শনিবার, 17 মে 2025
Logo
  • শনিবার, ১৭ মে ২০২৫

এই গরমে নিমফুল ও বীজ কেন উপকারী?

নিম ফুলের গুণ: উত্তরপ্রদেশ, ওড়িশা, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ থেকে শুরু করে মহারাষ্ট্র, গুজরাট, অন্ধ্রপ্রদেশ, তামিলনাড়ু পর্যন্ত ভারতের অধিকাংশ রাজ্যেই নিমগাছ দেখতে পাওয়া যায়।

এই গরমে নিমফুল ও বীজ কেন উপকারী?

লিখেছেন আয়ুর্বেদ চিকিত্‍সক ডাঃ লোপামুদ্রা ভট্টাচার্য।

নিম ফুলের গুণ: উত্তরপ্রদেশ, ওড়িশা, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ থেকে শুরু করে মহারাষ্ট্র, গুজরাট, অন্ধ্রপ্রদেশ, তামিলনাড়ু পর্যন্ত ভারতের অধিকাংশ রাজ্যেই নিমগাছ দেখতে পাওয়া যায়। দক্ষিণ ভারতের বিভিন্ন স্থানে জানুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত নিমগাছে ফুল ফুটতে দেখা যায়। উত্তর ও উত্তর-পূর্ব ভারতে প্রায় মে মাস পর্যন্ত নিম গাছে ফুল হয়। সাদা অথবা হালকা হলুদ রঙের নিমফুল আকৃতিতে ছোট আর এতে মধুর মতো মিষ্টিগন্ধ আছে। নিম ফুলের স্বাদ তেতো। নিমফুল এবং এর থেকে যে মধু পাওয়া যায় দুটোই ভেষজগুণ যুক্ত। 
নিম ফুল অরুচি, হজমের সমস্যা, পেটের জীবাণু সংক্রমণ কমাতে ব্যবহার করা হয়। এছাড়া পেটে ব্যথা, পেটে ভার বোধ, গ্যাসের সমস্যা কমাতে এই ফুল খেতে পারেন। নিমফুল কাঁচা অথবা শুকনো অবস্থায় ঘিেয় ভেজে খেলে এইসব অসুখে খুব উপকার হয়। অ্যালার্জি, স্কিন র‌্যাশ, চুলকানি, হাত-পায়ের জ্বালা বোধ কমাতে নিমফুল খুব উপকারী। ত্বকের ছত্রাক সংক্রমণ দূর করতে নিমফুল বাটা লাগাতে পারেন। এই ফুল শুকনো করে পাউডার তৈরি করা হয়। কৃমির চিকিৎসায় নিমের ফুল খুবই কার্যকর। মাসে দু’-তিন বার এই নিমফুল পাউডার অন্তত তিনমাস ব্যবহার করতে হবে। বমি ও বমিভাব দূর করতে এবং লিভারকে সুস্থ রাখতে নিমফুল খেতে পারেন। যারা ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে চান তাদের ক্ষেত্রে নিম ফুল চূর্ণ (পাউডার) অত্যন্ত উপকারী। সামান্য পরিমাণ মধু (নিম মধু হলে ভালো হয়) মিশিয়ে নিমফুল চূর্ণ নিয়মিত খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউনিটি বাড়বে। জাঙ্ক ফুডে যারা আসক্ত তাদের জন্য নিমফুল খুব উপকারী। এতে জাঙ্ক ফুডজনিত ক্ষতির হাত থেকে পরিপাকতন্ত্রকে রক্ষা করা যায়। নিমফুলে প্রচুর ডায়েটারি ফাইবার আছে। এছাড়া এতে আছে ক্যালশিয়াম, ফসফরাস, কার্বোহাইড্রেট ও প্রোটিন। নিমফুল রোদে শুকিয়ে সপ্তাহে একবার করে খেলে গ্রীষ্মকালীন অসুখ-বিসুখ থেকে রেহাই পাওয়া যায়। নিমের ফুল অ্যান্টিসেপটিক এবং শরীর থেকে টক্সিক দূর করে। নিমফুল ও আদাবাটা এবং গুড় জলে মিশিয়ে যে পানীয় তৈরি করা হয় তা গরমে শরীরকে ঠান্ডা রাখে, হিটস্ট্রোক এবং ডিহাইড্রেশানের ভয় থাকে না। এই পানীয় ডায়াবেটিস রোগীরাও নিশ্চিন্তে খেতে পারেন। এতে সুগার বাড়ার ভয় নেই। 
নিম বীজের গুণ: জুন থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত নিমগাছে ফল হয়। নিমের ফল থেকে যে বীজ পাওয়া যায় তা থেকেই বিশেষ প্রক্রিয়ায় নিমতেল নিষ্কাশন করা হয়। এক একটা পূর্ণবয়স্ক নিম গাছ থেকে প্রায় ৫ কেজি নিম বীজ পাওয়া যেতে পারে। নিমের তেল অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি মাইক্রোবিয়াল গুণ যুক্ত। বিভিন্ন হেল্থকেয়ার প্রোডাক্ট-এর (সাবান, শ্যাম্পু, হেয়ার অয়েল, টুথপেস্ট) উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়। নিমবীজ পাউডার নারকেল তেলে মিশিয়ে মাথায় রাখলে উকুন ও ড্যানড্রাফ দূর হয়। চর্মরোগ সারাতে স্নানের জলে কর্পূর ও নিমবীজ পাউডার মেশাতে পারেন (মাত্রা ১-২ গ্রাম)। নিম বীজ পুড়িয়ে যে ধোয়া হয় তা মসকুইটো রিপিলেন্ট হিসেবে কাজ করে। এছাড়া এই ধোয়াতে ঘরের পোকামাকড় দূর হয়। নিম তেল বের করার পর নিম বীজের অবশিষ্টভাগ চাষের জমিতে জৈব সার হিসেবে প্রয়োগ করা হয়। এতে অ্যাজডির‌্যাকটিন এবং নিম্বিন নামক দুটি রাসায়নিক থাকে যার ফলে গাছের ছত্রাক সংক্রমণ হয় না। এই দু’টি রাসায়নিক নানা পোকা মাকড়ের হাত থেকে গাছকে রক্ষা করে। নিমের বীজ চূর্ণ ও চন্দনবাটা মাখলে ব্রণ কমে, ত্বক নমনীয় হয়, ত্বকের ছত্রাক সংক্রমণ কমে। স্কেবিস রোগ দূর করতে নিম বীজ চূর্ণ ব্যবহার করা যায়। এছাড়া রিংওয়াম বা দাদ সারাতে এই বীজ ব্যবহৃত হয়। যারা ডায়াবেটিসের সমস্যায় ভুগছেন তারা মধু মিশিয়ে (২-৩ ফোঁটা) নিমবীজ চূর্ণ খেলে উপকার পাবেন। এতে সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণে আসে এবং সেইসঙ্গে দেহের টক্সিন দূর হয়। এতে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট থাকায় ইমিউনিটি বাড়ে, ইনফেকশন নিয়ন্ত্রণে থাকে। নিমসিড পাউডার লেবুর রসে মিশিয়ে স্ক্রাবার হিসেবে ব্যবহার করা যায়। যাদের অ্যালার্জির প্রবণতা আছে আগে অল্প মাত্রায় নিম বীজ চূর্ণ ত্বকে প্রয়োগ করে সহ্য হচ্ছে কি না অবশ্যই দেখে নেবেন।