শনিবার, 17 মে 2025
Logo
  • শনিবার, ১৭ মে ২০২৫

মাছ-ভাতেই দিব্য আছি: কোয়েল মল্লিক

‘নাটের গুরু’ দিয়ে শুরু। ইন্ডাস্ট্রির এখন তিনি ‘মিতিন মাসি’। টলিউডের ‘গুড গার্ল’ কোয়েল মল্লিক জানালেন তাঁর রোগা থাকার নিনজা টেকনিক। শুনে এলেন মনীষা মুখোপাধ্যায়।

মাছ-ভাতেই দিব্য আছি: কোয়েল মল্লিক

‘নাটের গুরু’ দিয়ে শুরু। ইন্ডাস্ট্রির এখন তিনি ‘মিতিন মাসি’। টলিউডের ‘গুড গার্ল’ কোয়েল মল্লিক জানালেন তাঁর রোগা থাকার নিনজা টেকনিক। শুনে এলেন মনীষা মুখোপাধ্যায়।

 

 রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর ‘ছুটির আয়োজন’ কবিতায় লিখেছেন ভবানীপুরের এক তেতালা বাড়ির কথা। পুজোয় বেড়াতে যাওয়া নিয়ে সেখানে ‘সরু-মোটা গলায়’ জোর আলোচনা চলছে। ‘এবার আবুপাহাড় না মাদুরা/ না ড্যালহৌসি কিম্বা পুরী/ না সেই চিরকেলে চেনা লোকের দার্জিলিং।’ সাবেক কলকাতার ভবানীপুর মানেই সম্ভ্রান্ত কিছু জনপদ, যেখানে দুর্গাপুজো থেকে শুরু করে বাড়িসুদ্ধ বেরিয়ে পড়া— সবেতেই বনেদিয়ানার ছোঁয়াচ।
তেমনই এক বাড়ির মেয়ে আমাদের আজকের তারকা। ভবনীপুরের মল্লিকবাড়িতে কেটেছে তাঁর অনায়াস শৈশব ও কিশোরবেলা। আর পাঁচটা ছেলেমেয়ের মতোই ছোটবেলায় পড়াশোনার বাইরে নাচ-গানের চর্চা দেখেছেন বাড়িতে। বাবা ছিলেন ডাকসাইটে অভিনেতা। নিয়ম করে নাচ শেখা ও বিকেলে বন্ধুদের সঙ্গে টেনিস খেলা, নয়তো সাইকেল চালানো এই ছিল তাঁর বিনোদন। ফিটনেস, ছিপছিপে থাকা এইসব নিয়ে ভাবনা ভাবতে তখন বয়েই গেছে! বিকেলে সাইকেল নিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে টো টো আর সপ্তাহে কয়েকদিন নাচের অনুশীলনের মধ্যেই যাবতীয় শরীরচর্চা সেরে ফেলা যেত। ফিটনেস নিয়ে খেয়াল হল ২০০৩-এ ‘নাটের গুরু’ মুক্তি পাওয়ার পর। জিতের বিপরীতে সেটিই যে তাঁর প্রথম ছবি। 
তিনি রুক্মিণী মল্লিক! ভবানীপুর মল্লিক বাড়ির আদরের ‘কোয়েল’!
কোয়েল মল্লিকের শরীরচর্চা আলোচনায় আসে আজ থেকে কয়েক বছর আগে। সদ্য মা হওয়া কোয়েল যখন অনায়াসে ঝরিয়ে ফেলেন শরীরের বাড়তি মেদ। কথায় কথায় জানালেন, ‘আমি কিন্তু কোনওদিনই মেদ ঝরাতে হবে বা রোগা হতে হবে এমন ভেবে জিম করিনি। আমি ফিটনেস ফ্রিক, যেটুকু শরীরচর্চা করি, সবটাই ফিট থাকতে। তাতেই ছিপছিপে থাকি। মা হওয়ার পরেও ফিট থাকতেই জুম্বা করতে শুরু করেছিলাম। এই শরীরচর্চা নাচের ফর্মে হওয়ায় ওই সময় আমার তা করতেও ভালো লাগত। দেখলাম, এতে ভালো কাজ হচ্ছে। মা হওয়ার পর শরীরে যেটুকু মেদ জমে, তা কিন্তু একটু সচেতন হলে ঝরিয়ে ফেলা সম্ভব। অবশ্য অনেকেরই নানা শারীরিক প্রতিবন্ধকতা থাকে। তেমন থাকলে কিন্তু চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েই এক্সারসাইজ শুরু করুন। ওই সময় আমি কঠিন বা শারীরিক কসরত বেশি হবে, এমন কোনও এক্সারসাইজ করিনি। ততটা স্ট্রেন্থ বা ক্ষমতাও ছিল না। প্রথম মাস তিনেক জুম্বা করি। ধীরে ধীরে হালকা যোগাসন শুরু করি। মাস ছয়-সাত পর থেকে স্ট্রেন্থ ফিরে এলে পুরোদমে জিম শুরু করি। এতেই কাজ হয়।’
শুধুই কি এক্সারসাইজ? নাকি যোগাসন? কোয়েল জানালেন, তিনি দুটোতেই আছেন। নিজের ফিটনেস ট্রেনার ওয়াকফের কাছেই স্ট্রেচিং থেকে শুরু করে প্রয়োজনীয় যোগাসন ও জিমে স্ট্রেন্থ বাড়ানোর এক্সারসাইজ করেন তিনি। কার্ডিও করতে ভালোবাসেন না। তার চেয়ে পায়ের পেশি, হাতের পেশি মজবুত করার ব্যায়াম, স্ট্রেন্থ, ওয়েট ট্রেনিংই বেশি পছন্দের। তবে এক-একজনের শরীরের প্রয়োজন অনুযায়ী এক্সারসাইজ করা উচিত। এটি ভালো কোনও প্রশিক্ষকের পরামর্শ নিয়ে করা উচিত। 
আর খাওয়াদাওয়ার কোনও বাছবিচার নেই? কোয়েল জানালেন, আলবাত তা আছে। এমনিতেই ইন্ডাস্ট্রির মানুষ হওয়ায় বেসিক একটা ডায়েট তিনিও মেনে চলেন। তবে তা মোটেও সেদ্ধ খাবার বা দুর্লভ কিছু খাবারে ঠাসা নয়। বরং আর পাঁচজন বাঙালির মতোই সহজলভ্য উপাদানে তৈরি রোজকার বাঙালি বাড়িতে খাবারের পদই।  
ভাত থাকে তাঁর ডায়েটে। শরীরের শক্তি ধরে রাখার জন্য ভাতে ভরসা করেন তিনি। একবারে তা বাদ দিয়ে ডায়েট সাজাননি কোনওকালেই। সকালে ওটস, ওমলেট এইসব দিয়েই সারেন ব্রেকফাস্ট। এরপর ঘণ্টা খানেকের জিম। ফিরে এসে কলা, পাকা পেঁপে বা আপেলের মতো কিছু ফল। দুপুরে ডাল-ভাত-সব্জি ও মাছ বা মাংস দিয়ে খাওয়া সারেন। তবে স্যালাড ও সব্জি তাতে মাস্ট! 
ছোট থেকে বাবা রঞ্জিত মল্লিককে দেখেছেন, পরিমিত আহার করতে। কোয়েল নিজেও রপ্ত করেছেন সেই অভ্যেস। যা-ই খান, তেল-মশলা এড়িয়ে চলেন ও অল্প খান। তবে তেল ছাড়া খাবারে তাঁর কোনও সায় নেই। 
বললেন, ‘অল্প তেল না দিলে ত্বকের গ্ল্যামার, শরীরের তরতাজা ভাবে ঘাটতি পড়ে। শ্যুটিংয়ে খুব পরিশ্রম হয়। তাই অল্প তেল না খেলে এনার্জি বের হয় না। তবে অবশ্যই তা খুব পরিমিত পরিমাণে। ডুবো তেলে ভাজা যে কোনও খাবার এড়িয়ে চলি। সেটা খুবই ক্ষতিকর। আবার বাড়ি থাকলে বিকেলের খাবারে একটু মুড়িমাখাও খাই, তাতেও অল্প তেল  দেওয়া থাকে। আর যেসব খাবার একটানা খেয়ে যেতে পারব না, সেসব ডায়েটে রাখিই না। যেমন একটানা সেদ্ধ খেতে পারব না। তাই আমার ডায়েটেও অত সেদ্ধটেদ্ধ নেই।’ 
তবে বিকেল গড়িয়ে ঘড়ির কাঁটা ৮টা ছুঁলেই রাতের খাবার খেয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন অভিনেত্রী। একটি রুটি, খানিকটা সব্জি, চিকেন দিয়েই সারেন নৈশভোজ। ‘শ্যুটিংয়ের সময় আউটডোরে যখন থাকি, আমি কিন্তু সেটের খাবারই খাই। আমার মনে হয়, সেটের খাবার যথেষ্ট পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যকর। ডাল-ভাত সহজেই পাওয়া যায়। অসুবিধাও হয় না।’
আর বাড়িতে পুজোর দিনগুলোয়? বাঙালি মানেই পুজোর সময় কিছুটা নিয়ম তো ভাঙতেই হয়? একগাল হেসে জানালেন, ‘আরে শুধু পুজো নয়। রবিবার আমার চিট ডে। সেদিনও নিয়ম ভেঙে খাই। তবে আমার মূল মন্ত্র একটিই— পরিমাণ যেন কম হয়। আর পুজোর সময় বাড়িতে এতরকম কাজ থাকে, এত হইহই, ছুটোছুটি, খাবার কোন ফাঁকে হজম হয়ে যায়, টেরই পাই না! ওই অনিয়ম গায়েও লাগে না তেমন। একটা সময় ক্লাসিক্যাল নাচ শিখেছিলাম। আজও অনুশীলন করি। তবে কবীর হওয়ার পর অতটা সময় পাই না। তবে ইভেন্ট থাকলে অনুশীলন করতেই হয়। তখন নাচটাও এক্সারসাইজের কাজ করে।’
আমজনতার সুস্থতার জন্য কোনও টেক হোম মেসেজ আছে নাকি?
কোয়েল বললেন সেই চিরচেনা কথাই যা চিকিৎসকরাও অনবরত বলে থাকেন সকলকে। ‘শারীরিক কসরত বা এক্সারসাইজের জন্য দিনে একটা ঘণ্টা রাখতেই হবে। নিজের পছন্দমতো এক্সারসাইজ করুন। কিন্তু তা যেন রুটিন থেকে বাদ না যায়। পরিমিত খাবার খান। খাবারের সময়টা খুব ঘড়ি মেপে চলুন। আর সময় মতো ঘুমোন। মন ভালো রাখুন। এই ক’টি মন্ত্র মনে রাখলেই আপনার মেদ ভয়ে পালাবে!’

 

ফিটনেস ফান্ডা
• হাইট: ৫ ফুট ৩ ইঞ্চি
• ওয়েট: ৫১ কেজি
• ডায়েট: সহজপাচ্য বাড়ির খাবার। আমিষ-নিরামিষ মিলিয়ে
• কতক্ষণ জিমে: সোয়া ১ ঘণ্টা থেকে ১ ঘণ্টা মতো
• কী কী এক্সারসাইজ: স্ট্রেন্থ বাড়ানোর এক্সারসাইজ বেশি। 
• যোগা কী কী: জিম শুরুর আগে স্ট্রেচিং সহ বিভিন্ন যোগা
• জল কতটা: মেপে খাই না, 
একটু বেশিই হাইড্রেটেড থাকি
• হেলথ ড্রিঙ্ক: খাই না
• ত্বকের যত্ন: ক্লিনজিং, ময়েশ্চোরাইজিং রোজ। ভালো সানস্ক্রিন ব্যবহার করা
• চুলের যত্ন: সপ্তাহে একদিন তেল, একদিন অন্তর শ্যাম্পু-কন্ডিশনিং
• মন ভালো রাখতে: ছেলের সঙ্গে সময় কাটাই
• অবসরে কী করেন: আড্ডা, সিরিজ বা সিনেমা দেখা, মা-বাবার সঙ্গে ফোনে বকবক
• ভেগানে বিশ্বাস আছে: বিশ্বাস না করার কিছু নেই। তবে আমি নয়, খুব একটা চাইছিও না হতে।
• হেলথ চেকআপ ক’বার: বছরে দু’বার
• বড় কোনও অসুখ: এখনও নয়।
• প্রিয় পদ: বাঙালি রান্নাই মূলত। নইলে চাইনিজ বা কন্টিনেন্টাল
• প্রিয় ডেজার্ট: হেজেলনাটের চকোলেট
 • চিট ডায়েট: প্রতি রবিবার
• যোগা না জিম: দুটোই
• সিক্স প্যাক না ফিটনেস: ফিটনেস
• সাপ্লিমেন্ট না খাবার: মূলত খাবার
• চিকেন না মাটন: ভালোবাসি মাটন, বেশি খাই চিকেন