বুধবার, 21 মে 2025
Logo
  • বুধবার, ২১ মে ২০২৫

ইয়ারপড, ইয়ারফোন, হেডফোন দিনে কতক্ষণ ব্যবহার?

পরামর্শে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ ইএনটি বিশেষজ্ঞ ডাঃ রামানুজ সিনহা।

ইয়ারপড, ইয়ারফোন, হেডফোন দিনে কতক্ষণ ব্যবহার?

পরামর্শে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ ইএনটি বিশেষজ্ঞ ডাঃ রামানুজ সিনহা।

কানের অ্যানাটমি বা কানে শোনার পদ্ধতিটি আসলে কী?
 বাইরে থেকে কানের যেটুকু অংশ দেখা যায় বা বলা যায়, যে অংশটুকু ধরে ছাত্রাবস্থায় মাঝেসাঝেই আমরা কানমলা খেতাম, সেই অংশকে বলে ‘পিনা’। এর কাজ শুধু বাইরের শব্দরাশি সংগ্রহ করা। এরপর কানের যে গর্তটি রয়েছে যা বাইরে থেকেও দেখা যায় সেখান থেকে শুরু হয় এক্সটার্নাল অডিটরি ক্যানাল। এই গর্তের মধ্যে রয়েছে একটি নালী যেখানে কানের ময়লা বা ওয়াক্স জমে। তা শেষ হলে শুরু হয় কানের পর্দা। পিনার সংগ্রহ করা শব্দ কানের গর্তের ভিতর থাকা নালিপথ দিয়ে গিয়ে কানের পর্দায় আঘাত করে। এর পর মধ্যঃকর্ণে থাকে তিনটি তরুণাস্থি ম্যালিয়াস, ইনকাস ও স্টেপিস। এই তিন ছোট ছোট হাড়ের মাধ্যমে শব্দতরঙ্গ অন্তঃকর্ণে পৌঁছয়। অন্তঃকর্ণে পৌঁছানোর পর শব্দশক্তি বৈদ্যুতিন শক্তিতে পরিণত করে। এই শক্তিই ককলিয়ার নার্ভের মাধ্যমে মস্তিষ্কে প্রবেশ করে শব্দ চিনতে সাহায্য করে। 
 ইয়ারফোন, ইয়ারপড, হেডফোন কীভাবে শ্রবণক্ষমতার ক্ষতি করে?
 অবশ্যই ক্ষতি করে। আমাদের কানে শব্দ প্রবেশের একটা নিজস্ব রীতি আছে। হেডফোন, ইয়ারপড বা ইয়ারফোন থেকে আসা শব্দের প্রাবল্য অনেক বেশি। ফলে তা কানের নার্ভে চাপ দেয়। বহু দিন ধরে দীর্ঘ সময় একটানা কানে এসব গুঁজে শব্দ শুনলে তা থেকে সেই নার্ভের ক্ষতি হয় ও শ্রবণ ক্ষমতা কমে যায়। এই সমস্যা নিয়ে বহু রোগী নিয়মিত আসেন। এই সমস্যা ইদানীংকালে অনেক বেড়েছে।
 ইয়ারফোন, ইয়ারপড না হেডফোন কোনটি বেশি ক্ষতিকারক?
 হেডফোন যেহেতু কানের ভিতরে ঢুকে থাকে না, তাই হেডফোন তুলনায় কম ক্ষতি করে। কিন্তু ইয়ারফোন বা ইয়ারপড কানের মধ্যে ঢুকে থাকে, তাই এই দু’টির ক্ষতি সবচেয়ে বেশি।
 কী কী ক্ষতি হতে পারে?
 ঘণ্টার পর ঘণ্টা কানে ইয়ারপড বা ইয়ারফোন গুঁজে ভিডিও বা সিনেমা দেখলে, গান শুনলে সরাসরি ক্ষতি হয় অন্তঃকর্ণের স্নায়ুর ক্ষতি হয়। একে বলে সেন্সরি নিউরাল হিয়ারিং লস। এছাড়া আজকাল উন্নততর প্রযুক্তির হাত ধরে বেশিরভাগ ইয়ারপড, ইয়ারফোন বা হেডফোনগুলি বাইরের শব্দ দীর্ঘ সময় ধরে উচ্চস্বরে ভিডিও, সিনেমা বা অডিও শুনলে কানের কানের পর্দার ক্ষতি হয়। এতেও শ্রবণক্ষমতা কমে। একে বলে কন্ডাক্টিভ হিয়ারিং লস। 
 চিকিৎসা কী? 
 আসলে সেন্সরি নিউরাল হিয়ারিং লস হলে সার্জারি করিয়ে তেমন কিছু লাভ হয় না। প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়লে কিছু ওষুধপত্র দিয়ে বাগে আনার চেষ্টা করা হয়। কন্ডাক্টিভ হিয়ারিং লসে তাও সার্জারির কিছু ভূমিকা থাকে, কিন্তু নার্ভ ড্যামেজ হলে আর কিছুই করার থাকে না।  
 কতক্ষণ ধরে শুনলে বিপদ বাড়বে?
 দু’ঘণ্টার বেশি নয়। আজকাল শিশুরাও এই যন্ত্রগুলি অনলাইন ক্লাশ সহ নানা ক্ষেত্রে ব্যবহার করে। অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে এখন থেকেই। নইলে পরে কানের বড় ক্ষতি হতে পারে। 
 কেমন সাবধানতা?
 ১) একটানা দু’ঘণ্টার বেশি ব্যবহার করবেন না। যখন দরকার, যেটুকু দরকার শুধু সেই সময়টুকুই শুনুন। ২) ভলিউম কম রাখুন। 
৩) পেশাসূত্রে এই যন্ত্রগুলি ব্যবহার করতে হলে বছরে একবার কোনও বিশেষজ্ঞকে দিয়ে কান পরীক্ষা করান। 
সাক্ষাৎকার: মনীষা মুখোপাধ্যায়