সোমবার, 28 এপ্রিল 2025
Logo
  • সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫

৫০ আধার কেন্দ্রে তথ্যভাণ্ডার হ্যাক!, গ্রাহকের গোপন তথ্য চুরি

আধার সেবাকেন্দ্রের সরকারি কম্পিউটার থেকে সাধারণ মানুষের তথ্য চুরি করছে ‘হ্যাকার’রা! আধার কেন্দ্রের কর্মীদের একাংশের সহযোগিতায় ম্যালওয়্যার ঢুকিয়ে ডেটাবেস থেকে গ্রাহকদের যাবতীয় তথ্য হাতিয়ে দিচ্ছে জালিয়াতরা। 

৫০ আধার কেন্দ্রে তথ্যভাণ্ডার হ্যাক!, গ্রাহকের গোপন তথ্য চুরি

নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: আধার সেবাকেন্দ্রের সরকারি কম্পিউটার থেকে সাধারণ মানুষের তথ্য চুরি করছে ‘হ্যাকার’রা! আধার কেন্দ্রের কর্মীদের একাংশের সহযোগিতায় ম্যালওয়্যার ঢুকিয়ে ডেটাবেস থেকে গ্রাহকদের যাবতীয় তথ্য হাতিয়ে দিচ্ছে জালিয়াতরা। উত্তরপ্রদেশে গ্রেপ্তার হওয়া চার ‘হ্যাকার’ আরও উদ্বেগ বাড়িয়েছে বাংলার পুলিসের। কারণ তাদের জেরায় জানা গিয়েছে, এই চক্রের ঘাঁটি রয়েছে এরাজ্যেও। এর মাথা? বি. টেক ড্রপ আউট এক যুবক—আশিস কুমার। এমনই হ্যাকার চক্রের জাল ছড়িয়েছে বাংলার অন্তত ৫০টি আধার কেন্দ্রে। কলকাতা, দক্ষিণবঙ্গ বা উত্তরবঙ্গ—সর্বত্র পা ফেলেছে এই চক্র। 
উত্তরপ্রদেশের সম্ভল পুলিস গত কয়কদিন আগে আমরোহা ও বদাউন থেকে চারজনকে গ্রেপ্তার করে জানতে পারে, তারা দেশজুড়ে জালিয়াতি করে বেড়াচ্ছে। জালিয়াতরা আধারের সাইটের মতোই একটি ভুয়ো সাইট খুলেছিল। টাকার বিনিময়ে বাড়ি গিয়ে তারা আধার সংক্রান্ত সংশোধনের কাজ করত। অথচ নিয়ম বলছে, বাড়িতে নয়, আধার সংক্রান্ত সমস্ত কাজ কেন্দ্রে গিয়ে বা অনলাইনে করতে হবে। তদন্তকারীরা জেনেছেন, ‘দুয়ারে পরিষেবা’র নামে গ্রাহকদের ব্যক্তিগত যে তথ্য জোগাড় করছে জালিয়াতরা, তা তারা ইউআইডিএআইয়ের আসল সাইটেও আপলোড করেছে। এমনকী বহু গ্রাহকের ব্যক্তিগত ত঩থ্যে বিস্তর অদল বদলও করে দিয়েছে জালিয়াতরা। এই তথ্য পরিবর্তনের জন্যই পশ্চিমবঙ্গ, তেলেঙ্গানা, বিহার সহ মোট ১২টি রাজ্যে একাধিক এজেন্ট নিয়োগ করেছে। ওই এজেন্টরাই বাড়ি বাড়ি গিয়ে যোগাযোগ করে বলত, আধার কেন্দ্র থেকে এসেছি। নাম, ঠিকানা সহ যে কোনও তথ্য পরিবর্তন করতে চাইলে করে দেওয়া হবে বলে ‘টোপ’ দেওয়া হতো। আধার কেন্দ্রে যাওয়ার ভোগান্তি এড়াতে অনেকেই সেই টোপে রাজি হতেন। রা‌জি হওয়া ব্যক্তির আঙুলের ছাপ সহ সমস্ত তথ্য নেওয়া হতো। এর জন্য দুই থেকে পাঁচ হাজার টাকা চার্জ নিত তারা। এই তথ্য পাঠিয়ে দিত চক্রের পাণ্ডার কাছে।
উত্তরপ্রদেশ পুলিস এ ব্যাপারে সতর্ক করার পর আরও নড়েচড়ে বসেন রাজ্যের গোয়েন্দারা। কলকাতা তথা রাজ্যের কোন কোন আধার সেন্টারের কর্ণধারদের সঙ্গে যোগসাজস গড়ে তুলেছে জালিয়াত চক্র, তার বিস্তারিত তথ্য হাতে এসেছে। গোয়েন্দারা জেনেছেন, চিহ্নিত আধার কেন্দ্রগুলির ডেটাবেস হ্যাক করে গ্রাহকদের গোপন তথ্য উধাও হয়ে যাচ্ছে নিত্যদিন। ৪০ থেকে ৫০ জন ‘এজেন্ট’ কাজ করছে বাংলায়। টার্গেট করা হচ্ছে মূলত গ্রামীণ এলাকার স্বল্পশিক্ষিত লোকজনকেই। ‘ইউনিক আইডেন্টিফিকেশন অথরিটি অব ইন্ডিয়া’ (ইউআইডিএআই) এবং পাসপোর্ট সেবাকেন্দ্রের ‘নকল’ ওয়েবসাইট বানিয়ে ফেলেছে তারা। এজেন্টরা ‘দুয়ারে পরিষেবা’ দেওয়ার নামে মহল্লায় মহল্লায় ঘুরে গ্রাহকদের টোপ দিচ্ছে আধার করিয়ে দেওয়ার। কিংবা সংশোধনের। রীতিমতো বায়োমেট্রিক মেশিন এবং আই স্ক্যানার থাকছে তাদের সঙ্গে। সাধারণ মানুষ বিশ্বাস করে তাঁদের গোপন তথ্য দিচ্ছেন। আর তারা নকল ওয়েবসাইটে সেই তথ্য আপলোড করছে। অনেকে আবার না বুঝে ওই নকল ওয়েবসাইটে ঢুকে নিজেদের তথ্য দিয়ে দিচ্ছেন। তবে সবথেকে বেশি তথ্য তারা হাতিয়েছে আধার সেন্টারের কম্পিউটারে ম্যালওয়্যার ভরে দিয়েই। সেই সব তথ্য চড়া দামে সাইবার জালিয়াত এমনকী জঙ্গি স্লিপার সেলের লোকজনের কাছেও বিক্রি করা হয়েছে।