বৃহস্পতিবার, 17 জুলাই 2025
Logo
  • বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই ২০২৫

কৃষ্ণ

কৃষ্ণ কে? তাঁর আসল পরিচিতিই বা কী? ‘কৃষ্ণ’ শব্দের একাধিক ব্যাখ্যা আছে। সংস্কৃত ‘কৃষ’ ধাতু থেকে কৃষ্ণ শব্দের উৎপত্তি। ‘কৃষ’ ধাতুর একটি মানে হ’ল কর্ষণ করা (to plough) অপর মানে হ’ল আকর্ষণ করা (to attract)। যে সত্তা বিশ্বের সকল সত্তাকে নিজের দিকে টানছেন, আকর্ষণ করছেন তিনিই কৃষ্ণ। 

কৃষ্ণ

কৃষ্ণ বিশ্বের প্রাণকেন্দ্র
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ গীতায় বলেছেনঃ—
“যে যথা মাং প্রপদ্যন্তে তাংস্তথৈব ভজাম্যহম্।
মম বর্ত্মানুবর্ত্তন্তে মনুষ্যাঃ পার্থ সর্বশঃ।।”
কৃষ্ণ কে? তাঁর আসল পরিচিতিই বা কী? ‘কৃষ্ণ’ শব্দের একাধিক ব্যাখ্যা আছে। সংস্কৃত ‘কৃষ’ ধাতু থেকে কৃষ্ণ শব্দের উৎপত্তি। ‘কৃষ’ ধাতুর একটি মানে হ’ল কর্ষণ করা (to plough) অপর মানে হ’ল আকর্ষণ করা (to attract)। যে সত্তা বিশ্বের সকল সত্তাকে নিজের দিকে টানছেন, আকর্ষণ করছেন তিনিই কৃষ্ণ। তাহলে কৃষ্ণ মানে বিশ্বের চক্রনাভি। ‘কৃষ্ণ’ শব্দের তৃতীয় অর্থটা হ’ল ‘ভূ’-বাচক অর্থাৎ যে সত্তা জীবের অস্তিত্ববোধের মধ্যে লুকিয়ে রয়েছেন তিনিই কৃষ্ণ। কৃষ্ণ আছেন, তাই আমি আছি আর কৃষ্ণ না থাকলে আমিও থাকছি না। অর্থাৎ কৃষ্ণের অস্তিত্বের ওপরই আমার অস্তিত্ব নির্ভর করছে।
তোমরা জান, প্রতিটি সত্তার জন্যে এক একটি বীজমন্ত্র আছে। অর্থাৎ প্রতিটি সত্তা বিশ্বে এক এক ধরনের স্পন্দন সৃষ্টি করে থাকে আর সেই বিশেষ ধরনের স্পন্দনটা হ’ল একটা বীজমন্ত্র (acoustic root)। সংস্কৃতে একে বলে বীজমন্ত্র। কৃষ্ণের বীজমন্ত্র হচ্ছে ‘কৢং’ (klrm)= ক+ঌ+অনুস্বার। কৃষ্ণের জন্যে ‘কৢং’ বীজমন্ত্র হবার হেতুটা কী? ‘ক’ হচ্ছে কার্যব্রহ্মের বীজমন্ত্র। পরমপুরুষ তাঁর দিব্যদেহ থেকে এই পরিদৃশ্যমান জগৎখানি সৃষ্টি করেন। তাই আমি বলে থাকি বিশ্বের প্রতিটি সত্তার অস্তিত্বই হ’ল দৈবী অস্তিত্ব। প্রতিটি ছেলে, প্রতিটি মেয়ে, প্রতিটি জীবিত সত্তাই পরম দৈবী সত্তার এক একটি অবতার। তাই কেউই ঘৃণ্য নয়, উপেক্ষণীয় নয়। সবাই পরমপিতার সন্তান। পরমপুরুষ যখন কোন কিছু সৃষ্টি করেন, সেই অবস্থার স্রষ্টা হিসেবে তিনিই হলেন কারণ ব্রহ্ম কারণ তিনিই তো সৃষ্টির মূল কারণ। তিনিই কারণ সত্তা আর তাঁর সৃষ্ট এই বিশ্ব হ’ল কার্যব্রহ্ম কারণ তিনিই কার্যস্বরূপ। কারণ ব্রহ্মের বীজমন্ত্র হ’ল ‘ওঁ’ আর কার্যব্রহ্মের বীজমন্ত্র হ’ল ক। তাই সংস্কৃত বর্ণমালায় ‘ক’ হ’ল আদি ব্যঞ্জন। আর্য-ভারতীয় বর্ণমালায় ‘ক’-কে ব্যঞ্জনের তালিকায় প্রথমেই রাখা হয়েছে। তার কারণ ‘ক’ ধ্বনিটি হ’ল সৃষ্ট বিশ্ব অর্থাৎ কার্যব্রহ্মের বীজমন্ত্র।
সংস্কৃত ‘ক’ শব্দের একাধিক অর্থ। ‘ক’ মানে বর্ণমালার আদি ব্যঞ্জন। ‘ক’ শব্দের অপর মানে জল যার পর্যায়বাচক অন্যান্য শব্দ হচ্ছে নীরম, তোয়ম্, উদকম্, পানীয়ম্, কম্বলম্ ইত্যাদি। ‘ক’ মানে পেলুম জল। সেদিন বলেছিলুম, যে ভূখণ্ড জল দিয়ে ঘেরা বা ঢাকা তার নাম ‘কচ্ছ’ (ক+ছদ+ড=কচ্ছ)। ভারতের পশ্চিমাঞ্চলের একটি অঞ্চলের নাম কচ্ছ। ‘ক’ শব্দের তৃতীয় মানে কার্যব্রহ্ম অর্থাৎ এই পরিদৃশ্যমান জগৎ। “কৃষ্ণ” শব্দের বীজমন্ত্র হ’ল ‘কৢং’। প্রথম বর্ণ হ’ল ‘ক’ কারণ এই ‘ক’-ই এই ব্যক্ত জগৎকে নিয়ন্ত্রণ করে, ভালবাসে। তাই বীজমন্ত্রের প্রথম অক্ষর হ’ল ‘ক’। এখন এই কৃষ্ণের অবস্থিতিটা কোথায়—ব্যোমতত্ত্বে, না অপতত্ত্বে, না তেজস্তত্ত্বে? না, তিনি সমস্ত জীবিত সত্তার মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছেন। সেই হিসেবে তিনি ভূতত্ত্ব বা ক্ষিতিতত্ত্বের মধ্যেও লুকিয়ে রয়েছেন। এই ক্ষিতিতত্ত্বের বীজমন্ত্র হ’ল ‘ল’। এই ‘ক’-কে যিনি নিয়ন্ত্রণ করছেন ও ‘ল’ অর্থাৎ ক্ষিতিতত্ত্বে যিনি লুকিয়ে রয়েছেন তিনি ‘কৢং’।
শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তির ‘আনন্দ বচনামৃতম্’ (৩য় খণ্ড) থেকে

রাশিফল