শনিবার, 17 মে 2025
Logo
  • শনিবার, ১৭ মে ২০২৫

দিনে কটা খেজুর খাওয়া যায়?

শরীর ঠিক রাখতে ফলের কোনও বিকল্প নেই। কিছু বছর আগেও বাঙালি ঘরে ফল ছিল মূলত দুপুরের ডেজার্ট আইটেম। মানে দুপুরের মূল খাবারের পর স্বাদবদলের খাদ্য।

দিনে কটা খেজুর খাওয়া যায়?

পরামর্শে পশ্চিম মেদিনীপুরের দেপাড়া ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের আয়ুর্বেদিক মেডিক্যাল অফিসার ডাঃ সুমিত সুর

 

শরীর ঠিক রাখতে ফলের কোনও বিকল্প নেই। কিছু বছর আগেও বাঙালি ঘরে ফল ছিল মূলত দুপুরের ডেজার্ট আইটেম। মানে দুপুরের মূল খাবারের পর স্বাদবদলের খাদ্য। কিন্তু ফলও যে মূল খাদ্য হিসেবে আমরা গ্রহণ করতে পারি, তা হালে আমরা বুঝেছি। সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হতে আমরা ডায়েটে রাখছি নানা ফল। কিন্তু নজর এক্সোটিক ফলে। না, সেইসবে ফলে সমস্যা নেই। তবে হাতের কাছেও এমন কিছু ফল আছে, যেগুলোর খাদ্যগুণ সম্পর্কে আমাদের অনেকেরই সম্যক ধারণা নেই। 
এই যেমন খেজুর। প্রসাদী ফল বা হালকা খিদে মেটানোর জন্যই সাধারণত খেজুর খাই আমরা। তবে এই ফলের রয়েছে বিস্ময়কর সব গুণাগুণ। খেজুর মিষ্টি ফল। তাই সহজেই চিনির বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যায়। আবার এতে রয়েছে কার্বোহাইড্রেট, ফাইবার, একাধিক ভিটামিন, ক্যালশিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেশিয়াম, পটাশিয়াম, জিঙ্ক, ম্যাঙ্গানিজের মতো পুষ্টিকর পদার্থ। জাদুকরি এই ফলে আছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টও। 
খেজুর এল কোথা থেকে?
খেজুর আসলে ঠিক কোন দেশের ফল, তা হলফ করে বলা যায় না। তবে পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলেই এই ফলের চাষ শুরু প্রথম হয় বলে অনুমান। খ্রিস্টপূর্ব ৪ হাজার বছর আগের প্রাচীন মেসোপটেমিয়া সভ্যতা বা মিশরীয় সভ্যতায় খেজুরের ব্যবহারের প্রমাণ মিলেছে। মিশরে এই খেজুর থেকে মদজাতীয় তরল তৈরি হতো। হরপ্পা সভ্যতার সময়কালেও মানুষ খেজুরের খাদ্যগুণ সম্পর্কে অবগত ছিল। 
আয়ুর্বেদে খেজুরের স্থান
আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে খেজুরের গুরুত্ব অপরিসীম। চরকসংহিতা, সুশ্রুতসংহিতা, ভাবপ্রকাশনিঘন্টুসহ একাধিক প্রাচীন আয়ুর্বেদিক শাস্ত্রে আমরা খেজুরের উপকারিতা সম্পর্কে জানতে পারি। এখানে মূলত তিন ধরনের খেজুরের কথা বলা আছে। ভূমিখর্জূর, স্কন্দফলা ও পিণ্ডখর্জূর। আয়ুর্বেদ শাস্ত্র অনুযায়ী, এটি মধুর (মিষ্টি), গুরু (হজমের জন্য ভারী), রক্তপিত্তপ্রশমক (পিত্তদোষ ও রক্তদোষ নিরাময়ে উপকারী)। খেজুর থেকে প্রস্তুত নানা আয়ুর্বেদিক ওষুধ একাধিক জটিল রোগ নিরাময়ে ব্যবহার করা হয়। তবে খুব বেশি পরিমাণে খেজুর খাওয়া ঠিক নয়। কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। আমরা সাধারণত দুই ধরনের খেজুর দেখতে পাই। একটি আঠালো, একটি লম্বা শুকনো। আর গ্রামবাংলায় দেখা যায় একটু গোল ধরনের খেজুর। তিন ধরনের খেজুরের পুষ্টিগুণই কিন্তু প্রায় সমান। 
খেজুরে রোগ প্রতিরোধ
 খেজুরে প্রচুর ফাইবার থাকে। ফলে পেটের সমস্যা দূর হয়। কমে বদহজম, কোলাইটিসের মতো সমস্যাও।
  খেজুরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন। ফলে রক্তাল্পতার সমস্যা থাকলে নিয়মিত খেজুর খাওয়া দরকার। 
  বর্তমানে কমবেশি সবারই কোলেস্টেরলের সমস্যা দেখা দিচ্ছে। ঝুঁকি বাড়ছে হার্ট অ্যাটাকের। খেজুরের মধ্যে উচ্চমাত্রায় পটাশিয়াম রয়েছে। তাতে কোলেস্টেরল অনেক নিয়ন্ত্রণে থাকে। কমে হার্টের যে কোনও রোগের ঝুঁকি। 
 খেজুর থেকে প্রচুর ক্যালোরি মেলে। তাই যাঁরা দৈহিক পরিশ্রমের কাজ করেন, তাঁদের নিয়মিত খেজুর খাওয়া উচিত। শরীরে শক্তি অটুট থাকবে।
 খেজুরে থাকা ক্যালশিয়ামের কারণে আমাদের হাড়, দাঁত, নখ শক্ত হয়। 
 সারাদিন উপোস করলে দিনের শেষে খাবারে অবশ্যই থাকুক খেজুর। এতে প্রচুর শর্করা রয়েছে। ফলে সারাদিনের উপোসের পর খেজুর খেলে শরীর তাড়াতাড়ি চাঙ্গা হয়। এই কারণেই কিন্তু বিভিন্ন সম্প্রদায়ের নানা ধর্মীয় উৎসবে খেজুর অন্তর্ভুক্ত চল যুগ যুগ ধরে চলে আসছে।
 শিশু রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে খেজুর সাহায্য করে। সেক্ষেত্রে শিশুর ওজন কম হলে, রক্তাল্পতায় ভুগলে নিয়মিত একটি করে খেজুর খাওয়ানো উচিত।
দিনে কটা খেজুর খাওয়া যায়
ছোটরা ১টা ও বড়রা দিনে গড়ে ২-৩টে খেজুর খেতে পারেন। মনে রাখতে হবে খেজুর কিন্তু মিষ্টি। তাই যাঁদের ডায়াবেটিস রয়েছে, নিয়মিত খেজুর খাওয়া চলবে না। ওবেসিটিতে ভুগলেও প্রত্যহ খেজুর খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।

লিখেছেন: সায়ন মজুমদার