ফাইবারযুক্ত খাবার খাওয়া জরুরি কেন?
প্রথমেই জেনে নেওয়া ভালো যে ফাইবারের উৎস কী কী। আমরা ফাইবার প্রধানত পাই শাক বা সব্জি থেকে। আরও নির্দিষ্ট করে বললে যে কোনও সবুজ সব্জিই ফাইবার সমৃদ্ধ।

বর্তমান ওয়েবডেস্ক
এপ্রিল ২৭, ২০২৫
ডাঃ আশিস মিত্র: প্রথমেই জেনে নেওয়া ভালো যে ফাইবারের উৎস কী কী। আমরা ফাইবার প্রধানত পাই শাক বা সব্জি থেকে। আরও নির্দিষ্ট করে বললে যে কোনও সবুজ সব্জিই ফাইবার সমৃদ্ধ। আলু, রাঙালু এই ধরনের কয়েকটি সব্জিতে ফাইবার থাকে না। তবে শুধু সবুজ শাক-সব্জি নয়, থোড়-মোচা সহ এমন কিছু সব্জিও আছে যা ফাইবারে ভরপুর। আবার ডুমুরেও প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে। আর যত রকমের শাক আছে— পালং, পুঁই, লাল, নটে, লাউ অর্থাৎ সমস্ত রকমের শাকে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে।
তবে শাকের কথা যখন এল তখন পালং শাকের গুণাগুণ সম্বন্ধে অল্পবিস্তর বলে নেওয়া উচিত। প্রচুর ফাইবার, খনিজ, অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর পালং শাক খেলে পেট দীর্ঘক্ষণ ভরা থাকে। ফলে ওজন কমাতেও কার্যকরী। আবার গুলঞ্চ জাতীয় শাকে বেশ কিছু উপাদান থাকে যেগুলি সরাসরি ভুঁড়ি কমাতে সাহায্য করে। এমনকী লিপিড কমাতেও যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে এই শাকের।
শুরুতেই বলেছি শাকসব্জির মধ্যে থাকে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার বা তন্তুজাতীয় উপাদান। পাকস্থলীর ফাইবার হজম করার ক্ষমতা নেই। প্রায় পুরোটাই অপাচ্য খাদ্যবস্তু হিসাবে শরীরের বাইরে বেরিয়ে যায়। এই প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি— শাকসব্জিতে ক্যালরির পরিমাণও যথেষ্ট কম থাকে। এছাড়া শাকসব্জি খেলে দীর্ঘসময় পেট ভরে থাকার অনুভূতি মেলে। বারবার খিদে পায় না। ঘন ঘন খাদ্যগ্রহণ থেকে বিরত থাকা যায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আমাদের শরীরে ফ্যাট জমা হয় ভাত, রুটি, ময়দার মতো শর্করাপ্রধান খাদ্য গ্রহণের কারণে। সব্জি বেশি পরিমাণে খেলে শর্করাজাতীয় খাদ্য খাওয়ার পরিমাণ কমে যায়। অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেট শরীরে ঢোকার পর আর ফ্যাটে রূপান্তরিত হওয়ার সুযোগ পায় না। এভাবেই ভুঁড়ি হওয়া এবং ওজন বৃদ্ধি হওয়া রোধ হয়। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে খুব ভালো একটি সব্জি হল থোড়। এই সব্জিটিতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে। এই সব্জিটি নিয়মিত খাওয়া অভ্যেস করলে ওজন দ্রুত বাড়ে না।
ফাইবার খাওয়ার প্রয়োজনীয়তা
রোজ খাদ্যতালিকায় ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার থাকা কেন প্রয়োজন, সে প্রসঙ্গে প্রথমে যাঁরা কোনও রোগে ভোগেন না সেই সমস্ত মানুষের কথা আগে বলি। প্রথমত ফাইবার যুক্ত খাবার খেলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা অনেকটাই হ্রাস পায়। কোষ্ঠকাঠিন্যকে অনেকে রোগ বলে মনে করেন না বা ভাবেন এটা রোগ নয়। কিন্তু এ এক বহুল সমস্যা। কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা না থাকলে এর ফলে সৃষ্ট রোগ যেমন পাইলস, ফিশার, ফিশ্চুলার প্রকোপ থেকেও রেহাই মিলবে। অর্থাৎ মলত্যাগের সময় মলদ্বার ব্যথা করা বা মলদ্বার দিয়ে রক্ত পড়া এসব রোগ হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যাবে।
বিভিন্ন গবেষণায় এটা দেখা গেছে যে উচ্চ ফাইবার যুক্ত খাবার খেলে কোলন ক্যান্সার বা বৃহদন্ত্রের ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনাও অনেকটাই কমে যায়। বৃহদন্ত্রের ক্যান্সারের পাশাপাশি পাকস্থলীর ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনাও কমে। তবে গবেষণায় বৃহদন্ত্রের ক্যান্সার রোধের তথ্যই বেশি সামনে এসেছে। যখন উচ্চ ফাইবার যুক্ত খাবার খাই, তখন শুধু তো সব্জি খাচ্ছি না। তার সঙ্গে ভাত বা রুটিও খাচ্ছি। আমরা তো তিন ধরনের খাবার খাই—কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন আর ফ্যাট। এই খাবারগুলো যখন আমাদের শরীরে অ্যাবজর্ব হচ্ছে, সেই অ্যাবজর্বশনকে কমিয়ে দেয় ফাইবার। অন্ত্র থেকে রক্তে ঢোকার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। মানুষের অন্ত্রে দু ধরনের ব্যাকটেরিয়া আছে —ভালো ব্যাকটেরিয়া আর খারাপ ব্যাকটেরিয়া। ভালো ব্যাকটেরিয়া আমাদের শরীরের জন্য খুবই দরকার। যে মুহূর্তে খারাপ ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বৃদ্ধি পায়, শরীরে তখন ডায়ারিয়া জাতীয় রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। আমরা যদি নিয়মিত ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার না খাই মানে সবুজ শাক-সব্জি বা ফল, তাহলে ভালো ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বাড়বে না। কেন? না, ফাইবারসমৃদ্ধ খাবার খেলে আমাদের পেট পরিষ্কার থাকবে, স্বাভাবিক মলত্যাগ হবে। তাই শরীরে ভালো ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যাও বৃদ্ধি পাবে। হাই ফাইবার যুক্ত ডায়েটে থাকলে সরাসরি না হলেও পরোক্ষভাবে অনেক রোগের হাত থেকে রেহাই মেলে আমাদের। যেমন স্থুলতা বা ওবেসিটি, ডায়াবেটিস, হার্টের বিভিন্ন রকম অসুখ কমাতে সাহায্য করে ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার। কারণ ফাইবার আমাদের রক্তে সুগার ও ফ্যাট কম ঢুকতে দেয়। তবে সরাসরি ফ্যাট ঝরানোর ক্ষমতা কোনও শাকসব্জিরই নেই। বরং বলা উচিত, শাকসব্জি খাওয়ার পরোক্ষ ফল হিসাবে ওজন হ্রাস পেতে শুরু করে।
শাকের মধ্যে ফাইবার ছাড়াও জিঙ্ক বা নানারকমের মাইক্রো নিউট্রিয়েন্টস যেমন আয়রন, সেলেনিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ এসব থাকে। আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দিতে এই উপাদানগুলির অবদান কিন্তু অপরিসীম। লাল শাক, থোড়, মোচা, কাঁচকলা এইসব শাক-সব্জিতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে। একেকটা জিনিসের একেকরকম উপকারিতা। তাই সবকিছুই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে খেতে হবে। এই ধরনের খাবার খেলে আপনি রক্তাল্পতায় ভুগবেন না। রক্ত উৎপন্ন হয়ে আমাদের অ্যানিমিয়ার মতো রোগের হাত থেকে নিষ্কৃতি দেবে। আয়রন ছাড়া জিঙ্কও বিভিন্ন রোগের সঙ্গে যুদ্ধ করার প্রধান উপাদান। যেমন ধরুন সিজন চেঞ্জ বা ঋতু পরিবর্তনের সময় আমরা কমবেশি সকলেই সর্দি-কাশিতে ভুগি। জিঙ্ক এই ধরনের ঋতু পরিবর্তনের অসুখের বিরুদ্ধে লড়াই করার অন্যতম হাতিয়ার। এই যে আমরা ডায়ারিয়া বা অন্যান্য পেটের সমস্যায় ভুগি, এই ধরনের রোগের প্রকোপও কমিয়ে দেয় জিঙ্ক। বিশেষত বাচ্চাদের ক্ষেত্রে জিঙ্কের উপস্থিতি থাকলে ডায়ারিয়া হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যায়। এছাড়াও হাই ফাইবার ডায়েট খেলে আমাদের রক্তে কোলেস্টেরল ও ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রাও নিয়ন্ত্রণে থাকবে। ভালো থাকবে হার্ট।
আলুতে সাবধান
সব্জির মধ্যে আলুও পড়ে। এই সব্জিটির দাম আমবাঙালির আয়ত্তের মধ্যে। তাই আলু খাওয়ার প্রবণতা বেশ বেশি। তার কারণও আছে। বাড়িতে সব্জি না থাকলে শুধু আলু সেদ্ধ দিয়ে ভাত মেখে খেয়ে অফিস, স্কুলে চলে গেলেও হয়। অথচ আলুতে প্রচুর পরিমাণে শর্করাজাতীয় উপাদান থাকে। ভাতেও তাই। ফাইবার বা তন্তুজাতীয় উপাদান থাকে সামান্য। ফলে প্রায় পুরোটাই ফ্যাট হিসাবে শরীরে জমা হয়। তাই অতিরিক্ত আলু খাবেন না। রাঙা আলুর ক্ষেত্রেও একই ধরনের সতর্কতা নেওয়ার প্রয়োজন। এছাড়া বেগুনেও ভালো পরিমাণ শর্করা থাকে। বিশেষ করে তেলে ভেজে খেলে বেগুন আরও ক্ষতিকর হয়ে দাঁড়ায়।
ফাইবার রোজ কতটা খাবেন
প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় লাঞ্চ ডিনার মিলিয়ে অন্ততপক্ষে ২০০ গ্রাম সবুজ শাক-সব্জি থাকা জরুরি। ফলকে এর মধ্যে ধরলে চলবে না। ফলের মধ্যেও প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে। সেকথায় পরে আসছি।
তবে ডায়াবেটিস রোগীদের আমরা বেশি করে উচ্চ ফাইবার সমৃদ্ধ ডায়েট দিই। আলু দিয়ে ভাত মেখে খাওয়ার বদলে শাক দিয়ে ভাত খাওয়ার কথা বলি। শুধু আলু দিয়ে ভাত খেলে কিন্তু খুব তাড়াতাড়ি রক্তে সুগারের মাত্রা বেড়ে যাবে। শাক দিয়ে ভাত মেখে খেলে, রক্তে সুগারের মাত্রা কম করতে পারে শাকে উপস্থিত ফাইবার।
শাক-সব্জির সঙ্গে চাই ফলও
এবার আসি ফল খাওয়ার প্রসঙ্গে। ২০০ গ্রাম শাক-সব্জির সঙ্গে ফল বা স্যালাডের ক্ষেত্রেও দিনপ্রতি আরও ২০০ গ্রামের লক্ষ্যমাত্রা রাখতে হবে। নানা ফলের নানানরকম উপকারিতা আছে। ফল খাওয়ার ক্ষেত্রে একটা কথা অবশ্যই মনে রাখতে হবে। পারতপক্ষে ফল খোসা ছাড়িয়ে খাওয়া চলবে না। যেমন অনেকেই আছেন আপেলের খোসা ছাড়িয়ে খান। এরকম করলে কিন্তু আপেলের কোনও গুণ শরীরে যাবে না। আমাদের মধ্যে আর একটা প্রবণতাও দেখা যায় যে, ফলের রস বা ফ্রুট জুস খাওয়া। অনেকেই ভাবেন ফল আর ফলের রস খাওয়ার মধ্যে কোনও পার্থক্য নেই। এটা একদমই ভুল ধারণা। ফলের রস করে খেলে কিন্তু আপনি ফলের কোনও পুষ্টিগুণ পাবেন না। ফ্রুট জুস করে খেলে শুধু আপনি এর সুগারটা পাবেন যা আপনার রক্তে সুগারের মাত্রা বাড়িয়ে দেবে। ফল চিবিয়ে খেলেই একমাত্র ফাইবার পাওয়া যায়।
অনেক ফলই আছে যার মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ফাইবারের উপস্থিতি রয়েছে। যেমন ধরুন নাশপাতি আর পেয়ারা। নাশপাতি যদিও খুব দামি ফল। পেয়ারা সেই তুলনায় অনেকটাই কম দামে পাওয়া যায় এবং সহজলভ্য। তবে নাশপাতি খেতে পারলে খুবই ভালো। তারপর ধরুন জাম বা জামরুল। জাম অবশ্য সবসময় পাওয়া যায় না, তবে জামরুল পাওয়া যায়। এই সবকটা ফলেই প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে। শীতকালে যেমন কমলালেবু পাওয়া যায়। অর্থাৎ বলতে চাইছি মরশুমি ফলের মধ্যেও নানারকমের গুণ রয়েছে। আঙুরের মধ্যে যেমন প্রচুর পরিমাণে জিঙ্ক রয়েছে।
ফল খাওয়ার বিধিনিষেধ
একমাত্র যাঁদের ডায়াবেটিস আছে বা যাঁরা কিডনির সমস্যায় ভোগেন তাঁদের ক্ষেত্রে ফল খাওয়াতে কিছু বিধিনিষেধ রয়েছে। ডায়াবেটিস রোগীদের বেশি মিষ্টিযুক্ত ফল খাওয়া বারণ। যেমন আম, লিচু, কাঁঠাল, বেল, সবেদা, খেজুর, আতা ইত্যাদি। আনারসে অবশ্য খুব বেশি ফাইবার নেই। তবে ডায়াবেটিস রোগী আনারস স্বচ্ছন্দে খেতে পারেন। আনারস খেলে সুগার বাড়ে না। তবে বারবার বলছি, পাইনাপেল জুস করে খেলে কিন্তু ফাইবার নষ্ট হয়ে যাবে। লাভের লাভ কিছু হবে না। রাস্তাঘাটে এখন প্রচুর জুসের দোকান দেখতে পাওয়া যায়। তাতে জুস খাওয়ার জন্য মানুষের লাইনও চোখে পড়ে। কিন্তু ফলের রস করে খেলে ফাইবার পাওয়াই যাবে না, সমস্ত ফাইবারটাই জুস করার সময় বেরিয়ে যায়। এটা অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে। তরমুজের ক্ষেত্রেও তাই। জুস নয়, কেটে খান। ডায়াবেটিক রোগীদেরও মেনুতে তরমুজ থাকতেই পারে। কারণ এর মধ্যে বেশি পরিমাণে জিঙ্ক থাকে। জিঙ্ক ইনসুলিন ক্ষরণে সাহায্য করে। কিছু ফল আপনাকে খোসা সমেত খেতে হবে। যেমন পেয়ারা আপনাকে খোসা সমেত খেতে হবে। আপেলও খোসা সমেত খেতে হবে। সম্ভব হলে নাশপাতিও খোসা না ছাড়িয়ে খেতে হবে। তবে আমাদের দেশীয় নাশপাতিটা খোসা সমেত খাওয়া একটু মুশকিল।
কিন্তু পিয়ার নামে যেটা বাজারে পাওয়া যায় সেটা খোসাসুদ্ধ খেতে হবে। এছাড়া আমন্ড বা কাঠবাদামেও অনেকটা করে ফাইবার থাকে। কিন্তু অনেকে কাঠবাদাম জলে ভিজিয়ে রেখে খোসা ছাড়িয়ে খান। সেটা করলে চলবে না। আমন্ডের খোসাতে হাই ফাইবার থাকে। রোজ যদি ৬-৭টা আমন্ড জলে ভিজিয়ে খোসাসুদ্ধ খাওয়া যায়, তাহলে দারুণ উপকার মেলে। একমাত্র কিসমিস ছাড়া প্রায় সমস্ত ড্রাই ফ্রুটেই প্রচুর পরিমাণে ফাইবার আছে। কিসমিস খাওয়াও খারাপ নয়। কিন্তু যে সব রোগী ডায়াবেটিসে আক্রান্ত, তাঁদের আমরা কিসমিস বেশি মিষ্টি বলে খেতে নিষেধ করি। তবে কিসমিসেও ফাইবার আছে যা রক্তাল্পতা কমাতে সাহায্য করে। একইভাবে খেজুরও শরীরের জন্য খুব উপকারী। খেজুরেও প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে। ড্রাই খেজুরও খুব উপকারী। বাজারচলতি খেজুর মানে যেগুলো ঠাকুরপুজোয় কাজে লাগে তার থেকে লম্বা লম্বা যে শুকনো খেজুর পাওয়া যায়, তা অনেক বেশি উপকারী। আমাদের দেশের গ্রামে-গঞ্জে গরমকালে যে খেজুর পাওয়া যায়, পুষ্টিগুণে সেও সহজেই টক্কর দেবে এইসব খেজুরের সঙ্গে। এই খেজুরগুলোয় কিন্তু ফাইবার অনেক বেশি থাকে। আসলে আমাদের দেশজ যে ফলগুলো হাতের কাছে পাওয়া যায়, সেগুলোর পুষ্টিগুণ কোনও অংশে কম নয়।
দামি ফল না খেলেও চলবে
আমরা সবসময় বলি স্থানীয় ফল খেতে। অর্থাৎ যে ফল সামনে হাটেবাজারে পাওয়া যায় তাই খান। তার কারণ কী জানেন? ফল আপনি যত তাজা খাবেন তার পুষ্টিগুণও তত বেশি করে পাওয়া যাবে। ফল ফ্রিজে রেখে খেলেও তার পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়ে যায়। কেউ বলেছে বলে আমাকে ড্রাগন ফ্রুট খেতে হবে এমন নয়। আপনি হিমাচলপ্রদেশে বেড়াতে গিয়ে আপেল খাচ্ছেন বা দার্জিলিংয়ে কমলালেবুর সিজনে গিয়ে কমলালেবু খাচ্ছেন, এতে কোনও অসুবিধে নেই।
কিন্তু যখন কলকাতায় আছেন তখন বারুইপুরের পেয়ারা খাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। সাধ্য থাকলে আপেল খান, কোনও সমস্যা নেই। যদি সাধ্য না থাকে তবে বারুইপুরের পেয়ারাই খেতে হবে। পেয়ারায় প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে। সাধ্যের মধ্যে হাই ফাইবার যুক্ত ফল খেতে হলে পেয়ারা খাওয়াই শ্রেয়। কলাতেও ভালোই ফাইবার থাকে এবং দামও কম। কিন্তু ডায়াবেটিস থাকলে কলা বেশি খাওয়া যাবে না।
হাই ফাইবার সমৃদ্ধ যে ফলগুলো আছে তা থেকে শুধুমাত্র ফাইবার পাই এমন নয়। ফাইবারের সঙ্গে অনেক অন্য নিউট্রিয়েন্টও এদের মধ্যে থাকে। আয়রন, জিঙ্কের কথা তো বললাম। আতাও খুব উপকারী একটা ফল। আতায় প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম থাকে। অনেকের দুধ বা দুগ্ধজাতীয় জিনিস খেলে সহ্য হয় না। অথচ আমাদের শরীরে ক্যালসিয়াম দরকার। ক্যালসিয়াম না থাকলে হাড় ভঙ্গুর হয়ে পড়বে, হাড়ের ক্ষয় হবে। দুধ বা দুগ্ধজাতীয় খাবার যেমন ছানা, দই এমনকী বাজার চলতি যে সব কৃত্রিম দুধ আছে সেগুলো যাঁরা খেয়ে হজম করতে পারেন না, তাঁরা কিন্তু স্বচ্ছন্দে আতা খেতে পারেন। এই ধরনের মানুষদের কিন্তু ক্যালসিয়ামের ঘাটতি মেটানোর দুটো উপায় আছে। ফলের মধ্যে আতা খাওয়া। আর ছোট ছোট মৌরলা জাতীয় মাছ চিবিয়ে খাওয়া। মাছের হাড়ের মধ্যে ভরপুর ক্যালসিয়াম, ফসফরাস থাকে। তাহলে বোঝাই যাচ্ছে হাই ফাইবার সমৃদ্ধ খাবারে ফাইবার ছাড়াও অনেক পুষ্টিগুণ থাকে যেগুলো আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত জরুরি।
ডাবের জল
অনেকে ডাব বা নারকেলের জলের কথা বলে থাকেন। ডাবের জল মূলত ডায়ারিয়া রোগীদের ক্ষেত্রে ওআরএসের (ওরাল রিহাইড্রেশন সল্যুশন) কাজ করে। ডাবের জলে প্রচুর নিউট্রিয়েন্ট থাকে। নিয়মিত ডাবের জল খেলে কিডনিতে পাথর হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই কমবে। তবে ডাবের জল নিয়মিত না খেলেও চলবে। তবে আমাদের সুস্থ থাকতে, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য হাই ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খেতেই হবে। এর সঙ্গে অ্যানিমিয়ার বিরুদ্ধে লড়া, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করা, ক্যান্সার প্রতিরোধ, হাড়ের ক্ষয় রোধ করার ক্ষেত্রে ফাইবারযুক্ত খাবারের জুড়ি নেই। আগেই বলেছি যে এই ধরনের খাবার ডায়েটে থাকলে কোলেস্টেরল, ট্রাইগ্লিসারাইডও নিয়ন্ত্রণে থাকবে। ফলে পরোক্ষভাবে হার্টও সুস্থ থাকবে।
কিডনি রোগীদের ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ
যেসব খাবারে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম আছে, সেসব খাবার কিডনির সমস্যা থাকলে রোগী খেতে পারবে না। হাই পটাশিয়াম যুক্ত খাবার ফলের মধ্যে হল শসা, কলা, লেবু ইত্যাদি। কারণ কিডনি রোগের প্রধান সমস্যা হচ্ছে পটাশিয়াম বেড়ে যাওয়া। তাই এই সব ফল মেপে খেতে হবে। ফাইবার এই ধরনের রোগীর জন্য কোনও সমস্যা সৃষ্টি করে না। যে খাবারগুলোর নাম এতক্ষণ বললাম সেগুলোতে প্রোটিন কমই থাকে। কিডনির সমস্যায় পটাশিয়াম ছাড়াও প্রোটিন ইনটেকেও নিয়ন্ত্রণ রাখতে হবে। ডাবের জলে খুব সমস্যা নেই। তবে রোজ না খেয়ে সপ্তাহে একটা ডাবের জল খাওয়া যেতে পারে। অ্যানিমাল প্রোটিন আমরা নিয়ন্ত্রণে রেখে খেতে বলি। শাক-সব্জি থেকে প্রাপ্ত প্রোটিনের ক্ষেত্রে সেরকম কোনও নিষেধাজ্ঞা নেই। এরমধ্যে একটা বিষয় বলে রাখি। শীতকালে প্রচুর শাক-সব্জি পাওয়া যায়। যেমন ফুলকপি। ফুলকপি খেলে এমনিতে কোনও সমস্যা নেই। তবে বেশি পরিমাণে খেলে ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে গিয়ে সমস্যা দেখা দিতে পারে। ফুলকপি যে খুব গুণযুক্ত সব্জি তাও নয়। এর থেকে বরং ব্রকোলি খাওয়া অনেক ভালো। ব্রকোলি খেলে একে তো ইউরিক অ্যাসিড কমবে। আর যেহেতু এটা সবুজ, এর নিউট্রিশনাল ভ্যালু অনেক বেশি। অনেক মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টও থাকে ব্রকোলিতে। ফুলকপির থেকে বরং বাঁধাকপি খাদ্যতালিকায় থাকা খুব ভালো। এছাড়া ওল কপিও খাওয়া যেতে পারে। বিট গাজরে ভিটামিন এ বেশি থাকে। হাই ফাইবার যুক্ত খাবার নয়। তবে এগুলোরও অনেক গুণ আছে। ডায়াবেটিস রোগীদের অবশ্য বিট-গাজর খাওয়ার ক্ষেত্রে সাবধান থাকতে হবে। এছাড়া বাজারে গেলে নানা ধরনের ক্যাপসিকাম দেখতে পাবেন—সবুজ তো আছেই। এছাড়া লাল, হলুদ নানা রঙের। যে কোনও ক্যাপসিকাম খাওয়াই ভালো। সবচেয়ে ভালো সবুজ ক্যাপসিকাম। এতেও হাই ফাইবার রয়েছে। এছাড়া অন্যান্য রঙের ক্যাপসিকামেও নানা নিউট্রিয়েন্ট থাকে। শীতকালে আমরা আর একটা জিনিস করি। কপি খেলে তার ডাঁটাগুলো ফেলে দিই। এই ডাঁটাগুলোয় কিন্তু হাই ফাইবার থাকে। আপনাকে অতিরিক্ত টাকা খরচ করে এই ডাঁটা কিনতে হচ্ছে না। একই টাকা খরচ করে আপনি ডাঁটা পাচ্ছেন। মা- ঠাকুরমারা এসব ডাঁটা দিয়ে চচ্চড়ি বানান। এর পুষ্টিগুণও কিন্তু অসামান্য। শীতে প্রচুর পরিমাণে হরেকরকম শাক-সব্জি পাওয়া যায়। ফলে এই ব্যাপারটার সদ্ব্যবহার করতে হবে। ইউরিক অ্যাসিডে যাঁরা কষ্ট পান তাঁদের দানাযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। অতি অবশ্যই টম্যাটোর কথা বলতে হবে। শরীর থেকে কোলেসিস্টোকাইনিন নির্গমণে সাহায্য করে টম্যাটো। ফলে পেট ভরে আছে এমন অনুভূতি হয়। মাত্রাতিরিক্ত খাদ্যগ্রহণ থেকে বিরত থাকা যায়। তবে টম্যাটোর বীজ, ঢেঁড়স তো নয়ই, ফুলকপিও পরিমাণে কম খেতে হবে। মাশরুম একদমই খাওয়া চলবে না। বাতাবিলেবু, কমলালেবু, পাতিলেবু, মুসাম্বি অর্থাৎ যে কোনও ধরনের লেবু ইউরিক অ্যাসিডের সমস্যায় ভোগা রোগীর খাদ্যতালিকায় রাখতে হবে। কারণ এদের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি আছে। সঙ্গে দিনে অন্ততপক্ষে ৩ লিটার জল খেতে হবে। জল ইউরিনের মাধ্যমে ইউরিক অ্যাসিডকে শরীর থেকে বের করে দেয়।
শেষের কথা
শেষে একটা কথা বলা দরকার। শুধু সব্জি খেলেই হবে না। রান্নাটাও সেভাবে করতে হবে। প্রচুর পরিমাণে তেল দিয়ে রান্না করলে শেষ পর্যন্ত কোনও লাভ হয় না। শরীরে ফ্যাট জমেই যায়। এছাড়া শাকসব্জিতে এখন বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক সার মেশানো হচ্ছে। তাই রান্না করার আগে গোটা সব্জি জলে ভিজিয়ে রাখুন আধঘণ্টা। ভালো করে ধুয়ে নিন। এত বিভিন্ন রাসায়নিক এবং রং থাকলে তা জলে ধুয়ে যাবে। নিরাপদে শাকসব্জি খাওয়া যাবে। এই বিষয়গুলো মোটামুটি মেনে চললেই সুস্থ শরীরে বেঁচে থাকা সম্ভব।
অনুলিখন: সন্দীপ রায়চৌধুরী
related_post
অমৃত কথা
-
অবিদ্যা
- post_by বর্তমান
- জুলাই 17, 2025
এখনকার দর
-
ইউরো
- post_by Admin
- জুলাই 17, 2025
-
পাউন্ড
- post_by Admin
- জুলাই 17, 2025
-
ডলার
- post_by Admin
- জুলাই 17, 2025
-
নিফটি ব্যাঙ্ক
- post_by Admin
- জুলাই 16, 2025
-
নিফটি ৫০
- post_by Admin
- জুলাই 16, 2025
-
রুপোর দাম
- post_by Admin
- জুলাই 17, 2025
-
সোনার দাম
- post_by Admin
- জুলাই 17, 2025