বৃহস্পতিবার, 17 জুলাই 2025
Logo
  • বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই ২০২৫

নিট-এ কমল লাখেরও বেশি পরীক্ষার্থী, রাজ্যে ১০ হাজার, ডাক্তারি পড়ার আগ্রহ কি কমছে?

‘আমার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে’। ভারতচন্দ্রের অন্নদামঙ্গলের সেই বিখ্যাত লাইন বাঙালি জীবনের ইচ্ছা-অনিচ্ছার সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছে। 

নিট-এ কমল লাখেরও বেশি পরীক্ষার্থী, রাজ্যে ১০ হাজার, ডাক্তারি পড়ার আগ্রহ কি কমছে?

বিশ্বজিৎ দাস, কলকাতা: ‘আমার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে’। ভারতচন্দ্রের অন্নদামঙ্গলের সেই বিখ্যাত লাইন বাঙালি জীবনের ইচ্ছা-অনিচ্ছার সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছে। বাঙালির দীর্ঘদিনের ইচ্ছে, তাঁদের সন্তানকে ডাক্তার, নয়তো ইঞ্জিনিয়ার করতেই হবে! হাজার হাজার ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ ছাত্রছাত্রীর বেকার থাকা বা ন্যূনতম বেতনে চাকরি করার পর এখন সেই স্বপ্ন প্রায় ঘুচেই গিয়েছে। এবার কি তাহলে ডাক্তারিতে স্বপ্নভঙ্গের পালা শুরু হল? যেভাবে আসন বাড়ছে, ব্যাঙের ছাতার মতো প্রাইভেট মেডিক্যাল কলেজ হচ্ছে, অভিভাবকদের একাংশের আশঙ্কা, অচিরেই ডাক্তারির দশা ইঞ্জিনিয়ারিং-এর মতো অনিশ্চয়তায় পরিপূর্ণ হয়ে পড়তে পারে। নাহলে হুট করে কেনই বা শেষ ৭ বছরে এই প্রথমবার নিট পরীক্ষার্থীর সংখ্যা আগের বছরের তুলনায় একলপ্তে এক লাখেরও বেশি কমল? বাংলায় কমল ১০ হাজারেরও বেশি। নিটের আয়োজক কেন্দ্রীয় সংস্থা ন্যাশনাল টেস্টিং এজেন্সি (এনটিএ) সূত্রের খবর, ২০২৪ সালে নিট পরীক্ষার্থীর সংখ্যা (যাঁরা নাম নথিভুক্ত করেছিলেন) ছিল ২৪ লক্ষ ৬ হাজার ৭৯। পরীক্ষায় বসেছিলেন ২৩ লক্ষ ৩৩ হাজার ২৯৭ জন। সেখানে কিছুদিন আগে ফল প্রকাশিত হওয়া এবারের নিটে নাম নথিভুক্ত করেছিলেন ২২ লক্ষ ৭৬ হাজার ৬৯ জন। পরীক্ষায় বসেছিলেন ২২ লক্ষ ৯ হাজার ৩১৮ জন পরীক্ষার্থী। পরীক্ষার্থীর সংখ্যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ১ লক্ষ ৩০ হাজার (১ লক্ষ ২৯ হাজার ৯৯০ জন)। অন্যদিকে নিট পরীক্ষায় পরীক্ষার্থী কমেছে ১ লক্ষ ২৩ হাজার ৯৭০ জন। নিট পরীক্ষার্থীর সংখ্যা দেশের প্রথম দশ রাজ্যের অন্যতম হল বাংলা (অষ্টম)। সেই পশ্চিমবঙ্গ থেকে ২০২৪ সালে নিট পরীক্ষা দেওয়ার জন্য নাম লিখিয়েছিলেন ১ লক্ষ ২০ হাজার ৭০ জন। পরীক্ষায় বসেন ১ লক্ষ ১০ হাজার ৩৯৯ জন। সেখানে এ বছর বাংলা থেকে নিটে বসার জন্য নাম নথিভুক্ত করেন ১ লক্ষ ১৬ হাজার ১০৪ জন। আর শেষমেশ পরীক্ষায় বসছিলেন ১ লক্ষ ৬ হাজার ৬৭৫ জন। দুই ক্ষেত্রেই পরীক্ষার্থী কমেছে প্রায় ১০ হাজারের কাছাকাছি (৯৭৭১ এবং ৯৪২৯ জন)। 
নিট পরীক্ষার্থীদের অভিভাবকদের ফোরামের সদস্য রঞ্জন রায় বলেন, চিকিৎসা পেশায় স্থায়ী চাকরির নিরাপত্তা কই আর। প্রাইভেট প্র্যাকটিসেও এখন প্রচুর প্রতিযোগিতা। প্রচুর অপশনস মানুষের কাছে। ভবিষ্যতে ইঞ্জিনিয়ারিং-এর মতো দশা হতে চলেছে এই পেশায়। সংক্রামক রোগের তরুণ চিকিৎসক ডাঃ যোগীরাজ রায় বলেন, হবু চিকিৎসকদের কাছে অত্যন্ত কঠিন দিন আসছে। প্রতিযোগিতার বাজারে টিকে থাকার একটাই ফরমুলা, নিজেকে সেরা, আর সেরা করে তুলতে হবে। সিনিয়র ইএনটি সার্জন ডাঃ অর্জুন দাশগুপ্ত বলেন, আমরা যখন চিকিৎসক হয়েছি, তার সঙ্গে আজকের দিনের আকাশ পাতাল ফারাক। এখন অনেক অনিশ্চয়তা। আগের থেকে প্রতিষ্ঠিত হওয়া অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং। শুরুতেই মেডিক্যাল শিক্ষাও ঠিকমতো হচ্ছে না। কাজে নেমে দেখা যাচ্ছে, প্রতিযোগিতা প্রচুর। তারমধ্যে চাকরি নেই। সেটা ঘিরেই বাড়ছে চিন্তা।

রাশিফল