শনিবার, 17 মে 2025
Logo
  • শনিবার, ১৭ মে ২০২৫

গরমে কি ডিম খেতে নেই? 

ডিম খেলে কোলেস্টেরল বাড়ে, বাতের ব্যথা বাড়ে, পেটের গন্ডগোল হয়, ইত্যাদি বহু উল্টোপাল্টা ধারণা আমাদের অনেকের মধ্যেই আছে। এগুলোর কোনও বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। প্রথমেই একটা কথা জানিয়ে রাখি, দেহ গঠনের জন্য অতিপ্রয়োজনীয় যে আটটি অ্যামাইনো অ্যাসিড আমাদের শরীরের জন্য দরকার, তার সবকটি থাকে একমাত্র ডিমেই
গরমে কি ডিম খেতে নেই? 
ডিম খেলে কোলেস্টেরল বাড়ে, বাতের ব্যথা বাড়ে, পেটের গন্ডগোল হয়, ইত্যাদি বহু উল্টোপাল্টা ধারণা আমাদের অনেকের মধ্যেই আছে। এগুলোর কোনও বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। প্রথমেই একটা কথা জানিয়ে রাখি, দেহ গঠনের জন্য অতিপ্রয়োজনীয় যে আটটি অ্যামাইনো অ্যাসিড আমাদের শরীরের জন্য দরকার, তার সবকটি থাকে একমাত্র ডিমেই। সেইজন্যই ডিমকে বলা হয় কমপ্লিট ফুড। প্রোটিন প্রধান খাদ্যের মধ্যে এখনও ডিম অপেক্ষাকৃত সস্তা।
একটা ডিমের গড় ওজন প্রায় ষাট গ্রাম, যাতে প্রোটিন এবং ফ্যাট থাকে ছয় গ্রাম করে, যা সহজেই হজম করা যায়, এছাড়া থাকে তিরিশ মিলিগ্রাম ক্যালশিয়াম, দেড় মিলিগ্রাম লোহা এবং আট গ্রাম অন্যান্য খনিজ পদার্থ। থাকে ভিটামিন সি বাদে অন্যান্য সব ভিটামিন। জল থাকে মাত্র ৩৫ গ্রাম, কোলেস্টেরল ৭০০ মিলিগ্রাম। শক্তি মেলে মাত্র ৭০ কিলো ক্যালোরি। তাই ডিম খেয়ে কেউ মোটা হয় না।
শীত, গ্রীষ্ম, এমনকী ঘনঘোর বর্ষাতেও ডিম খাওয়া যায় সবসময়ই। ডিম খেলে শরীর গরম হয়, পেট গরম হয়— এসব গল্প কথা। সহজপাচ্য বলে রোগীদের খাদ্যতালিকায় সিদ্ধ ডিমের স্থানটি বরাবরের জন্যই বাঁধা। অনেক বাড়িতে বসন্ত হাম-সহ নানা ভাইরাস ঘটিত রোগ দেখা দিলে ডিমের প্রবেশ বন্ধ হয়ে যায়। অথচ এইসময়ে শরীরে বাড়তি পুষ্টির জন্য অবশ্যই ডিম খাওয়া প্রয়োজন।
তবে আমাদের মতো গ্রীষ্মপ্রধান দেশে গরমকালে ডিম খেতে হবে একটু সাবধানে। কারণ  ৩০-৩৫ ডিগ্রি গরমে ডিম নষ্ট হয়ে যাওয়ার  আশঙ্কা থাকে, যদি ঠিকমতো ফ্রিজে সংরক্ষণ করা না হয়। বাড়িতে ডিম এনে রান্না করার সময় খুব সহজেই সেই ডিম ভালো না খারাপ, তা গৃহিণীরা বুঝে ফেলেন। এই বর্ষায় রাস্তাঘাটে কিংবা রেস্তোরাঁর ডিম কখনও খাবেন না। এসব জায়গায় পচা ডিমের ছড়াছড়ি থাকে। যদি খেতেই হয়, বাড়িতে নিয়ে ভালো করে ধুয়ে সেদ্ধ করে খেতে হবে। বেশি তেল মশলা দিয়ে কষিয়ে খেলে ডিমের পুষ্টিমূল্য কমে যায়।
একসময় হাফ বয়েল বা অর্ধসেদ্ধ ডিম খাবার খুব প্রচলন ছিল। কিন্তু এর ফলে সালমোনেলা গ্রুপের নানা ব্যাকটেরিয়া পেটে ঢুকে নানা সমস্যা তৈরি করত। যেজন্য পুষ্টি বিজ্ঞানীরা কাঁচা ডিম বা অর্ধ সেদ্ধ ডিম খেতে বারণ করেন। একটি ডিমের সাদা অংশে অ্যালবুমিন নামে একটি উন্নত মানের প্রোটিন থাকে, যা আর কোনও খাদ্য উপাদানে পাওয়া যায় না। দেহের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এই অ্যালবুমিন। ডিমের কুসুমে কোলেস্টেরল থাকে বলে একসময় হার্টের এবং প্রেশারের রোগীদের ডিম খেতে বারণ করা হতো। কিন্তু পরবর্তীকালে প্রমাণ হয়েছে যে ডিমের কুসুমের ওই সামান্য কোলেস্টেরল হার্টের তেমন কোনও ক্ষতি করতে পারে না। তবে অতিরিক্ত নয়, সপ্তাহে দু’তিনটে ডিম ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে বয়স্করা খেতেই পারেন। ডিম হাঁসের না দেশি, নাকি ব্রয়লার মুরগির— এসব নিয়ে মাথা ঘামাবেন না। সবার পুষ্টিমূল্য কাছাকাছি। 
শেষ কথা হল, ডিম প্রথম শ্রেণির প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার, পাতে তাই রোজ একটা করে ডিম রাখতেই পারেন।
লিখেছেন ডাঃ অমিতাভ ভট্টাচার্য