রবিবার, 20 জুলাই 2025
Logo
  • রবিবার, ২০ জুলাই ২০২৫

দেশজুড়ে মেডিক্যালে অনুমোদনের দুর্নীতি ফাঁস, হাওলায় লেনদেন, জালে ধর্মগুরু, প্রাক্তন ইউজিসি চেয়ারম্যান সহ ৩৬

এ যেন সর্ষের মধ্যেই ভূত! প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো থেকে শিক্ষক, কিছুই নেই মেডিক্যাল কলেজে। তবু বেআইনিভাবে জোগাড় হয়ে যেত ন্যাশনাল মেডিক্যাল কমিশনের অনুমোদন (এনএমসি)। 

দেশজুড়ে মেডিক্যালে অনুমোদনের দুর্নীতি ফাঁস, হাওলায় লেনদেন, জালে ধর্মগুরু, প্রাক্তন ইউজিসি চেয়ারম্যান সহ ৩৬

নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: এ যেন সর্ষের মধ্যেই ভূত! প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো থেকে শিক্ষক, কিছুই নেই মেডিক্যাল কলেজে। তবু বেআইনিভাবে জোগাড় হয়ে যেত ন্যাশনাল মেডিক্যাল কমিশনের অনুমোদন (এনএমসি)। অথচ এই এনএমসিই দেশের অ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসা শিক্ষার রক্ষাকর্তা। বাংলা সহ একাধিক রাজ্যের সরকারি মেডিক্যাল কলেজগুলির গুচ্ছ গুচ্ছ খুঁত বের করে তারা। ডাক্তারদের ৭৫ শতাংশের কম হাজিরায় কোটি কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চায়। ভূরি ভূরি পরিকাঠামোগত খামতির কথা বলে। সেই এনএমসি এবং তার ‘গুরুঠাকুর’ স্বাস্থ্যমন্ত্রকের অফিসারদের একাংশের বিরুদ্ধেই এবার দেশজুড়ে মেডিক্যাল শিক্ষায় কোটি কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ তুলল সিবিআই। মোট ৩৬ জন রাঘববোয়ালের বিরুদ্ধে দায়ের হয়েছে এফআইআর। ইউজিসির প্রাক্তন চেয়ারম্যান (২০১৮-’২১) ডি পি সিং, স্বঘোষিত ধর্মগুরু রবিশঙ্করজি মহারাজ, স্বাস্থ্যমন্ত্রকের আট অফিসার, এনএমসি’র ছয় কর্তা, একাধিক প্রাইভেট মেডিক্যাল কলেজের শীর্ষ কর্তা—কে নেই সেই তালিকায়! এই খবর ফাঁস হতেই তৃণমূল কংগ্রেসের নিশানায় মোদি সরকার। গোটা বিষয়টিকে ‘দেশের সবচেয়ে বড় মেডিক্যাল কেলেঙ্কারি’ আখ্যা দিয়ে বিজেপিকে একহাত নিয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল। 
সিবিআইয়ের অভিযোগ, বিভিন্ন প্রাইভেট মেডিক্যাল কলেজ সংক্রান্ত গোপনীয় ফাইল এবং তথ্যের ছবি সরকারি কম্পিউটার থেকে ‘চুরি’ করত স্বাস্থ্যমন্ত্রকের অফিসার-কর্মীদের একটি চক্র। তারপর ওইসব কলেজের কর্তাদের জানিয়ে দিত কবে পরিদর্শন, কারা পরিদর্শক। বিনিময়ে লক্ষ লক্ষ টাকা ঘুষ নিত তারা। সেটাও হাওলার মাধ্যমে। ফলে পরিদর্শনের আগেই জোগাড় হয়ে যেত ভুয়ো শিক্ষক, নকল রোগী। বায়োমেট্রিক হাজিরায় চলত নয়ছয়। পরিদর্শকদের সঙ্গেও চলত ‘সেটিং’। মোটা টাকার ঘুষের বিনিময়ে ‘পজিটিভ’ ইনস্পেকশন রিপোর্ট দিত তারা। জলভাত হয়ে যেত এমবিবিএস পঠনপাঠন বা আসন বৃদ্ধির অনুমোদন পাওয়া। মে মাসে এমনই অভিযোগে সিবিআইয়ের হাতে ১০ লাখ টাকা সমেত ধরা পড়েন মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজের অ্যানাটমির তৎকালীন বিভাগীয় প্রধান তথা এনএমসি’র পরিদর্শক ডাঃ তপনকুমার জানা। তখনই স্পষ্ট হয়, এই দুর্নীতির জাল বহুদূর ছড়িয়ে।         
ছত্তিশগড়ের রায়পুরে এসআরআইএমএসআর মেডিক্যাল কলেজে এনএমসি’র পরিদর্শনের সুবাদেই সামনে আসে এই কাণ্ড। এখানকারই চেয়ারম্যান ওই ধর্মগুরু। গত ৩০ জুন তাঁর কলেজে পরিদর্শনে যান কর্ণাটকের মাণ্ড্য ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল কলেজের অর্থোপেডিক বিভাগের প্রধান সহ চারজন। অভিযোগ, তারা সংশ্লিষ্ট কলেজের ডিরেক্টরের সঙ্গে সাঁট করেন। হাওলার মাধ্যমে ঘুষ চান ৫৫ লাখ টাকা। ওই পরিদর্শকদের হাতেনাতে গ্রেপ্তার করেছিল তদন্তকারীরা। তিন চিকিৎসক সহ মোট আটজন ধরা পড়ে জালে। সামনে আসে দেশের একাধিক রাজ্যে ছড়িয়ে রয়েছে এই চক্র। এই কেলেঙ্কারির তদন্তে এখনও পর্যন্ত ছত্তিশগড়, কর্ণাটক, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ ও দিল্লির ৪০ জায়গায় হানা দিয়েছে সিবিআই। এর মধ্যে পাঁচটিই বিজেপিশাসিত রাজ্য। এমনকী সূত্রের খবর, ওই ঘুষের টাকা থেকে ৭৫ লাখ খরচ করে রাজস্থানে হনুমান মন্দিরও বানানো হয়েছে।  

রাশিফল