এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমের প্রশংসায় পঞ্চমুখ জম্মু-কাশ্মীরের বাসিন্দারা
সেনা ও তাদের হাতে থাকা যন্ত্রের মিলিত শক্তিতেই পাকিস্তানের ছোড়া আত্মঘাতী ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা আটকে দিতে সক্ষম হয়েছে ভারত। বুধবার রাত থেকেই একাধিকবার আকাশপথে হামলার চেষ্টা করেছিল পাক সেনা। টার্গেট করেছিল জম্মু ও কাশ্মীরের বিভিন্ন সেনাঘাঁটিগুলিকে।
ফিরদৌস হাসান, শ্রীনগর: সেনা ও তাদের হাতে থাকা যন্ত্রের মিলিত শক্তিতেই পাকিস্তানের ছোড়া আত্মঘাতী ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা আটকে দিতে সক্ষম হয়েছে ভারত। বুধবার রাত থেকেই একাধিকবার আকাশপথে হামলার চেষ্টা করেছিল পাক সেনা। টার্গেট করেছিল জম্মু ও কাশ্মীরের বিভিন্ন সেনাঘাঁটিগুলিকে। কিন্তু একবারের জন্যও সফল হতে পারেনি তারা। প্রতিটি ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র মাটির কাছাকাছি আসার আগেই ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। আর তারপর থেকেই প্রশংসা কুড়োচ্ছে ভারতের এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম। একইসঙ্গে সেগুলিকে বুদ্ধির সঙ্গে ব্যবহারের জন্য সেনাকর্তা ও জওয়ানদেরও প্রশংসা করছে কাশ্মীরের সাধারণ মানুষ। তবে পাকিস্তান মরিয়া হয়ে যেভাবে গোলাগুলি ছুড়তে শুরু করেছে, তারপর পুরোপুরি নিশ্চিন্ত হতে পারছেন না কাশ্মীর উপত্যকার মানুষ। খাবার, জ্বালানি ও রান্নার গ্যাস মজুত করতে শুরু করেছেন। আশঙ্কা করছেন, সীমান্তে ফের উত্তেজনা বাড়তে পারে।
জম্মুতে যে কোনও ধরনের হামলা মোকাবিলার দায়িত্বে রয়েছে ৯ কোর ও ২৬ ইনফ্যান্ট্রি ডিভিশন। এই ডিভিশনের অপর নাম ‘টাইগার ডিভিশন’। তারাই এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে রয়েছে। হামাসের বিরুদ্ধে ইজরায়েল যেভাবে তাদের আকাশসীমা ‘আয়রন ডোম’ দিয়ে সুরক্ষিত রেখেছে, একইভাবে ভারতের আকাশপথও এখন সুরক্ষার দায়িত্বে রয়েছে রাশিয়ায় তৈরি এস-৪০০ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম। জম্মুর গারখানের বাসিন্দা সিকন্দর সিং বলেন, ‘পাকিস্তানের এত বড় আক্রমণ থেকে সেনা যেভাবে আমাদের রক্ষা করেছে, তার জন্য ঋণী থাকব। আমরা কোনওদিন ভাবিনি বোমা আকাশেই ধ্বংস করে দেওয়া যেতে পারে। নাহলে বড় ক্ষয়ক্ষতি হতে পারত।’ সিকন্দর সহ তাঁর গ্রামের ৫০০টি পরিবারকে মিসরিওয়ালায় নিরাপদ ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন ঠিক সময়ে সাইরেন ও ব্ল্যাক আউট করে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে বলে মন্তব্য করেছেন অরবিন্দ কাউল বলে এক ব্যবসায়ী। পারগওয়াল গ্রামের বাসিন্দা সুরিন্দর কুমারের বক্তব্য, ‘পাকিস্তান যখন আক্রমণ করছিল, তখন খুব ভয় পেয়েছিলাম। কিন্তু এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম সেই ভয় দূর করে দিয়েছে। সেনাকে নিয়ে আমরা গর্বিত।’ জম্মু ও কাশ্মীর পুলিসের প্রাক্তন ডিজি এস পি বৈদ জানান, জম্মু ও অন্যান্য জায়গায় ৫০ থেকে ৬০ বার হামলা চালানোর চেষ্টা করেছিল পাকিস্তান। কিন্তু এত বড় হামলার পরেও কারও গায়ে কোনও আঁচড় লাগেনি।
তবে, এই সংঘাত কবে শেষ হবে, তা নিয়ে সন্দিহান কাশ্মীরের বাসিন্দারা। তাই যতটা সম্ভব প্রয়োজনীয় সামগ্রী কিনে নিয়ে মজুত করতে শুরু করেছেন। নৌশেরার বাসিন্দা নাজির আহমেদ হাতে খাদ্যসামগ্রী ভর্তি ব্যাগ নিয়েই বললেন, ‘করোনার সময়েও কাউকে এত মরিয়া হতে দেখিনি। আমার স্ত্রী সকাল থেকে ফোন করছেন। তাড়াতাড়ি বাজারে গিয়ে দেখি প্রায় সব কিছুই শেষ। চাল, ডাল, গ্যাস সিলিন্ডার-যে যা পেরেছে মজুত করেছে।’ শ্রীনগরের বহু পেট্রল পাম্পেও গাড়ির লম্বা লাইন দেখা গিয়েছে। পাম্পের কর্মীরা জানিয়েছেন, দৈনিক জ্বালানি বিক্রির পরিমাণ তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। কেউ কেউ জ্যারিকেনে করেও তেল কিনে নিয়ে গিয়েছেন। একই পরিস্থিতি ব্যাঙ্ক, এটিএমগুলির সামনেও। লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে টাকা তুলছেন সকলে। ফারুক আহমেদ নামে এক স্কুলশিক্ষক বলেন, ‘পুরো বেতন তুলে নিয়েছি। কারণ এর আগেও দেখেছি, বিপদের সময় এটিএম কাজ করে না।’
তবে আতঙ্কের কারণ নেই বলে বারবার আশ্বাস দিয়েছে প্রশাসন। খাদ্য সরবরাহ ও উপভোক্তা দপ্তরের ডিরেক্টর আব্দুল রশিদ ওয়ার বলেন, ‘কাশ্মীরের জন্য যথেষ্ট পরিমাণে খাদ্যসামগ্রী মজুত রয়েছে। খাবার মজুত করার কোনও প্রয়োজন নেই। শ্রীনগর-জম্মু হাইওয়ে খোলা হয়েছে। তাই যে কোনও সামগ্রী উপত্যকায় আনতে কোনও বাধা নেই।
