রবিবার, 13 জুলাই 2025
Logo
  • রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫

‘বন্ধ হচ্ছে’ হরমুজ! ঊর্ধ্বমুখী তেলের দামে উদ্বিগ্ন ভারতও

মার্কিন হামলা। পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের অশনিসঙ্কেত। আর পশ্চিম এশিয়ার তেল ও গ্যাস সরবরাহে ধাক্কা লাগার আশঙ্কা। এই ত্রিফলা সঙ্কটে রবিবারই হরমুজ প্রণালী বন্ধের সিদ্ধান্ত নিল ইরানের পার্লামেন্ট। 

‘বন্ধ হচ্ছে’ হরমুজ! ঊর্ধ্বমুখী তেলের দামে উদ্বিগ্ন ভারতও

নয়াদিল্লি: মার্কিন হামলা। পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের অশনিসঙ্কেত। আর পশ্চিম এশিয়ার তেল ও গ্যাস সরবরাহে ধাক্কা লাগার আশঙ্কা। এই ত্রিফলা সঙ্কটে রবিবারই হরমুজ প্রণালী বন্ধের সিদ্ধান্ত নিল ইরানের পার্লামেন্ট। এবার শুধু সুপ্রিম ন্যাশনাল সিকিওরিটি কাউন্সিলের সবুজ সঙ্কেতের অপেক্ষা। থমকে যাবে পারস্য উপসাগরের সঙ্গে আরব সাগরে সংযোগের একমাত্র জলপথ। আর সেইসঙ্গে সঙ্কটের মেঘ ঘনীভূত হবে জ্বালানি রাজনীতির আকাশে। মার্কিন হামলার পরই আন্তর্জাতিক বাজারে চড়তে শুরু করেছে অশোধিত তেলের দাম। একদিকে যখন ব্রেন্ট ব্যারেল প্রতি ৭৭ ডলার ছাপিয়ে গিয়েছে, তেমনই মার্কিন ডব্লুটিআই পৌঁছেছে ৭৪.০৪ ডলারে। হরমুজ প্রণালী বন্ধের পর তেলের দাম ৪০০ ডলার প্রতি ব্যারেল ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। খুব স্বাভাবিকভাবেই এই যুদ্ধ পরিস্থিতি কপালে ভাঁজ বাড়িয়েছে দিল্লির কর্তাদের। প্রশ্ন একটাই—এর প্রভাব ভারতে কতটা পড়বে? 
বিশ্বে সবথেকে বেশি পরিমাণ অশোধিত তেল আমদানি করে ভারত—প্রতিদিন ৫১ লক্ষ ব্যারেল। নজর করার মতো বিষয় হল, জুন মাসে উল্লেখযোগ্যভাবে রাশিয়ার থেকে সাম্প্রতিককালের সবচেয়ে বেশি পরিমাণ অশোধিত তেল আমদানি করা হয়েছে। ১৯ লক্ষ ৬০ হাজার ব্যারেল থেকে বেড়ে অঙ্কটা দাঁড়িয়েছে প্রায় ২০ লক্ষ ব্যারেলে। আমদানির ক্ষেত্রে দ্বিতীয় দেশ আমেরিকা। আগে প্রতিদিন ২ লক্ষ ৮০ হাজার ব্যারেল মার্কিন ডব্লুটিআই তেল আমদানি করত ভারত। জুন মাসে সেটাই দাঁড়িয়েছে ৪ লক্ষ ৩৯ হাজার ব্যারেলে। এটা অবশ্যই নয়াদিল্লির একটা কূটনৈতিক মাস্টারস্ট্রোক। কেন? যে দেশগুলির থেকে ভারত তেল আমদানি করে, তাদের মধ্যে তৃতীয় এবং চতুর্থ স্থানে আসে ইরাক এবং সংযুক্ত আরব আমিরশাহি। হরমুজ প্রণালী বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা থেকে প্রথমেই রাশিয়া এবং আমেরিকার থেকে আমদানির বহর বাড়িয়ে নিয়েছিল নয়াদিল্লি। কারণ, এই দু’টি দেশকেই ভারতীয় উপমহাদেশে তেল সরবরাহের সময় হরমুজ প্রণালী ব্যবহার করতে হয় না। বরং তারা ইয়েমেন ও আফ্রিকার জিবুতি সংলগ্ন বাব-আল-মান্দেব প্রণালী ব্যবহার করে আরব সাগরের রুট নিয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে হরমুজ বন্ধ হলে প্রথম ধাক্কা নয়াদিল্লি খাবে না। কিন্তু এক্ষেত্রেও দুশ্চিন্তা থাকছে। দাম বৃদ্ধির। অপরিশোধিত তেলের দাম এমনিতে বাড়ছে। পারস্য উপসাগরের সাপ্লাই লাইন বন্ধ হয়ে গেলে তা আকাশ ছোঁবে। তার উপর আমেরিকার থেকে আমদানি করা তেলের রুটও একেবারে নিরাপদ নয়। কারণ, ইতিমধ্যেই পশ্চিম এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলিতে বিচ্ছিন্নতাবাদী-কট্টরপন্থী শক্তিগুলোকে সক্রিয় করতে শুরু করেছে ইরান। প্যালেস্তাইনে হামাস, লেবাননে হিজবুল্লা, সিরিয়ায় ফতেমিয় ব্রিগেড, ইরাকে আল-বদর এবং ইয়েমেনে হুথি। আমেরিকাকে আরব সাগরে পড়তে গেলে ভূমধ্যসাগর, লোহিত সাগর হয়ে আসতে হবে। সেখানেই মার্কিন কার্গোকে পেরতে হবে বাব-আল-মান্দেব প্রণালী। ইয়েমেনের উপকূল অঞ্চল যেহেতু হুথিদের দখলে, তাই ইরানের ‘নির্দেশে’ তারা মার্কিন জাহাজের উপর হামলা করতেই পারে। অর্থাৎ, ওই রুটও তখন বিপন্মুক্ত থাকবে না। তার জেরে সাপ্লাই লাইন ধাক্কা খাওয়ার পাশাপাশি তেলের দাম দ্রুতহারে বাড়বে। আর সেই বোঝা বহন করতে হবে আম আদমিকে। হরমুজ বন্ধ হওয়ার পরও দিন দশেক ভাবতে হবে না ভারতকে। সেই স্টক নয়াদিল্লি করে ফেলেছে। কিন্তু তারপর? অর্থাৎ, সঙ্কট বাড়ছে। বিশ্বজুড়ে। তেলের সঙ্কট। আর্থিক সঙ্কট।

রাশিফল