বৃহস্পতিবার, 19 জুন 2025
Logo
  • বৃহস্পতিবার, ১৯ জুন ২০২৫

পাক জঙ্গিদের নিশানায় পুরীর মন্দির? প্রশ্নের মুখে ধৃত লাস্যময়ী চরের কলকাতা সফরও, নজরে ওড়িশার তরুণী ‘সঙ্গী’

এবার কি পাক জঙ্গিদের লক্ষ্য পুরীর জগন্নাথ মন্দির? পাকিস্তানের হয়ে চরবৃত্তির অভিযোগে লাস্যময়ী ট্রাভেল ভ্লগার জ্যোতিরানি মালহোত্রা গ্রেপ্তার হওয়ার পর এই প্রশ্ন হঠাৎ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। 

পাক জঙ্গিদের নিশানায় পুরীর মন্দির? প্রশ্নের মুখে ধৃত লাস্যময়ী চরের কলকাতা সফরও, নজরে ওড়িশার তরুণী ‘সঙ্গী’

ভুবনেশ্বর: এবার কি পাক জঙ্গিদের লক্ষ্য পুরীর জগন্নাথ মন্দির? নিশানায় কলকাতাও রয়েছে? পাকিস্তানের হয়ে চরবৃত্তির অভিযোগে লাস্যময়ী ট্রাভেল ভ্লগার জ্যোতিরানি মালহোত্রা গ্রেপ্তার হওয়ার পর এই প্রশ্ন হঠাৎ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। কারণ, গত সেপ্টেম্বরেই পুরী জগন্নাথধামে গিয়েছিল জ্যোতি। আর গত ফেব্রুয়ারি মাসে কলকাতায় এসেছিল সে।
গোয়েন্দা সূত্রে খবর, পুরীর মন্দির এবং গোটা চত্বরের ভিডিও করার পাশাপাশি এক ‘কনটেন্ট ক্রিয়েটারে’র সঙ্গেও সে যোগাযোগ করে। কে সেই সন্দেহভাজন? ওড়িশারই আর এক মহিলা ইউটিউবার। এখানেও সন্দেহ করার মতো কিছু ছিল না। কিন্তু খুঁটিনাটি খতিয়ে দেখতে গিয়ে গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, এই মহিলা ইউটিউবারও সম্প্রতি পাকিস্তানের কর্তারপুর সাহিবে গিয়েছিল। এখানেই টনক নড়েছে গোয়েন্দাদের। প্রশ্ন একটাই—কানেকশনটা কী? শুধুই কি পুরী? নাকি অন্য তীর্থক্ষেত্রগুলিকেও টার্গেট করছে পাকিস্তান? কারণ, ধৃত জ্যোতি কিন্তু ভারতের বেশ কয়েকটি এমন তীর্থস্থানে সম্প্রতি গিয়েছে। ভিডিও করেছে। সেই সব জায়গাতেও স্থানীয় কোনও যোগাযোগ তার নেই তো? যাদের সঙ্গেও পাকিস্তানের যোগাযোগ রয়েছে? সেই প্রসঙ্গেই আতসকাচের নীচে তার বঙ্গ সফরও। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি ইউটিউবে পোস্ট করা একটি ভিডিওতে দেখা যায়, শিয়ালদহ স্টেশনের বাইরে দাঁড়িয়ে জ্যোতি। এক ইউটিউবারের বিয়ে উপলক্ষ্যে তার এই সফর। স্থানীয় অপর এক ভ্লগারের সঙ্গে শিয়ালদহ থেকে ট্রেনে প্রথমে বারাকপুর ও পরে গঙ্গা পেরিয়ে শেওড়াফুলি যায় তারা। কিন্তু যেভাবে  ওই ভিডিওতে শিয়ালদহ স্টেশনের খুঁটিনাটি তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে, তা চিন্তা বাড়িয়েছে তদন্তকারীদের। এই পর্বে সে বারাকপুর ক্যান্টনমেন্ট বা জেটিঘাট সংক্রান্ত কোনও তথ্য সংগ্রহ করছিল কি না, তাও ভাবাচ্ছে গোয়েন্দাদের। 
ট্রাভেল ভ্লগিংয়ের আড়ালে ভারতের গোপন, সংবেদনশীল তথ্য পাকিস্তানে নিয়মিত পাচার করার অভিযোগ রয়েছে জ্যোতির বিরুদ্ধে। আর তাকে কাজে লাগিয়েছিলেন ভারতে নিযুক্ত পাকিস্তান দূতাবাসের এক প্রাক্তন কর্মী। গত বছর থেকে গ্রেপ্তার হওয়ার আগে পর্যন্ত ভারতের যে যে জায়গায় জ্যোতি গিয়েছে, সেই সব জায়গাই এখন তদন্তকারী আধিকারিকদের স্ক্যানারে। আর অনুসন্ধান করতে গিয়েই উঠে এসেছে পুরীর শ্রীজগন্নাথ মন্দিরের নাম। জ্যোতির পুরী ভ্রমণ নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে ওড়িশা পুলিস। পুরীর মন্দিরে প্রতিদিন হাজার হাজার ভক্ত ভিড় করেন। এমন জায়গায় জঙ্গিরা হামলা চালাতে পারলে পহেলগাঁওয়ের থেকে কয়েকগুণ বেশি ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। তাই ভ্লগিংয়ের নামে জগন্নাথধাম নিয়েও কোনও সংবেদনশীল তথ্য জ্যোতি পাকিস্তানে পাচার করেছে কি না, নিশ্চিত হতে চাইছে তদন্তকারীরা। জ্যোতির ‘সঙ্গী’ ইউটিউবারকে শনিবার ডেকে পাঠিয়ে জেরা করা হয়েছে।
গত সেপ্টেম্বরে পুরী গিয়েছিল জ্যোতি। ৪ ও ৫ অক্টোবর নিজের ইউটিউব চ্যানেলে দু’টি ভিডিও আপলোড করে সে। জগন্নাথধামে কীভাবে প্রবেশ করতে হয়, ভক্তদের লাইনে দাঁড়ানোর ব্যবস্থা, নিরাপত্তাকর্মী ও পুলিসকর্মীরা ঠিক কোন জায়গায় থাকেন—প্রথম ভিডিওতে সেসবের বিবরণ ও ছবি রয়েছে। দূর থেকে গর্ভগৃহের ভিডিও পর্যন্ত করেছে জ্যোতি। দ্বিতীয় ভিডিওতে পুরী স্টেশন থেকে ট্রেনে দিল্লি সফরের বিবরণ। তাতে পুরী স্টেশনের প্রবেশপথ, ফুট ওভারব্রিজের ছবিও আছে। তাতে অস্বাভাবিকতা না থাকলেও কোনও কিছুকেই আর সন্দেহের বাইরে রাখতে চাইছেন না গোয়েন্দারা।
পুরীর পুলিস সুপার বিনীত আগরওয়াল জানান, পুরীতে জ্যোতি কোথায় ছিল, কার সঙ্গে দেখা করেছিল, সবটাই তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তবে ওড়িশার ওই ইউটিউবার নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করেছেন। তাঁর বাবার দাবি, ‘আমার মেয়ে তীর্থ করতেই ৩-৪ মাস আগে কর্তারপুর সাহিবে গিয়েছিল।’