শনিবার, 17 মে 2025
Logo
  • শনিবার, ১৭ মে ২০২৫

এই গরমে ঘরে বসেই স্বাস্থ্যকর ডেজার্ট

স্বাস্থ্যকর এবং সম্ভবত পুষ্টিকর ডেজার্ট হল সেই খাদ্য, যা মিষ্টি খাদ্যের প্রতি দুর্বার আকর্ষণকে তৃপ্ত করে, আবার যার মধ্যে ক্যালোরির মাত্রাও থাকে সামান্য। সমস্যা হল ভারতীয় খাদ্যাভ্যাসে ১০০ গ্রাম ডেজার্টে ক্যালোরির মাত্রাই থাকে ৪৫০ থেকে ৫০০ ক্যালোরি! তবে যখন আমরা স্বাস্থ্যকর শব্দটি যোগ করব, তখন ক্যালোরির মাত্রা অন্তত অর্ধেক করতেই হবে। 

এই গরমে ঘরে বসেই স্বাস্থ্যকর ডেজার্ট

স্বাস্থ্যকর এবং সম্ভবত পুষ্টিকর ডেজার্ট হল সেই খাদ্য, যা মিষ্টি খাদ্যের প্রতি দুর্বার আকর্ষণকে তৃপ্ত করে, আবার যার মধ্যে ক্যালোরির মাত্রাও থাকে সামান্য। সমস্যা হল ভারতীয় খাদ্যাভ্যাসে ১০০ গ্রাম ডেজার্টে ক্যালোরির মাত্রাই থাকে ৪৫০ থেকে ৫০০ ক্যালোরি! তবে যখন আমরা স্বাস্থ্যকর শব্দটি যোগ করব, তখন ক্যালোরির মাত্রা অন্তত অর্ধেক করতেই হবে। আমরা আজকের স্বাস্থ্যকর ডেজার্টের আলোচনায় তেমনই কিছু খাদ্য নিয়ে আলোচনা করব।
১. মিষ্টি আলুর হালুয়া: এই হালুয়া তৈরির সরঞ্জাম অতি সহজেই মেলে। হালুয়া বানাতে প্রয়োজন হবে ২৫০ গ্রাম মিষ্টি আলু বা রাঙা আলু, লো ফ্যাট মিল্ক ৫০০ এমএল, ৫ গ্রাম ঘি, দুটো এলাচের গুঁড়ো, এক চিমটে হলুদ, কয়েকটি কাজু, আমন্ড ও কিসমিসের টুকরো।
প্রণালী: প্রথমে একটি পাত্রে জল নিয়ে রাঙা আলুর টুকরোগুলিকে সেদ্ধ করে নিন। আলু সেদ্ধ হয়ে গেলে জল ঝরিয়ে স্ম্যাশ করে নিন। 
এবার গ্যাসে কড়াই বসিয়ে ঘি দিন। ঘি গরম হলে দিন আলু। এবার শুকনো শুকনো করে আলু ভেজে নিন। দিন এক চিমটে মতো হলুদ। এরপর দিন এলাচ গুঁড়ো। যোগ করুন দুধ। দুধ ও আলু ফুটতে দিন। খুন্তি দিয়ে নাড়তে থাকুন ক্রমাগত। একসময় দুধ শুকিয়ে যাবে ও আলু এবং দুধ ঘন হয়ে উঠবে। এই অবস্থাতে কড়াইয়ে দিন কাজু, কিসমিস ও আমন্ডের টুকরো। ব্যস তৈরি হয়ে গেল আপনার স্বাস্থ্যকর ডেজার্ট।  
কেন স্বাস্থ্যকর: প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে রাঙা আলুতে। ইনফ্ল্যামেশন কমে। রাঙা আলু খেলে জরা রোধ করতেও উপযোগী। রোধ করতে পারে একাধিক ক্যান্সার।
২.  মুগ ডালের হালুয়া: যে ডেজার্টে প্রচুর প্রোটিন থাকে, সেই ডেজার্ট নিঃসন্দেহে পুষ্টিকর। মুগ ডালে যথেষ্ট প্রোটিন রয়েছে। নিন এক কাপ মতো সোনামুগের ডাল। মুগ ডাল ধুয়ে নিন। ঘণ্টা তিনেকের জন্য ভিজিয়ে রাখুন। এরপর জল ছেঁকে নিয়ে মিক্সার গ্রাইন্ডারে ডাল দিন ও সামান্য জল দিয়ে লেই তৈরি করুন।
এরপর গ্যাসে কড়াই চাপান ও কড়াই গরম হলে সামান্য ঘি দিন। ঘি গলে গেলে তার মধ্যে দিন মুগ ডালের লেই। ভালো করে ভেজে নিন ঘিয়ের সঙ্গে ডাল। আর হ্যাঁ, পুরো রান্নাটা করতে হবে হালকা আঁচে। সর্বক্ষণ খুন্তি দিয়ে নাড়িয়ে যেতে থাকুন। একটা সময় কড়াইয়ে ডাল অনেকখানি শুকিয়ে যাবে। একেবারে ঝুরঝুরে হয়ে গেলে এক চামচ সুজি যোগ করুন। এবার ডালের সঙ্গে যোগ করুন এককাপ দুধ আর তিন কাপ জল। ক্রমাগত খুন্তি দিয়ে নাড়তে থাকুন। এইভাবে নাড়িয়ে নাড়িয়ে ক্রমাগত মেশাতে থাকুন। খেয়াল করবেন যেন দলা তৈরি না হয়ে যায়।
বেশ কিছুক্ষণ খুন্তি দিয়ে নাড়াচাড়া করার পর ৪-৫টা এলাচের দানা যোগ করুন। এরপর যোগ করুন কয়েকটা কাজু, কিসমিস, আমন্ডের টুকরো। আরও কিছুক্ষণ নাড়াতে থাকুন। এবার সার্ভ করে দিন সুস্বাদু এই হালুয়া। খুব সাবধান, একবার দিলে কিন্তু সকলে বারবার চাইবে!
৩. ওটসের লাড্ডু: ছোট-বড় সকলের জন্যই দারুণ উপাদেয় পুষ্টি বোমা— ওটসের লাড্ডু। এই ডেজার্ট তৈরির উপকরণও সামান্য! প্রয়োজন হয় গুড়, ওটস, বাদাম এবং সামান্য মাত্রায় ঘি।
প্রণালী: প্রথমে এককাপ ওটস নিন। এই ওটস কড়াইয়ে অল্প আঁচে ভেজে নিন ৪ থেকে ৫ মিনিট। এবার একটা গ্রাইন্ডারের সাহায্যে পাউডার করে নিন। এইবার অন্য একটি কড়াইয়ে দিন এক চামচ ঘি। ঘি গলে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। তারপর দিন কিছু কাজুবাদামের টুকরো। চার পাঁচটা কাজুবাদাম কুচি করে দিলেই চলবে। ১ মিনিট মতো বাদাম ভেজে নিয়ে এরপর কড়াইয়ে দিন ১ কাপের মতো খেজুরের গুড়। সঙ্গে দিতে পারেন সামান্য জল। মাঝারি আঁচে গুড় গলে গেলে দিতে পারেন আধ কাপ নারকেল কোরা। ভালো করে নেড়েচেড়ে নিন যাতে নারকেল ও গুড় ভালোভাবে মিশে যায়। এরপর কড়াইয়ে মেশান গুঁড়ো ওটস। নারকেল ও ওটস-এর সঙ্গে সবকিছু ভালোভাবে মিশে গেলে আঁচ বন্ধ করে দিন ও উপকরণগুলি অন্য একটি পাত্রে নিয়ে নিন। গরম থাকা অবস্থাতেই ওই লেইকে হাতের চাপে লাড্ডুর আকার দিন।
এই লাড্ডুই আবার ঘি, তেল, দুধ ছাড়াই বানানো যেতে পারে। এক্ষেত্রে ওটস ভাজা ও গুঁড়ো করার পরে তার সঙ্গে কয়েকটা রোস্টেড আমন্ডের গুঁড়ো মিশিয়ে দিন। তার সঙ্গে যোগ করুন বীজ বের করে নেওয়া খেজুরের পেস্ট। এবার খেজুরের পেস্ট, ওটস গুঁড়ো, আমন্ড বাদামের গুঁড়ো একসঙ্গে মাখান ভালো করে। তবে পাকানোর সময় মণ্ড ভেঙে যেতে পারে। 
এই মিশ্রণের সঙ্গে দুই টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে নিন। মিশিয়ে নেওয়ার আগে মধু হালকা গরম করে নিতে পারেন। এবার হাতে সামান্য ঘি মেখে নিয়ে চাপ দিয়ে তৈরি করুন লাড্ডু। 
কেন স্বাস্থ্যকর: ওটস-এ আছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার। ফলে অল্প খেলেই পেট ভরে যায়। বারবার খিদে পায় না। এছাড়া ওটসে রয়েছে রাইবোফ্ল্যাভিন, ভিটামিন বি৬, প্রোটিন, ম্যাগনেশিয়াম, ক্যালশিয়াম, আয়রন, ফসফরাস, সেলেনিয়াম ইত্যাদি। গুড়েও রয়েছে আয়রনের মতো অত্যন্ত উপকারী উপাদানগুলি। আবার যদি খেজুর, আমন্ড ও মধুর সাহায্যে লাড্ডু করেন, তাহলে তো পুষ্টির মাত্রা বাড়বে বই কমবে না। এছাড়া আমন্ডে রয়েছে প্রোটিন, ফাইবার ও বেশ কয়েকটি খনিজ পদার্থ। ক্যালশিয়াম, কপার, ম্যাগনেশিয়াম, ভিটামিন ই ও রাইবোফ্ল্যাভিন হাড়ে শক্তি জোগানোর পাশাপাশি শরীরের প্রয়োজনীয় খনিজের জোগান দেয়। এছাড়া আমন্ডে রয়েছে আয়রন‌, পটাশিয়াম, জিঙ্ক ও ভিটামিন বি। আবার যদি খেজুর মেশান, পেয়ে যাবেন প্রোটিন, ক্যালশিয়াম, ফাইবার। মধু মেশালে বাড়তি পুষ্টি উপাদান হিসেবে পাবেন অ্যামাইনো অ্যাসিড, খনিজ লবণ, এনজাইম, ভিটামিন বি-১, ভিটামিন বি-২, ভিটামিন বি-৩, ভিটামিন বি-৫, ভিটামিন বি-৬, আয়োডিন, জিঙ্ক, আয়রন, কপার এবং বিভিন্ন অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল উপাদান।
শেষ কথা: বেশিরভাগ ভারতীয় ডেজার্টই তৈরি হয় খুব সাধারণ কিছু উপাদান দিয়ে। উপকরণের মধ্যে থাকে দুধ, গুড়, ঘি, আমন্ডস, সুজি ইত্যাদি। আরও কিছু উপাদানও থাকে। তবে তা থাকে স্বাদ ও গন্ধ বৃদ্ধির জন্য। সুতরাং মেন কোর্স খাওয়ার পর বাড়িতে তৈরি ডেজার্ট একটু খেলে পেট ভরার তৃপ্তি পেতে পারেন। আর হ্যাঁ, একটা কথা সত্যি যে কিনে খাওয়ার তুলনায় ঘরে তৈরি ডেজার্ট অনেক বেশি স্বাস্থ্যকর ও সুস্বাদু হয়। 
লিখেছেন সুপ্রিয় নায়েক