বৃহস্পতিবার, 17 জুলাই 2025
Logo
  • বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই ২০২৫

গরমে নিম্বু পানি না কোল্ড ড্রিংক!

গরমে প্রাণ আইঢাই। যাঁরা শুধু ঘরের কাজ করেন তাঁদের কথা একরকম। কিন্তু যাঁদের রোদে তেতে পুড়ে ঘুরে ফিরে কাজ করতে হয়, এই গরমে সুযোগ পেলেই তাঁরা ঢকঢক করে নানা ধরনের পানীয় গলায় ঢালেন। 

গরমে নিম্বু পানি না কোল্ড ড্রিংক!

ডাঃ অমিতাভ ভট্টাচার্য: গরমে প্রাণ আইঢাই। যাঁরা শুধু ঘরের কাজ করেন তাঁদের কথা একরকম। কিন্তু যাঁদের রোদে তেতে পুড়ে ঘুরে ফিরে কাজ করতে হয়, এই গরমে সুযোগ পেলেই তাঁরা ঢকঢক করে নানা ধরনের পানীয় গলায় ঢালেন। আখের রস, লস্যি, কোল্ড ড্রিংক, ডাবের জল, নিম্বু পানি, রাস্তাঘাটে বিক্রি হওয়া রঙিন জল— কিছুই বাদ যাচ্ছে না। এতে সাময়িক তেষ্টা নিবারণ হলেও নানা ধরনের বিপত্তি দেখা দেয়। অনেকের ধারণা, গরমকালে যত ঠান্ডা খাওয়া যায়, ততই নাকি শরীর ঠান্ডা থাকে, অসুখ-বিসুখ হয় না। এ ধারণা কিন্তু ঠিক নয়।
       গরমে লেবু জল শরীরের পক্ষে ভীষণ উপকারী। হরেক রকম লেবু পাওয়া যায় বাজারে। পাতিলেবু, কমলা লেবু, মুসম্বি লেবু, গন্ধরাজ এবং বাতাবি লেবু। ১০০ গ্রাম পাতি বা কাগজি লেবু থেকে শক্তি পাওয়া যায় ৫২ কিলো ক্যালরি, ৯০ মিলিগ্রাম ক্যালশিয়াম, ফসফরাস ২০ মিলিগ্রাম এবং ভিটামিন সি ৬৩ মিলিগ্রাম—যা আপেলের ৩২ গুণ এবং আঙুরের দ্বিগুণ। এছাড়া নানা ধরনের ভিটামিন বি, নিয়াসিন ও অন্যান্য খাদ্য উপাদানও লেবুতে থাকে। কাজেই লেবু অবশ্যই দেহের পক্ষে উপকারী ফল।
       লেবু খেলে টক লাগে সাইট্রিক অ্যাসিডের উপস্থিতির জন্য, অথচ লেবু খেলে অ্যাসিড হয় না, উল্টে অ্যাসিড কমে। যেজন্য ভোজবাড়িতে ভূরিভোজ খাওয়ার পর অনেককেই দেখবেন এক গ্লাস জলে এক টুকরো লেবু চটকে পান করেন। 
ব্যাপারটা কী ঘটে? লেবুর সাইট্রিক অ্যাসিড  পাকস্থলীর সোডিয়াম লবণের সঙ্গে বিক্রিয়া করে সোডিয়াম সাইট্রেট নামক একটি যৌগ তৈরি করে। এই যৌগটি ক্ষারধর্মী, যা পাকস্থলীর অতিরিক্ত  অ্যাসিডের সঙ্গে বিক্রিয়া করে সেই  অ্যাসিডের পরিমাণ কমিয়ে দেয়। ফলে লেবুর জল পান করলে  অ্যাসিডিটি-বদহজম ইত্যাদি কমে।
       এছাড়া চর্ম রোগ, সর্দি-কাশি, মাথার খুশকি, পেটের রোগ, মাড়ির অসুখ, গরমে অস্বস্তি, বাত-সহ নানা রোগে লেবু রীতিমতো ওষুধের ভূমিকা গ্রহণ করে। আন্ত্রিক রোগে শরীরে লবণ জলের ভারসাম্য ঠিক রাখতে ওরাল রিহাইড্রেশন ফ্লুইডের প্রয়োজন হয়। এখানেও লেবুর রসের জবাব নেই।
         গরমে আমাদের কোল্ড ড্রিংক ছাড়া চলে না। পকেট গরম থাকলেই ঢক ঢক করে গলায় ঢালি। এতে ৯৫ শতাংশই থাকে জল, ৪ ভাগ চিনি বা অন্য কোনও মিষ্টি থাকে। থাকে সাইট্রিক অ্যাসিড, ফসফরিক অ্যাসিড, হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড, সোডিয়াম বা পটাশিয়াম ক্লোরাইড। এছাড়া সুগন্ধি এবং রং। 
টাটকা ফলের রস কখনও থাকে না, থাকলে পচন দেখা দিত। অবশ্য চিনির দ্রবণের পচন রোধ করতে এতে পচনরোধক প্যারাবেন জাতীয় রাসায়নিক পদার্থ মিশিয়ে স্টেরিলাইজড করে তাতে কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাস মিশিয়ে মেশিনে সিল করা হয়। স্বাদ এবং রঙে আকর্ষণীয় করার জন্য অনেক কোম্পানি কোল্ড ড্রিঙ্কে ফ্লোরিন এবং ব্রোমিন যুক্ত নানা ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করছে। এগুলো কিন্তু শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর। অল্প খেলে দোষের কিছু নেই। মনে হয় ক্লান্তি দূর হয়ে বেশ একটা তরতাজা ভাব লাগছে। বেশি খেলেই বিপত্তি। অতিরিক্ত সোডিয়াম ও পটাশিয়াম এবং অ্যাসিড শরীরের ক্ষতি করে, বিশেষ করে হৃদরোগী ও গ্যাস্ট্রিকের রোগীদের। রং ও অন্যান্য রাসায়নিক পদার্থ লিভার এবং কিডনির ক্ষতি করে। কোলেস্টেরল এবং সুগার, প্রেশার বাড়তে পারে, ঘা দেখা দিতে পারে পাকস্থলীতে।
     আরেকটা কথা। বিজ্ঞাপনে যেমন দেখায় ঠিক তেমনিভাবে কোল্ড ড্রিংক কখনওই ঢকঢক করে সরাসরি গলায় ঢালবেন না। কারণ অতিরিক্ত কার্বন-ডাই-অক্সাইড পাকস্থলীতে হঠাৎ গ্যাসের চাপ বাড়িয়ে হার্টের উপর প্রেশার সৃষ্টি করতে পারে। বয়স্কদের হার্টের অসুখ থাকলে অঘটন ঘটাও অসম্ভব নয়।
যোগাযোগ: ৯৮৩০২১৭৯২৮

রাশিফল