বুধবার, 25 জুন 2025
Logo
  • বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫

মোবাইলের নেশা ছাড়িয়ে পড়াশোনায় মনোযোগী করে তুলবেন কীভাবে?

মোবাইল ফোন আসক্তি  বাড়ির খুদে সদস্যটিকে নিয়ে সকলের চিন্তা। তার শরীর বিগড়লেই বড়দের নাওয়া-খাওয়া শিকেয় ওঠে। একটু সচেতন হলেই এড়ানো সম্ভব বড়সড় বিপদ। এই পর্বে শিশুদের মোবাইল ফোন আসক্তি নিয়ে বললেন বিশিষ্ট শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ   ডাঃ সুজয় চক্রবর্তী। শুনলেন   অয়নকুমার দত্ত।
মোবাইলের নেশা ছাড়িয়ে পড়াশোনায় মনোযোগী করে তুলবেন কীভাবে?
মোবাইল ফোন আসক্তি  বাড়ির খুদে সদস্যটিকে নিয়ে সকলের চিন্তা। তার শরীর বিগড়লেই বড়দের নাওয়া-খাওয়া শিকেয় ওঠে। একটু সচেতন হলেই এড়ানো সম্ভব বড়সড় বিপদ। এই পর্বে শিশুদের মোবাইল ফোন আসক্তি নিয়ে বললেন বিশিষ্ট শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ   ডাঃ সুজয় চক্রবর্তী। শুনলেন   অয়নকুমার দত্ত।

প্রথমে বুঝতে হবে বাচ্চাদের মোবাইল ফোনের প্রতি আসক্তি বাড়ছে কেন? খেলার মাঠ, খোলা জায়গা কমতে কমতে একেবারে অবলুপ্তির পথে। আমাদের ছোটবেলায় বিকেল মানেই ছিল খেলার মাঠ। কিন্তু বিভিন্ন কারণে খেলাধুলোর চর্চা কার্যত বন্ধ হয়ে গিয়েছে। পাড়ার খেলার মাঠ দখল করে ফ্ল্যাট উঠে যাচ্ছে এটাও যেমন সত্যি, সেই সঙ্গে এটাও মানতে হবে, পাড়ার বাচ্চারা মিলেমিশে খেলাধুলো করুক, তাতে অভিভাবকদেরও তেমন কোনও আগ্রহ নেই। এখন নিউক্লিয়ার ফ্যামিলি, ফ্ল্যাট কালচার। আগেকার যুগে কোনও শিশুর বাবা-মা দু’জনেই কর্মব্যস্ত হলে সেই বাচ্চাটিকে সময় দেওয়ার মতো যৌথ পরিবারে কেউ না কেউ থাকতেন। উত্তর-আধুনিক নাগরিক জীবনে সকলেই নিজের কাজে ব্যস্ত। তাই বাচ্চা বাবা-মায়ের কাছ থেকে ‘কোয়ালিটি টাইম’ পাচ্ছে না। বাচ্চাকে সঙ্গ দিচ্ছে মোবাইল ফোন!
আগেকার সময়ে দাদু-ঠাকুরমা, জেঠু-জেঠিমা, কাকু-কাকিমারা থাকতেন। থাকত একগাদা তুতো ভাইবোন। বাচ্চার অবসর কাটত গল্প শুনে, বই পড়ে। আর এখন? বাচ্চা মানুষ হচ্ছে আয়ার কাছে। মা-বাবাও বাইরের লোককে ভরসা করে বলতে পারেন না, বাচ্চাটিকে পার্ক বা মাঠে ঘুরিয়ে আনতে। তাই শিশুর অবসর বিনোদনের মাধ্যম এখন মোবাইল ফোন।
আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, আমরা বড়রাও মোবাইলের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়েছি। দেখা যায়, মা-বাবাও সব সময় মোবাইল ঘাঁটছেন। অকারণে স্ক্রল করছেন। বাচ্চা যা দেখে, তাই শেখে। আমরা বাচ্চাদের বলি, মোবাইল ফোন না দেখার জন্য। কিন্তু নিজেদের ক্ষেত্রে করি ঠিক উল্টোটাই।
এছাড়া, কোভিডের সময় ভার্চুয়াল ক্লাস ইত্যাদির জন্য বাচ্চারা অনায়াসেই মোবাইল ফোন হাতে পেয়ে গিয়েছে। 
এখনও স্কুল বা টিউশনের বিভিন্ন পড়া, নোটস হোয়াটসঅ্যাপ অথবা বিভিন্ন সাইটের মাধ্যমে আসে। তাই অভিভাবকরা বাধ্য হন ছেলেমেয়ের হাতে মোবাইল ফোনটি দিতে। বাচ্চারা পড়ার মেটিরিয়ালগুলি দেখতে দেখতে এদিকওদিক সার্চ করা শুরু করে দেয়। কারণ মোবাইল হাতে থাকা অবস্থায় সবসময় তো তাদের উপর নজরদারি করা সম্ভব হয় না।
মোবাইল আসক্তির ক্ষতি
মোবাইল ফোন হাতে নিয়ে যখন একটি বাচ্চা অবসর সময় কাটাবে, তখন বুঝতে হবে তার শারীরিক অ্যাক্টিভিটি বলে আর কিছু অবশিষ্ট নেই। বাচ্চা ঘরকুনো হয়ে পড়ছে, ওবেসিটিতে ভুগছে। ফাস্ট ফুড খাওয়া আর ঘণ্টার পর ঘণ্টা মোবাইল দেখা এখনকার বাচ্চাদের জীবনের অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এযুগের বহু বাচ্চাকে টাইপ-টু ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হতে দেখা যাচ্ছে। অল্প বয়সেই হার্টের সমস্যা দেখা দেওয়ার আশঙ্কা থাকছে।
তাছাড়া দীর্ঘক্ষণ মোবাইলের দিকে তাকিয়ে থাকার ফলে বাচ্চার চোখে মাইনাস পাওয়ার চলে আসছে। রাস্তাঘাটে তাকালেই দেখা যায় খুদেদের চোখে চশমা। এছাড়া ড্রাই আইসের সমস্যা দেখা দেয়।
অনেক বাচ্চা মোবাইল ফোন নিয়ে রাতে ঘুমতে পর্যন্ত যায়। এক্ষেত্রে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। মনে রাখতে হবে, মানুষের জীবনে ঘুম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।
বেশি মোবাইল দেখলে বাচ্চার বিকাশ বাধাপ্রাপ্ত হয়। চিন্তা করার ক্ষমতা কমে যায়। ঠাকুরমার ঝুলির গল্প পড়ে একটা বাচ্চা দৈত্য, দানব কল্পনা করে। কিন্তু কার্টুনে যখন কিছু দেখবে, তখন তো কল্পনা করতে হয় না। ফলে কল্পনা শক্তিও নষ্ট হয়ে যায়।
ডিলেটড স্পিচও একটা বড় সমস্যা। একজন বড় কেউ কথা বলবেন, তার উত্তরে বাচ্চা কথা বলবে। এভাবেই বাচ্চা কথা বলা শেখে। মোবাইল ফোনের সঙ্গে তো কথা বলতে হয় না। শুধু দেখা আর শোনা। এর জন্য অনেক বাচ্চাই দেরিতে কথা বলতে শেখে।
অভিভাবকদের করণীয়:
 বেশি সময় দিতে হবে না, কিন্তু বাচ্চাকে ‘কোয়ালিটি টাইম’ দিন।
 খেলাধুলোয় উৎসাহ দিন। বিশেষ করে আউটডোর গেমে।
 গল্পের বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে সাহায্য করুন।
 আঁকা, নাচ, গান যে বাচ্চার আগ্রহ যেদিকে, সেই বিষয়গুলিতে উৎসাহ দিন। যাতে তারা অন্য ধরনের অ্যাকিটিভিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
 বাচ্চার সামনে অকারণে নিজেরা ফোন ঘাঁটবেন না।