাপ করা হয়। স্ট্রোকের পরে দ্রুত সেরে ওঠার জন্য, এনার্জির বৃদ্ধির জন্য প্রোটিনের মাত্রা অনেক সময় বাড়ানোর দরকার পড়তে পারে। বাড়ির খাবার খেলে প্রোটিনের মাত্রার নিয়ন্ত্রণ পরিচর্যাকারীর হাতেই থাকে। এই কারণেই রোগকে হোম মেড ফুড খাওয়ার কথা বলা হয় বার বার।
ফলে ভাত, ডাল, মাছ, কখনও কখনও একটু চিকেন পেস্ট করে দিয়ে খাওয়ানো যেতে পারে। প্রয়োজনে অল্প মাত্রায় মাখন বা তেলও ব্যবহার করা যায়। তাতে রোগীর এনার্জির মাত্রাও অটুট থাকে। এবার একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হল, ধরা যাক আপনার এমন এক ধরনের স্ট্রোক হয়েছে, যাতে রোগী চলাফেরা করতে পারছেন না। তিনি শয্যাশায়ী। সেক্ষেত্রে বাড়িতে ফিজিওথেরাপি নিশ্চয় হবে। তার সঙ্গে বাড়ির লোককেও খেয়াল রাখতে হবে, যে বিছানায় রোগীকে শোয়ানো হচ্ছে তা যেন স্ট্রোক রোগী বান্ধব হয়। অর্থাত্ সম্ভব হলে এয়ার ম্যাট্রেস দিতে হবে রোগীকে। কিংবা ২ ঘণ্টা অন্তর একবার এপাশ, একবার ওপাশ করে শোওয়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে। ফলে শরীরের নির্দিষ্ট কোনও জায়গায় চাপ পড়বে না। ঘা হওয়ার প্রবণতাও কমবে।
এই প্রসঙ্গে জানাই, পুষ্টিকর খাদ্যগ্রহণও স্ট্রোক রোগীদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ যদি পুষ্টি ভালো না হয়, তাহলে ত্বকের তলায় যে ফ্যাট বা সাবকিউটেনিয়াস টিস্যু থাকে তা কমে যায় এবং ঘা হওয়ার প্রবণতা অনেক বেড়ে যায়। বিশেষ করে শরীরে অ্যালবুমিন বা প্রোটিনের মাত্রা কমে গেলে বেড সোর হওয়ার প্রবণতা অনেক বেড়ে যায়। সংক্রমণের সঙ্গে লড়াই করার প্রবণতাও হ্রাস পায়।
• ইউরিনের সমস্যা দেখা যায় অনেকের?
•• প্রস্রাব স্বাভাবিকভাবে ভালো না হলে ক্যাথেটার লাগাবার দরকার পড়ে। ক্যাথেটার কীভাবে ব্যবহার করতে হবে, তাও হাসপাতাল থেকে বাড়ি যাওয়ার আগে ভালো করে জেনে নিতে হবে।
এছাড়া কতদিন পর পর নল পরিবর্তন করতে হবে তা জানতে হবে। পুরুষের ক্ষেত্রে কন্ডোম ক্যাথেটার ব্যবহার করা হলে তা রোজ ধুয়ে ব্যবহার করতে হবে কি না জানা প্রয়োজন। জায়গাটা শুকনো রাখার দরকার কতটা, তাও বোঝা দরকার।
• স্ট্রোকে ফিজিওথেরাপির ভূমিকা?
•• দেখুন, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কোনও ফিজিওথেরাপিস্ট একবার এসে হয়তো রোগীর বাড়িতে ফিজিওথেরাপি করবেন। বাড়ির লোক বা পরিচর্যাকারীকেও ওই এক্সারসাইজগুলি শিখে নিতে হবে। ফিজিওথেরাপিস্ট চলে যাওয়ার পর বার তিন চারেক রোগীকে এক্সারসাইজগুলি করাবেন পরিচর্যাকারীরা। তাতে রোগীর উন্নতি আরও দ্রুত হবে।
শুধু লিম্ব ফিজিওথেরাপি নয়, দরকার রোগীর সঙ্গে একটানা কথোপকথন চালানোরও। স্ট্রোকের রোগীকে বাড়িতে রেখে পরিচর্যা করতে পারলে উন্নতি ভালো হয়। কারণ সেখানে পরিবারের লোকেরা থাকেন। তাঁরা কথা বলেন। আবেগ কাজ করে। রোগীর ব্রেনে যা উদ্দীপনা জাগায়। তাঁর সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনাও বৃদ্ধি পায়। এও দেখা গিয়েছে, মিউজিক থেরাপি অনেকক্ষেত্রেই খুব কাজে আসে।
চেস্ট ফিজিওথেরাপিও খুব গুরুত্বপূর্ণ।
কীভাবে পিঠের সামান্য ভঙ্গি পরিবর্তন করে, আলতো চাপড় দিয়ে কফ পরিষ্কার করা সম্ভব, সেগুলিও ফিজিওথেরাপিস্টের কাছে শিখে নেওয়া দরকার। কয়েকঘণ্টার ব্যবধানে এভাবে বুক থেকে কফ পরিষ্কার করতে পারলে নিউমোনিয়ার আশঙ্কা অনেকখানি কমে। কেননা অনেকক্ষণ শুয়ে থাকলে ফুসফুসে কফ জমার আশঙ্কা বেড়ে যায়। এইরকম অনেক প্রক্রিয়া থাকে যাতে ফিজিওথেরাপি করে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় মুভ করানো হয়।
বারান্দায় বা ঝুল বারান্দায় বসানোর মতো কাজ করা যায়। কিংবা একটু বিকেলবেলার দিকে এমন জায়গায় নিয়ে গিয়ে বসালেন যেখানে আরও পাঁচটা লোক আসে, কথা বলে। এভাবে স্ট্রোকের রোগী দ্রুত সামাজিক জীবনে ফেরানো যাবে ততই তাঁর উন্নতি হওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে।
এই কারণে পোস্ট হসপিটাল স্ট্রোক কেয়ার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে বাড়ির লোকের ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তাঁদের ইচ্ছা থাকলেই চিকিত্সকের সহযোগিতায় রোগীর শারীরিক উন্নতি করা সম্ভব।
• স্ট্রোক কী?
•• স্ট্রোক হল মস্তিষ্কের অসুখ। এই রোগে মস্তিষ্কের ধমনী আক্রান্ত হয়। ফলে ওই ধমনী মস্তিষ্কের যেখানে রক্ত সরবরাহ করে, সেখানে রক্তপ্রবাহ ব্যাহত হয়। সেই অংশের কোষগুলিতে পচন ধরতে থাকে ও মৃত্যু হতে থাকে। ব্রেনের সেই অংশের কাজকর্ম ব্যাহত হয়। এই স্ট্রোককে বলে ইনফার্কশন।
আরও এক ধরনের স্ট্রোকে ধমনী ফেটে গিয়ে রক্তপাত হয়। এই স্ট্রোককে বলে সেরিব্রাল হেমারেজ।
• স্ট্রোকের লক্ষণ কী কী?
•• স্ট্রোকের লক্ষণ বোঝার জন্য একটি নিমোনিক রয়েছে, যাকে বলা হয় বেলফাস্ট (বেলফাস্ট বা BELFAST)।
বি (B) = ব্যালান্স বা ভারসাম্য নষ্ট হওয়া।
ই (E) = আই বা চোখের দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যাওয়া।
এল (L) = লস অব কনশিয়াসনেস বা অজ্ঞান হয়ে যাওয়া।
এফ (F) =ফেস। হঠাত্ যদি মুখ বেঁকে যাওয়া।
এ (A) = আর্ম বা হাত বা পা কমজোরী বা অবশ হয়ে যাওয়া।
এস (S) =স্পিচ বা কথোপকথন আটকে যাওয়ার মতো জটিলতা বা বিভ্রান্ত বোধ করা।
টি (T) =টি-এর অর্থ হল টাইম বা সময় নির্ভরশীল চিকিত্সা। তাই সঠিক সময়ের মধ্যে রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারলে বাঁচবে জীবন।
• স্ট্রোক হয়েছে বুঝলে কী কী করবেন?
•• বাড়ির লোক যদি বোঝেন স্ট্রোক হয়েছে, দেরি না করে নিকটবর্তী একটি হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে যেখানে ২৪X৭ স্ট্রোকের চিকিত্সা হয়। মনে রাখবেন আউটডোর বা চেম্বার নয়, রোগীকে নিয়ে যান হাসপাতালের ইমার্জেন্সিতে।
চিকিৎসাশেষে রোগীকে নিয়ে যাওয়া হল বাড়িতে। তখন চিকিৎসা কেমন হবে?
•• খুব সহজ করে বললে, ব্রেনের ডান দিকের অংশ আমাদের শরীরের বামদিকের হাত পায়ের সঞ্চালন নিয়ন্ত্রণ করে। আবার ব্রেনের বাম দিকের অংশ আমাদের শরীরের ডানদিকের অংশকে নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে স্ট্রোক হলে মস্তিষ্কের সেই অংশটি শরীরের যে দিকটি নিয়ন্ত্রণ করে, তার কাজকর্ম ব্যাহত হতে পারে। তবে স্ট্রোকে ব্রেনের কোন অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে, তা আগে থেকে বলা সম্ভব নয়। দ্বিতীয়ত, তাঁর শরীরে কোন কোন সমস্যা দেখা দেবে, তাও আগে থেকে বোঝা যায় না। অতএব পোস্ট স্ট্রোক কেয়ার সকলের ক্ষেত্রে এক হবে না। তবে সাধারণভাবে কতগুলি বিষয় অবশ্যই মেনে চলা সম্ভব। যেমন— ক্লট স্ট্রোক বা ইনফার্কশন হলে চিকিৎসক নিশ্চিতভাবে রক্ত তরল করার ওষুধ যেমন অ্যাসপিরিন বা ক্লপিডোগ্রেল বা টিকাগ্রেলর জাতীয় ওষুধ দিতে পারেন রোগীকে। তৃতীয়ত চেষ্টা করতে হবে ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রণে রাখার। সেজন্য চিকিৎসকের দেওয়া ওষুধ নিয়মিত খেতে হবে। বাড়িতে প্রেশার মাপার যন্ত্র রাখলেও খুব ভালো হয়। কারণ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাঁদের রক্তচাপের বড় বেশি ওপর নীচ হয়। চতুর্থত রোগীর যদি ধূমপান, মদ্যপান বা কোনও নেশার দ্রব্যের প্রতি আসক্তি থাকে, তাহলে বাড়িতে ফেরার পর পুনরায় শুরু করবেন না। হাসপাতালেই যেন ত্যাগ করে আসেন সেই অভ্যেস। মনে রাখবেন স্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে স্মোকিং। কারণ স্মোকিং স্ট্রোক হওয়ার আশঙ্কা বাড়িয়ে দেয়। আসলে সিগারেটে, বিড়ির তামাকে অসংখ্য ক্ষতিকর পদার্থ থাকে যা ধমনীর গাত্রে প্লাক তৈরিতে সাহায্য করে। বাড়িয়ে দেয় ব্লাড প্রেশার।
এইবার আসবে ওষুধের কথা। ব্লাডপ্রেশার, কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণের ওষুধ অবশ্যই চিকিত্সকের পরামর্শ মতোই খেতে হবে। ডায়াবেটিস থাকলে ব্লাড সুগার কন্ট্রোলের ওষুধ বাদ দেওয়া যাবে না কোনওমতেই। তবে শুধু ওষুধ খেলেই চলবে কেন? তার সঙ্গে ব্লাড সুগার মাপার যন্ত্র দিয়ে মাঝেমধ্যেই পরীক্ষা করে দেখতে হবে রক্তে সুগারের মাত্রা। মাত্রা বেশি থাকলে অবশ্যই তা চিকিৎসককে জানাতে হবে। কারণ অনেক সময়েই স্ট্রোকের পরে সুগার বৃদ্ধির প্রবণতা দেখতে পাওয়া যায়।
• ডায়েটে কেমন নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন?
•• ডায়েটে নিয়ন্ত্রণ অবশ্যই প্রয়োজন, তবে দেখতে হবে স্ট্রোকের কারণে শরীরে কী ধরনের প্রভাব পড়েছে। যদি দেখা যায় স্ট্রোকের কারণে রোগী নিজের হাতে খাবার খেতে পারছেন না, শয্যাশায়ী হয়ে আছেন, রাইলস টিউবে খাবার খাচ্ছেন, সেইক্ষেত্রে ডাক্তারবাবুই একটা ডায়েট চার্ট করে দেন রোগীকে। নির্দিষ্ট খাবার পেস্ট করে খাওয়াতে বলেন। শুরুর দিকে কিছু ফর্মুলা ফিড দিলেও পরের দিকে আমরা বলি বাড়িতে তৈরি খাদ্য একসঙ্গে মিশিয়ে স্ম্যাশ বা তরল করে খাওয়ালে ভালো। এর ফলে খাদ্য দ্রুত হজম করতে পারবেন রোগী।
খাবারের মধ্যে প্রোটিন, লিপিডের মাত্রাও ডাক্তারবাবুরা নিয়ন্ত্রণ করে দেন। কিলোক্যালোরি হিসেবে খাদ্যগ্রহণের মাত্রার পরিমাপ করা হয়। স্ট্রোকের পরে দ্রুত সেরে ওঠার জন্য, এনার্জির বৃদ্ধির জন্য প্রোটিনের মাত্রা অনেক সময় বাড়ানোর দরকার পড়তে পারে। বাড়ির খাবার খেলে প্রোটিনের মাত্রার নিয়ন্ত্রণ পরিচর্যাকারীর হাতেই থাকে। এই কারণেই রোগকে হোম মেড ফুড খাওয়ার কথা বলা হয় বার বার।
ফলে ভাত, ডাল, মাছ, কখনও কখনও একটু চিকেন পেস্ট করে দিয়ে খাওয়ানো যেতে পারে। প্রয়োজনে অল্প মাত্রায় মাখন বা তেলও ব্যবহার করা যায়। তাতে রোগীর এনার্জির মাত্রাও অটুট থাকে। এবার একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হল, ধরা যাক আপনার এমন এক ধরনের স্ট্রোক হয়েছে, যাতে রোগী চলাফেরা করতে পারছেন না। তিনি শয্যাশায়ী। সেক্ষেত্রে বাড়িতে ফিজিওথেরাপি নিশ্চয় হবে। তার সঙ্গে বাড়ির লোককেও খেয়াল রাখতে হবে, যে বিছানায় রোগীকে শোয়ানো হচ্ছে তা যেন স্ট্রোক রোগী বান্ধব হয়। অর্থাত্ সম্ভব হলে এয়ার ম্যাট্রেস দিতে হবে রোগীকে। কিংবা ২ ঘণ্টা অন্তর একবার এপাশ, একবার ওপাশ করে শোওয়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে। ফলে শরীরের নির্দিষ্ট কোনও জায়গায় চাপ পড়বে না। ঘা হওয়ার প্রবণতাও কমবে।
এই প্রসঙ্গে জানাই, পুষ্টিকর খাদ্যগ্রহণও স্ট্রোক রোগীদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ যদি পুষ্টি ভালো না হয়, তাহলে ত্বকের তলায় যে ফ্যাট বা সাবকিউটেনিয়াস টিস্যু থাকে তা কমে যায় এবং ঘা হওয়ার প্রবণতা অনেক বেড়ে যায়। বিশেষ করে শরীরে অ্যালবুমিন বা প্রোটিনের মাত্রা কমে গেলে বেড সোর হওয়ার প্রবণতা অনেক বেড়ে যায়। সংক্রমণের সঙ্গে লড়াই করার প্রবণতাও হ্রাস পায়।
• ইউরিনের সমস্যা দেখা যায় অনেকের?
•• প্রস্রাব স্বাভাবিকভাবে ভালো না হলে ক্যাথেটার লাগাবার দরকার পড়ে। ক্যাথেটার কীভাবে ব্যবহার করতে হবে, তাও হাসপাতাল থেকে বাড়ি যাওয়ার আগে ভালো করে জেনে নিতে হবে।
এছাড়া কতদিন পর পর নল পরিবর্তন করতে হবে তা জানতে হবে। পুরুষের ক্ষেত্রে কন্ডোম ক্যাথেটার ব্যবহার করা হলে তা রোজ ধুয়ে ব্যবহার করতে হবে কি না জানা প্রয়োজন। জায়গাটা শুকনো রাখার দরকার কতটা, তাও বোঝা দরকার।
• স্ট্রোকে ফিজিওথেরাপির ভূমিকা?
•• দেখুন, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কোনও ফিজিওথেরাপিস্ট একবার এসে হয়তো রোগীর বাড়িতে ফিজিওথেরাপি করবেন। বাড়ির লোক বা পরিচর্যাকারীকেও ওই এক্সারসাইজগুলি শিখে নিতে হবে। ফিজিওথেরাপিস্ট চলে যাওয়ার পর বার তিন চারেক রোগীকে এক্সারসাইজগুলি করাবেন পরিচর্যাকারীরা। তাতে রোগীর উন্নতি আরও দ্রুত হবে।
শুধু লিম্ব ফিজিওথেরাপি নয়, দরকার রোগীর সঙ্গে একটানা কথোপকথন চালানোরও। স্ট্রোকের রোগীকে বাড়িতে রেখে পরিচর্যা করতে পারলে উন্নতি ভালো হয়। কারণ সেখানে পরিবারের লোকেরা থাকেন। তাঁরা কথা বলেন। আবেগ কাজ করে। রোগীর ব্রেনে যা উদ্দীপনা জাগায়। তাঁর সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনাও বৃদ্ধি পায়। এও দেখা গিয়েছে, মিউজিক থেরাপি অনেকক্ষেত্রেই খুব কাজে আসে।
চেস্ট ফিজিওথেরাপিও খুব গুরুত্বপূর্ণ।
কীভাবে পিঠের সামান্য ভঙ্গি পরিবর্তন করে, আলতো চাপড় দিয়ে কফ পরিষ্কার করা সম্ভব, সেগুলিও ফিজিওথেরাপিস্টের কাছে শিখে নেওয়া দরকার। কয়েকঘণ্টার ব্যবধানে এভাবে বুক থেকে কফ পরিষ্কার করতে পারলে নিউমোনিয়ার আশঙ্কা অনেকখানি কমে। কেননা অনেকক্ষণ শুয়ে থাকলে ফুসফুসে কফ জমার আশঙ্কা বেড়ে যায়। এইরকম অনেক প্রক্রিয়া থাকে যাতে ফিজিওথেরাপি করে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় মুভ করানো হয়।
বারান্দায় বা ঝুল বারান্দায় বসানোর মতো কাজ করা যায়। কিংবা একটু বিকেলবেলার দিকে এমন জায়গায় নিয়ে গিয়ে বসালেন যেখানে আরও পাঁচটা লোক আসে, কথা বলে। এভাবে স্ট্রোকের রোগী দ্রুত সামাজিক জীবনে ফেরানো যাবে ততই তাঁর উন্নতি হওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে।
এই কারণে পোস্ট হসপিটাল স্ট্রোক কেয়ার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে বাড়ির লোকের ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তাঁদের ইচ্ছা থাকলেই চিকিত্সকের সহযোগিতায় রোগীর শারীরিক উন্নতি করা সম্ভব।
সাক্ষাৎকার: সুপ্রিয় নায়েক
related_post
রাশিফল
-
আজকের রাশিফল
- post_by Admin
- জুন 25, 2025
অমৃত কথা
-
সেবা
- post_by বর্তমান
- জুন 25, 2025
এখনকার দর
-
নিফটি ব্যাঙ্ক
- post_by Admin
- জুন 24, 2025
-
নিফটি ৫০
- post_by Admin
- জুন 24, 2025
-
রুপোর দাম
- post_by Admin
- জুন 25, 2025
-
সোনার দাম
- post_by Admin
- জুন 25, 2025
-
ইউরো
- post_by Admin
- জুন 25, 2025
-
পাউন্ড
- post_by Admin
- জুন 25, 2025
-
ডলার
- post_by Admin
- জুন 25, 2025