নিজের দুর্বলতা চিনে নিজেই কাটাবেন কীভাবে?
মানুষ শান্তির জন্য চাতকের মতো ঘুরে বেড়াচ্ছে। অথচ তীব্র অতৃপ্তির দহ ক্রমশ তাদের টেনে নিচ্ছে অনিশ্চিত অতলে! পরম আনন্দময় জীবনে ফেরার আলোকবিন্দু কোথায় তবে? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই শুরু হয়েছে নতুন বিভাগ। এবারে দিশা দেখালেন স্বামী স্তবপ্রিয়ানন্দজি মহারাজ।

বর্তমান ওয়েবডেস্ক
এপ্রিল ২২, ২০২৫
মানুষ শান্তির জন্য চাতকের মতো ঘুরে বেড়াচ্ছে। অথচ তীব্র অতৃপ্তির দহ ক্রমশ তাদের টেনে নিচ্ছে অনিশ্চিত অতলে! পরম আনন্দময় জীবনে ফেরার আলোকবিন্দু কোথায় তবে? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই শুরু হয়েছে নতুন বিভাগ। এবারে দিশা দেখালেন স্বামী স্তবপ্রিয়ানন্দজি মহারাজ।
শ্রী শ্রী মায়ের অন্তিম কথা হিসেবে
যে বাণীটিকে ধরা হয় সেখানে মা বলছেন— ‘যদি শান্তি চাও..., কারও দোষ দেখো না। দোষ দেখবে নিজের। জগত্কে আপনার করে নিতে শেখ, কেউ পর নয়, জগৎ তোমার।’ এখানে একটা ছোট্ট অংশ আছে— দোষ দেখবে নিজের। আমরা তো নিজেকে সবচাইতে বেশি ভালো করে চিনি। নিজের মতো করে আর কাউকে চিনি না। ফলে নিজের সঙ্গে যদি আমাদের কথা বলার সুযোগ হয়, তাহলে আমরা আমাদের যে ত্রুটিগুলো, সেগুলোকে বেশি ভালো দেখতে পাই।
গীতায় এক জায়গায় ‘নরক’ শব্দের ব্যাখ্যা আছে। সেখানে নরক বলতে বোঝানো হয়েছে বিশেষ মানসিক অবস্থাকে। তা কেমন? ব্যাখ্যায় বুঝি যেখানে জগতের সবাই জানে আমি ভালো, কিন্তু আমি ভাবি আমি অতটা ভালো নই!— এই যে তুষের আগুনের মতো ধিকিধিকি করে মানসিক যন্ত্রণা ভোগ করা— তাই হল নরক যন্ত্রণা। আবার উল্টোদিকে যতক্ষণ না আমরা নিজের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পাই, নিজের দিকে তাকানোর সুযোগ পাই, ভাবি, জগৎ যে রকম পিঠ চাপড়াচ্ছে, আমিও বোধহয় তেমনই পিঠ চাপড়ানি পাওয়ার যোগ্য মানুষ। কিন্তু নিজে আমি কেমন তা বোঝার জন্য, দেখার জন্য খুব বেশিভাবে প্রয়োজন নিজের সঙ্গে নিজে কথা বলা। শ্রীরামকৃষ্ণের সঙ্গে মাস্টারমশাইয়ের প্রথম দিককার এক সাক্ষাতের সময় ঠাকুর তাঁকে বলছেন নির্জনে গিয়ে থাকতে। নির্জন বলতে ঘরবাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়া নয়। সকলের মধ্যে থেকেও সব কিছু থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন রাখা। সংসারের সব কাজে সচেতনভাবে প্রবেশ থেকে নিজেকে বিরত করা। অথচ আমরা করি কী? জগতে সবার দোষ দেখি, অথচ যদি নিজের দিকে তাকাই, দেখব, আমার নিজের কাছে নিজের একটা প্রতিচ্ছবি তৈরি হয়ে আছে। আমরা ভাবি আমার গলার আওয়াজটা একেবারে ব্যারিটোন! আমি যখন গান গাইব তখন মনে হবে ভীমসেন যোশী, লতা মঙ্গেশকর গান গাইছেন! আমি যখন কলম ধরব মনে হবে যেন সরোজিনী নাইডুর মতো ইংরেজিতে লিখছি। আমার রয়েছে সুভাষচন্দ্র বসুর মতো দেশপ্রেম, জগদীশচন্দ্রের মতো বিজ্ঞান প্রতিভা! এসব নিয়েই আমাদের নিজের কাছে একটা প্রতিচ্ছবি তৈরি হয়ে আছে। তবে সত্যিসত্যিই যদি আমরা নিজের দিকে তাকাই, তাহলেই বুঝতে পারব সেই ‘ইমেজ’ থেকে আমরা সহস্র যোজন দূরে রয়েছি। ওই প্রতিচ্ছবির মতো হতে চাইলে অনেক পথ হাঁটতে হবে। ঠিক এই কারণেই নিজেকে চেনা আর নিজেকে জানার জন্য নিজের সঙ্গে কথা বলা ভীষণ জরুরি।
সম্পর্ক এবং সঙ্কট
মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নিজের সঙ্গে কথা বলা দরকার যখন সঙ্কট উপস্থিত হয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে। কিন্তু সঙ্কট তৈরি হয় কেন? কারণ আমরা সবসময় অন্যের কাছে কিছু না কিছু প্রত্যাশা করি। অনেকটা ওই পুরনো টিভি বিজ্ঞাপনের মতো— ‘নবাব কিনলে আরাম ফ্রি!’ আমরা সর্বক্ষণই সামনের মানুষটির থেকে পাওনার বাড়তি কিছু প্রত্যাশা করি। তবে যখনই আমরা তা পাই না, অতৃপ্তি গ্রাস করে। এখন রিলেশনশিপগুলিকে যদি কোনওরকম চাওয়া পাওয়ার সম্পর্কের বাইরে যায়, একমাত্র তখনই আমাদের শান্তি। নাহলে ভীষণ কষ্ট পেতে হয়।
‘কারও কাছ থেকে কিছু চাই না, এমনকী ভালো ব্যবহারও চাই না’— এই মানসিকতা বজায় রেখে সম্পর্ক রাখলে দেখা যাবে সেই সম্পর্ক অনেকদিন টেকে। তাহলে সম্পর্ক তৈরির সময় কী মাথায় রাখতে হবে? কী বলতে হবে নিজেকে? স্বামী জগতাত্মানন্দজি বলতেন ‘ইগো দ্যাট নেভার গোজ...’। দেখুন, অন্যের তুলনায় ভালো হওয়া নিশ্চয় জরুরি। মনে হওয়া শুধু নয়, তার সঙ্গে তা প্রমাণ করাটাও জরুরি। প্রমাণ নিজের কাছেই করতে হবে। সেখানে কোনও ছলচাতুরি চলবে না। তবে ‘আমি সবার চাইতে ভালো, সকলের তুলনায় আমিই শ্রেষ্ঠ, প্রত্যেকেই আমার থেকে খারাপ’— এই ভাবনা কাজের নয়। এই চিন্তা এলেই যে কোনও সম্পর্কেই তৈরি হবে ফাটল।
স্বামী স্ত্রীকে সম্মান করেন না, স্ত্রী স্বামীকে সম্মান করেন না, এমন অবস্থা শেষ পর্যন্ত বিভাজন তৈরি করবে আর সেটাই স্বাভাবিক। বহু পুরুষ বাড়িতে ফিরে এসে স্ত্রীকে বলেন— কী কর সারাদিন বাড়িতে বসে? খালি ঘুমাও আর টিভি দেখ, আর আমি সারাদিন পরিশ্রম করি, বাস-ট্রেন ঠেঙিয়ে এসে সব খরচ চালাচ্ছি! এমন অসম্মানে যে কোনও সম্পর্কে ফাটল অবশ্যম্ভাবী।
কয়েকদিন আগেই একটা বিজ্ঞাপন ফের নজরে এল। পুরনো বিজ্ঞাপন— স্বামী, স্ত্রী দু’জনেই চাকুরিজীবী। একজন কনটেন্ট রাইটার, অন্যজন ব্যাঙ্কে কাজ করেন। তাঁদের সন্তান বাবা-মায়ের ফোনটি বদলে দিল। স্ত্রীর যত কাজের ফোন সব স্বামীর কাছে যায় আর স্বামীর যত ফোন সব স্ত্রীর কাছে যায়। দিনের শেষে তাঁরা দু’জনেই বুঝতে পারল, একে অপরকে কী ভয়ানক পরিশ্রম করতে হয় সারাদিনে! সুতরাং একটা টেবিলে মুখোমুখি বসে আমরা যদি আমাদের কষ্টগুলিকে ভাগ করতে থাকি, তাহলে একটা সময় দেখব আমার সামনের মানুষটা আমার তুলনায় অনেক বেশি কষ্ট পাচ্ছে। স্বামীজি বলছেন, ইফ ইউ ওয়ান্ট টু হেল্প এ ম্যান, হেল্প হিম হ্যোয়ারএভার হি স্ট্যান্ড। অর্থাত্ যে ব্যক্তি যে অবস্থানে রয়েছেন, সেই অবস্থানে নিজেকে নিয়ে গিয়ে, তাঁর মানসিক অবস্থার উপলব্ধি করে তাঁকে সাহায্য করো। তবেই সম্ভব প্রকৃত সাহায্য করা।
মুশকিল হল, আমরা নিজেকে ছাড়া কাউকেই বুঝতে পারি না। রবীন্দ্রনাথের গানে রয়েছে—
‘আমি কেবল আমায় নিয়ে কোন্ প্রাণেতে বেঁচে থাকি॥/ আমিই শুধু রইনু বাকি।/ যা ছিল তা গেল চলে, রইল যা তা কেবল ফাঁকি॥’
সুতরাং যত আমরা ‘আমি আমি’ করব ততই দেখব সব যেন অনেক দূরে সরে গিয়েছে। হাতে শুধু আছে ফাঁকি। তখনই শুরু হয় হতাশা, ডিপ্রেশন, আত্মহত্যার মতো ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ।
লক্ষ্য পূরণেও বাক্যালাপ
অনেকে আবার হতাশায় ভোগেন লক্ষ্য পূরণ না হলে। ভেঙে পড়েন। আর কোনও কাজেই যেন উত্সাহ থাকে না। এমন ক্ষেত্রেও কথা বলতে হবে নিজের সঙ্গে। নিজেকে বলতে হবে, লক্ষ্য হয়তো স্থির ছিল। তবে লক্ষ্য পূরণের জন্য যে পরিশ্রম প্রয়োজন ছিল, তা কি সত্যিই করেছিলাম? ছোটবেলায় সকলেই ডাক্তার হতে চান।
তবে চিকিৎসক হওয়ার জন্য যে অধ্যবসায়ের প্রয়োজন হয় সেই সাধনা কি সকলে করতে পারেন?
অর্থাত্ লক্ষ্য স্থির করা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনই লক্ষ্য পূরণে প্রয়োজনীয় সংগ্রামও একইরকম গুরুত্বপূর্ণ। একলাফে তিনতলায় ওঠা সম্ভব নয়। প্রথমে সিঁড়ি বেয়ে একতলা, তারপর দোতলা, তারপর তিনতলায় উঠতে হবে।
আমি বিনয়ী
নিজেকে বিনয়ী হওয়ার কথা বলতে হবে প্রতি মুহূর্তে। খেয়াল করলেই দেখবেন— ফলন্ত আমগাছই একেবারে নুইয়ে থাকে মাটির কাছে। কালবৈশাখী এলে দুই-একটা ডালপালা ভাঙে হয়তো, তবে গাছটি ভেঙে পড়ে না। পলাশ, শিমুল যারা লাল ফুলের গর্বে দাঁড়িয়ে থাকে, তারা ওই একই ঝড়ে ভেঙে তছনছ হয়ে যায়। তাই একটু বিনয়ী হওয়া ভালো। তবে তা অভিনয় হলে চলবে না। নিজের অন্তর থেকে উদ্ভাসিত অভিব্যক্তি হতে হবে। আর তা তখনই সম্ভব যখন আমরা বিশ্বাস করব, আমার তুলনায় সেরাও রয়েছে জগত্ সংসারে। আমার আরও কিছু কাজ রয়েছে করার মতো। তখন আপনা থেকেই একজন ব্যক্তি বিনয়ী হয়ে উঠবেন।
পরিবর্তনকে স্বীকার করা
উন্নতির পথে অন্তরায় হয় গোঁড়ামি, পুরনো ভ্রান্ত ধ্যান ধারণা বয়ে নিয়ে চলার মানসিকতা। ছেলের বউ এসে বলল, ‘মা, তুমি কড়াইয়ে আলুগুলো সেদ্ধ করছ, প্রেশার কুকারে রান্না করলে ইন্ধন বাঁচে।’ ওদিকে শাশুড়ি মা ভাবলেন, আমার এত বয়স, এতদিন ধরে রান্না সামলাচ্ছি, ও ছোট, দু’দিনের মেয়ে— ও কী জানে?
অথচ সত্যিই তো প্রেশার কুকারে আলু সেদ্ধ করলে দ্রুত রান্না হয়। ইন্ধন বাঁচে। তাই একটা খোলা মন রাখতে হবে।
ফেলুদার এমন একজন সিধুজ্যাঠা ছিলেন। তাঁকে ফেলুদা বলছেন— ‘আপনি যদি গোয়েন্দা হতেন আমাদের অনেকেরই পসার চলে যেত।’ সিধু জ্যাঠার উত্তর—‘আমি অনেক কিছু হলে অনেকেরই অনেক কিছু চলে যেত। তাই কোনওকিছুই হইনি। শুধু মনের জানলা দরজাগুলোকে খুলে রেখেছি।’... তাই পরিবর্তনকে স্বীকার করে উন্নয়নের পথে চলার জন্য সংসারের প্রতি, জগতের প্রতি একটা উদার দৃষ্টি বজায় রাখা প্রয়োজন। নতুন মানেই ‘গেল, গেল’ রব তুলে নয়, বরং নতুন ধারণার প্রতি যুক্তিনির্ভর বিশ্লেষণের মনোভাব বজায় রাখা দরকার। না হলে একজন ব্যক্তি আর পাথরে কোনও বিভেদ থাকবে না।
অনুলিখন সুপ্রিয় নায়েক
related_post
রাশিফল
-
আজকের রাশিফল (১৬/০৫/২৫)
- post_by Admin
- মে 16, 2025
-
আজকের রাশিফল (১৭/০৫/২৫)
- post_by Admin
- মে 17, 2025
এখনকার দর
-
নিফটি ব্যাঙ্ক (১৬/০৫/২৫)
- post_by Admin
- মে 16, 2025
-
নিফটি ৫০ (১৬/০৫/২৫)
- post_by Admin
- মে 16, 2025
-
ইউরো (১৬/০৫/২৫)
- post_by Admin
- মে 16, 2025
-
পাউন্ড (১৬/০৫/২৫)
- post_by Admin
- মে 16, 2025
-
ডলার (১৬/০৫/২৫)
- post_by Admin
- মে 16, 2025
-
রূপোর দাম (১৭/০৫/২৫)
- post_by Admin
- মে 17, 2025
-
সোনার দাম (১৭/০৫/২৫)
- post_by Admin
- মে 17, 2025
-
সোনার দাম (১৬/০৫/২৫)
- post_by Admin
- মে 16, 2025
-
রুপোর দাম (১৬/০৫/২৫)
- post_by Admin
- মে 16, 2025
-
ডলার (১৭/০৫/২৫)
- post_by Admin
- মে 17, 2025
-
পাউন্ড (১৭/০৫/২৫)
- post_by Admin
- মে 17, 2025
-
ইউরো (১৭/০৫/২৫)
- post_by Admin
- মে 17, 2025